টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ
ছোট ভাই হার্দিক পান্ডিয়ার অর্জনে দারুণ উচ্ছ্বসিত ক্রুনাল পান্ডিয়া।
Published : 05 Jul 2024, 11:03 PM
মাস তিনেক আগেও যে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে দুয়োর শিকার হয়েছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া, সেখানেই এবার তার জন্য গলা ফাটালেন হাজার হাজার মানুষ। কত দ্রুতই বদলে গেল সব! টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের গৌরব এখন তার সঙ্গী। এক দশকের বেশি সময় পর ভারতের আরেকটি আইসিসি টুর্নামেন্ট জয়ের নায়কদের একজন তিনি। ছোট ভাইয়ের এই অর্জনে দারুণ উচ্ছ্বসিত ক্রুনাল পান্ডিয়া। একই সঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দিলেন, গত কয়েকটা মাস কতটা কঠিন ছিল তার ভাইয়ের জন্য।
গত আইপিএলে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ধারাবাহিকভাবে দর্শকদের ঠাট্টা-বিদ্রুপের শিকার হয়েছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া। গুজরাট টাইটান্স ছেড়ে নাটকীয় এক পালাবদলে পুরোনো দল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সে ফেরেন তিনি। পরে গত ডিসেম্বরে যখন আইপিএলের সফলতম অধিনায়ক রোহিত শার্মাকে সরিয়ে মুম্বাইয়ের অধিনায়ক করা হয় পান্ডিয়াকে, ভারতীয় ক্রিকেটে ঝড় উঠে যায়।
মুম্বাইয়ের সমর্থকদের বড় একটা অংশ বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি। কাঠগড়ায় তোলা হয় পান্ডিয়াকে। রীতিমতো যেন খলনায়ক হয়ে ওঠেন এই অলরাউন্ডার। সংবাদমাধ্যম, বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে আমজনতা, সবাই পান্ডিয়াকে ধুয়ে দিতে থাকেন দিনের পর দিন। নেতৃত্ব ঘিরে রোহিতের সঙ্গে তার ‘চরম দ্বন্দ্বের’ খবরও ছড়িয়ে পড়ে। প্রবল চাপে তার ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সও হারিয়ে যায়। আসর শেষ করেন তিনি ব্যাট হাতে ২১৬ রান ও বল হাতে ১১ উইকেট নিয়ে। ১০ দলের মধ্যে সবার নিচে থেকে আসর শেষ করে মুম্বাই।
সেই পান্ডিয়া এখন গোটা দেশের মধ্যমণি! বিশ্বকাপ ফাইনালের মোড় ঘুড়িয়ে দেওয়ার নায়ক তিনি। হাইনরিখ ক্লসেনকে ফিরিয়ে তিনিই ভারতকে ফেরান ম্যাচে। শেষ ওভারে ডেভিড মিলারকে বিদায় করে দূর করে দেন শেষ বাধা। আইপিএলের সময় সামাজিক মাধ্যমে তুমুল ট্রল ও গালিগালাজের শিকার হওয়া ক্রিকেটার এখন ভাসছেন প্রশংসার জোয়ারে। বৃহস্পতিবার ভারতীয় দল দেশে ফেরার পর ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে সংবর্ধনা দেওয়া হয় তাদের। সেখানে রোহিত, ভিরাট কোহলিদের মতো পান্ডিয়াকে নিয়েও গলা ফাটান সমর্থকরা।
ভারতের হয়ে ৫টি ওয়ানডে ও ১৯টি টি-টোয়েন্টি খেলা ক্রুনাল শুক্রবার ইনস্টাগ্রাম পোস্টে ভাইকে নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশের পাশাপাশি তুলে ধরলেন কঠিন সময়ের কথা।
“হার্দিক ও আমার পেশাদার ক্রিকেট খেলা শুরুর প্রায় এক দশক হয়ে গেছে। গত কয়েকটা দিন ছিল রূপকথার মতো, যার স্বপ্ন আমরা দেখেছি। প্রত্যেক দেশবাসীর মতো আমিও আমাদের দলের বীরত্বের মধ্য দিয়ে সময় কাটিয়েছি। গত ছয় মাস ছিল হার্দিকের জন্য সবচেয়ে কঠিন। যেসবের মধ্য গিয়ে সে গিয়েছে, তা প্রাপ্য ছিল না তার। ভাই হিসেবে তার জন্য আমার খুব খারাপ লেগেছে। দুয়ো দেওয়া থেকে শুরু করে মানুষের সব ধরনের বাজে কথা বলা, দিন শেষে আমরা সবাই ভুলে গিয়েছিলাম যে, সেও একজন মানুষ, তারও আবেগ আছে। সে হাসিমুখে এই সবকিছুর মধ্য দিয়ে গেছে, যদিও আমি জানি তার পক্ষে তখন হাসি ধরে রাখা কতটা কঠিন ছিল।”
“ভারতের দীর্ঘ দিনের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য সে তার হৃদয় দিয়ে খেলেছে। ৬ বছর বয়স থেকেই দেশের হয়ে খেলা এবং বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন দেখেছে সে। আমি স্রেফ লোকদের মনে করিয়ে দিতে চাই যে, হার্দিক তার ক্যারিয়ারে এত অল্প সময়ের মধ্যে যা করেছে, তা অবিশ্বাস্য। জাতীয় দলের হয়ে তার প্রচেষ্টার কখনও কমতি ছিল না। প্রতিবার, হার্দিকের জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে, লোকেরা তার শেষ দেখে ফেলেছে এবং এটিই তাকে আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসতে অনুপ্রাণিত করেছে। বারোদা থেকে আসা অল্প বয়সী একটি ছেলের জন্য তার দলকে বিশ্বকাপ জিততে সাহায্য করার চেয়ে বড় অর্জন আর কিছু হতে পারে না।”
বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে ৬ ইনিংসে ১৫১.৫৭ স্ট্রাইক রেটে পান্ডিয়া করেন ১৪৪ রান। হাত ঘুরিয়ে উইকেট নেন ১১টি।