তৃষ্ণার কীর্তির প্রভাব পড়ল না ম্যাচে, দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বড় জয়ে সিরিজ জয় নিশ্চিত করল অস্ট্রেলিয়া।
Published : 02 Apr 2024, 03:37 PM
নিয়মিত ওপেনার অধিনায়ক অ্যালিসা হিলি ব্যাটিংয়েই নামলেন না। আরেক ওপেনার বেথ মুনিকে ৯ নম্বরে ব্যাটিংয়ে পাঠানো হলো শেষ ওভারে। আট বছর পর ওপেনিংয়ে তুলে আনা হহলো গ্রেস হ্যারিসকে। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে কোনো সংস্করণেই আগে কখনও সাত নম্বরের ওপরে ব্যাটিং না করা জর্জিয়া ওয়্যারহ্যাম সুযোগ পেলেন তিনে। ব্যাটিং অর্ডারে এমন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েও দারুণ সফল অস্ট্রেলিয়া। ফারিহা তৃষ্ণা হ্যাটট্রিক করলেও বাংলাদেশ পারল না লড়াই জমাতে।
দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে ৫৮ রানে হারিয়ে সিরিজ জয় নিশ্চিত করল অস্ট্রেলিয়া। প্রথম ম্যাচে তারা জিতেছিল ১০ উইকেটে।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার ২০ ওভারে অস্ট্রেলিয়া তোলে ৮ উইকেটে ১৬১ রান।
ক্যারিয়ারে প্রথমবার তিনে খেলতে নেমে ৩০ বলে ৫৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংস উপহার দেন ওয়্যারহ্যাম। তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি এটি। ২০১৬ সালের পর প্রথমবার ওপেন করতে নেমে হ্যারিস করেন ৩৪ বলে ৪৭।
ইনিংসের শেষ তিন বলে উইকেট নিয়ে হ্যাটট্রিক করেন ফারিহা তৃষ্ণা। ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ১৯ রানে ৪ উইকেট নেন ২১ বছর বয়সী এই বাঁহাতি পেসার।
২০২২ এশিয়া কাপেও তৃষ্ণা হ্যাটট্রিক করেছিলেন মালেয়েশিয়ার বিপক্ষে। মেয়েদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একাধিক হ্যাটট্রিক করা তৃতীয় বোলার তিনি।
রান তাড়ায় শুরুটা আশা জাগানিয়া হলেও পরে যথারীতি পথ হারায় বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত ধুঁকতে ধুঁকতে ১০৩ রানে থামে ইনিংস।
টস জিতে অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক অ্যালিসা হিলি বলেন, ১৮০ রানের মতো করার লক্ষ্য তাদের। ব্যাটিং উইকেটে যদিও তাদেরকে শুরুতে একটু দমিয়ে দেন তৃষ্ণা।
তৃষ্ণা নিজের ছাপ রাখেন ম্যাচের তৃতীয় ওভারে। ফিবি লিচফিল্ডকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দেন তিনি। দুই ওভার শেষে তার বোলিং বিশ্লেষণ ছিল ২-১-৩-১।
তবে আরেক প্রান্ত থেকে রান আসতে থাকে। মারুফা আক্তারের প্রথম ওভারে তিনটি বাউন্ডারি মারেন হ্যারিস। পরে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে তাকে ছাড়িয়ে যান তিনে নামা ওয়্যারহ্যাম। তৃষ্ণার তৃতীয় ওভারে দুটি বাউন্ডারিতে ডানা মেলে দেন তিনি। এরপর একের পর এক বাউন্ডারিতে ছুটতে থাকেন সামনে।
অষ্টম ওভারে স্বর্ণা আক্তারের লেগ স্পিনে প্রথম বলে স্লগ সুইপে ছক্কায় ওড়ান হ্যারিস। পরে তিনটি বাউন্ডারি মারেন ওয়্যারহ্যাম। ওভার থেকে আসে ২০ রান।
দুই জনের ঝড়ে ১০ ওভারে ৯৪ তুলে ফেলে অস্ট্রেলিয়া।
ওয়্যারহ্যাম ফিফটি স্পর্শ করেন ২৬ বলে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার আগের সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল ৩৭ রানের।
৫৪ বলে ৯১ রানের জুটি ভাঙে ওয়্যারহ্যামের বিদায়েই। পরের ওভারে অ্যাশলি গার্ডনার ও হ্যারিসকে বিদায় করেন ফাহিমা খাতুন।
