ভারতের সর্বোচ্চ এই বেসামরিক খেতাব পাওয়া একমাত্র ক্রীড়াবিদ এখনও পর্যন্ত শুধু সাচিন টেন্ডুলকার।
Published : 07 Jul 2024, 03:37 PM
ক্রিকেটার, অধিনায়ক ও জাতীয় ক্রিকেট একাডেমির কোচ হিসেবে ভারতীয় ক্রিকেটে গভীর ছাপ রেখেছেন রাহুল দ্রাবিড়। এবার কোচ হিসেবেও দেশকে তিনি এনে দিলেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ভারতীয় ক্রিকেটে দ্রাবিড়ের এই গভীর আবেদন ও সামগ্রিক অবদানের জন্য তাকে ‘ভারত রত্ন’ খেতাবে ভূষিত করার দাবি জানিয়ে রাখলেন আরেক কিংবদন্তি ক্রিকেটার সুনিল গাভাস্কার।
ভারতীয় ক্রিকেটে সবসময় ‘আনসাং হিরো’ কিংবা আড়ালের নায়ক হিসেবেই পরিচিত ছিলেন দ্রাবিড়। সমসাময়িক অন্য বড় তারকাদের তুলনায় পাদপ্রদীপের আলো তাকে স্পর্শ করেছে কমই। তবে কোচ হিসেবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পর এবার রোহিত শার্মা, ভিরাট কোহলিদের পাশাপাশি তিনিও আলোচনার তুঙ্গে। তার প্রতি সম্মান, ভালোবাসা ও স্তুতির জোয়ার বইছে ভারতীয় ক্রিকেটে।
সেই স্রোতে শামিল হলেন গাভাস্কারও। মিড ডে পত্রিকায় লেখা কলামে সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক তুলে ধরলেন, কেন দ্রাবিড়ের ‘ভারত রত্ন’ পুরস্কার প্রাপ্য।
“খুবই উপযুক্ত হবে, যদি ভারতীয় সরকার তাকে ‘ভারত রত্ন’ খেতাবে ভূষিত করে। সে সত্যিকার অর্থেই এমন একজন। ক্রিকেটার হিসেবে সে ছিল গ্রেট, অধিনায়ক হিসেবেও। তার নেতৃত্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজে বিখ্যাত সিরিজ জয় এসেছে, যখন সেখানে জেতাটা ছিল বিশাল ব্যাপার। ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজ জিততে পারা মাত্র তিন ভারতীয় অধিনায়কের একজন সে।”
“জাতীয় ক্রিকেট একাডেমির চেয়ারম্যানের ভূমিকা পালনের সময় প্রতিভা পরিচর্যায় সে ছিল অসাধারণ। পরে তো জাতীয় দলের কোচ হিসেবেও দারুণ করল।”
ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক খেতাব এই ‘ভারত রত্ন।’ ১৯৫৪ সাল থেকে শুরু হওয়া এই পুরস্কারে একসময় ক্রীড়াবিদদের বিবেচনা করা হতো না। এটা নিয়ে অনেক বিতর্কও ছিল। ভারতের ইতিহাসের অনেক কিংবদন্তি ক্রীড়াবিদ তাই এই সম্মান পাননি। তবে ২০১১ সালে বিবেচনার মানদণ্ড বাড়িয়ে এখানে যোগ করা হয় ‘মানুষের জন্য যে কোনো প্রচেষ্টা।’ এর মধ্যে খেলাধুলাও অন্তর্ভুক্ত।
নানা সময়ে হকির কিংবদন্তি ধ্যান চাঁদ, দাবার সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বিশ্বনাথান আনন্দ, অলিম্পিকে সোনাজয়ী শুটার আভিনাব বিন্দ্রাসহ বেশ কজন ক্রীড়াবিদের নামা তুমুল আলোচনায় থাকলেও তারা পাননি। শেষ পর্যন্ত ২০১৩ সালের নভেম্বরে জানানো হয়, প্রথম ক্রীড়াবিদ হিসেবে এই খেতাব পাচ্ছেন টেন্ডুলকার। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে তিনি পুরস্কার গ্রহণ করেন। ৪০ বছর বয়সে জিতে এই খেতাব পাওয়া সর্বকনিষ্ঠ কীর্তিমানও তিনিই।
টেন্ডুলকারের পর এখন দ্রাবিড়কেও এটির জন্য পুরোপুরি উপযুক্ত মনে করছেন গাভাস্কার।
“দ্রাবিড়ের অর্জন আনন্দের উপলক্ষ এনে দিয়েছে দলমত নির্বিশেষে সকল ধর্ম, বর্ণ, জাতি, সমাজের সবাইকে, তথা গোটা দেশকেই। দেশের সর্বোচ্চ খেতাব তো এমন একজনেরই প্রাপ্য! আসুন, আমার সঙ্গে সবাই ভারতীয় সরকারকে অনুরোধ করি যেন ভারতের সেরা সন্তানদের একজনকে প্রাপ্য স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ‘ভারত রত্ন রাহুল শারাদ দ্রাবিড়’… দারুণ শোনাচ্ছে, তাই না?”
তিন সংস্করণ মিলিয়ে ভারতের হয়ে ৫০০ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা চার ক্রিকেটারের একজন দ্রাবিড়। ৪৮ সেঞ্চুরি ও ১৪৫ ফিফটিতে তিনি রান করেছেন ২৪ হাজার ৬৪, ভারতের হয়ে যা তৃতীয় সর্বোচ্চ। দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি ১০৪ ম্যাচে।
খেলা ছাড়ার পর জাতীয় ক্রিকেট একাডেমির প্রধান থাকার সময় ভারতের বয়সভিত্তিক ক্রিকেট কাঠামোয় তিনি বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছেন। তার কোচিংয়ে যুব বিশ্বকাপ জিতেছে ভারত। প্রতিভা পরিচর্যা করে জাতীয় দলের রসদ বাড়াতেও তার ভূমিকা ছিল দারুণ। জাতীয় দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর তার কোচিংয়ে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলেছে ভারত, গত বছর ফাইনালে খেলেছে ওয়ানডে বিশ্বকাপেও।
দেশের মাঠে ওই বিশ্বকাপ দিয়েই কোচ হিসেবে তার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। পরে ভারতীয় বোর্ডের অনুরোধে, বিশেষ করে অধিনায়ক রোহিতের আর্জিতে এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ান তিনি। কোচ হিসেবে সেরা সাফল্যের স্বাদ পেয়ে যান এই বিশ্বকাপেই।