অস্ট্রেলিয়ার রানের গতি এতে কমে আসে একটু। এলিস পেরি নেমে অবশ্য আবার খানিকটা দম দেন রানের গতিতে। তবে অন্য প্রান্তে সেভাবে রান আসেনি। তাহলিয়া ম্যাকগ্রা ১৯ রান করেন ১৯ বল খেলে।
শেষ ওভারে তৃষ্ণাকে দারুণ কাভার ড্রাইভে চার মেরে শুরু করেন পেরি। কিন্তু ওভারের চতুর্থ বলে বড় শটের চেষ্টায় তিনি আউট হন ২২ বলে ২৯ করে। পরের দুই বলে আরও দুটি শিকার ধরে হ্যাটট্রিক আনন্দে মেতে ওঠেন তৃষ্ণা। কাট করে বৃত্তের ভেতরই ক্যাচ দেন সোফি মলিনিউজ। হ্যাটট্রিক ডেলিভারিতে শাফল করে খেলার চেষ্টায় পায়ের পেছন দিয়ে বোল্ড হয়ে যান বাঁহাতি বেশ মুনি।
মেয়েদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একাধিক হ্যাটট্রিক করেছেন আর কেবল হংকংয়ের ক্যারি চ্যান ও উগান্ডার কন্সি এউকো। তৃষ্ণার মতো তারাও দুটি করে হ্যাটট্রিক করেছেন ২০ ওভারের সংস্করণেই।
তৃষ্ণার হ্যাটট্রিকের মোমেন্টামকে সঙ্গী করে ব্যাটিংয়ের শুরুটাও দারুণ করে বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ার সেরা পেসার মেগান শুটের প্রথম ওভারেই তিনটি বাউন্ডারি মেরে দেন দিলারা আক্তার। প্রথমটি নান্দনিক অফ ড্রাইভে, পরেরটি মিড অফের ওপর দিয়ে তুলে মেরে এবং শেষটি চমৎকার স্কয়ার ড্রাইভে।
প্রথম তিন ওভারেই ২৭ রান তুলে ফেলে বাংলাদেশ। তাতে দিলারার অবদানই ছিল পাঁচ বাউন্ডারিতে ২২।
তবে অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের লাগাম নেয় দ্রুতই। মুর্শিদা খাতুনক ৮ রানে ফেরান শুট। তিনে নামা সোবহানা মোস্তারি টানা ব্যর্থতার ধারায় এবার ফেরেন ৫ রানে। আগের ম্যাচে ফিফটি করা অধিনায়ক নিগার সুলতানা তুলে মারতে গিয়ে মিড অনে সহজ ক্যাচ দেন ১০ বলে ১ রান করে।
পরের ওভারে ওয়্যারহ্যামকে পুল করার চেষ্টায় যখন বোল্ড হয়ে যান দিলারা (২৭), বাংলাদেশের ভালো কিছুর আশাও মিলিয়ে যায়।
এরপর স্বর্ণা আক্তার ও ফাহিমা খাতুন কিছুটা লড়াই করে ৩০ রানের জুটি গড়েন। তবে তারা দুজনও পারেননি লম্বা সময় টিকতে। একটি করে চার ও ছক্কায় ১৭ বলে ২১ করেন স্বর্ণা, ফাহিমা আউট হন ১৮ রানে।
অফ স্পিনার অ্যাশলি গার্ডনার ও বাঁহাতি স্পিনার সোফি মলিনিউ দারুণ বোলিংয়ে চেপে ধরেন ব্যাটারদের। উইকেট পড়তে থাকে নিয়মিত। ইনিংসের শেষ বলে রাবেয়া খানের ব্যাটের কানায় লেগে পাওয়া বাউন্ডারিতে বাংলাদেশের রান স্পর্শ করে একশ।
সিরিজের শেষ ম্যাচ বৃহস্পতিবার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া: ২০ ওভারে ১৬১/৮ (হ্যারিস ৪৭, লিচফিল্ড ২, ওয়্যারহ্যাম ৫৭, গার্ডনার ৫, ম্যাকগ্রা ১৯, পেরি ২৯, সাদারল্যান্ড ২, মলিনিউ ০, মুনি ০; তৃষ্ণা ৪-১-১৯-২, মারুফা ২-০-২৫-০, নাহিদা ৪-০-২১-২, রাবেয়া ৩-০-২৩-০, স্বর্ণা ১-০-২০-০, ফাহিমা ৪-০-৩৪-২, শরিফা ২-০-১৯-০)
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১০৩/৯ (দিলারা ২৭, মুর্শিদা ৮, সোবহানা ৫, নিগার ১, ফাহিমা ১৫, স্বর্ণা ২১, শরিফা ৩, রাবেয়া ১৪*, নাহিদা ১, মারুফা ৪, তৃষ্ণা ১*; শুট ৩-০-৩১-২, পেরি ২-০-১০-০, গার্ডনার ৪-০-১৭-৩, মলিনিউ ৪-০-১০-৩, ওয়্যারহ্যাম ৪-১-২৪-১, সাদারল্যান্ড ৩-০-১১-০)।
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৫৮ রানে জয়ী।
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে অস্ট্রেলিয়া ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে।
প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: জর্জিয়া ওয়্যারহ্যাম।