ভারত-নিউ জিল্যান্ড সিরিজ
বেঙ্গালুরু টেস্টের প্রথম ইনিংসে ভারতকে ৪৬ রানে অলআউট করে বড় লিডের পথে নিউ জিল্যান্ড।
Published : 17 Oct 2024, 07:14 PM
রাভিচান্দ্রান অশ্বিনের ফুল লেংথ ডেলিভারি রিভার্স সুইপের চেষ্টা করলেন ডেভন কনওয়ে। ব্যাটের নিচ দিয়ে বল আঘাত করল স্টাম্পে। হতাশায় কিছুক্ষণ ক্রিজেই দাঁড়িয়ে রইলেন বাঁহাতি ওপেনার। ভারতের বিপক্ষে টেস্টে চমৎকার একটি দিনে নিউ জিল্যান্ডের আক্ষেপ বলতে গেলে কেবল ওই মুহূর্তই। বাকি সময় দাপট দেখাল সফরকারীরা।
বেঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে বড় লিডের পথে নিউ জিল্যান্ড। আলোকস্বল্পতায় নির্ধারিত সময়ের আগে খেলা শেষ হওয়া পর্যন্ত ৫০ ওভারে তারা করেছে ৩ উইকেটে ১৮০ রান। এরই মধ্যে কিউইরা পেয়ে গেছে ১৩৪ রানের লিড।
এর কারিগর ম্যাট হেনরি, উইল ও'রোক। নিউ জিল্যান্ডের পেসারদের তোপে মাত্র ৪৬ রানে গুটিয়ে গেছে ভারত। ঘরের মাঠে এটিই তাদের সর্বনিম্ন স্কোর। সব মিলিয়ে তৃতীয় সর্বনিম্ন। পরে কনওয়ের ৯১ রানের সৌজন্যে ব্যাটিংয়েও দাপট অব্যাহত থাকে কিউইদের।
ম্যাচের প্রথম দিন ভেসে যায় বৃষ্টিতে। বৃহস্পতিবার খেলা শুরু হয় মেঘলা আকাশের নিচে। তাতে টস জিতে ব্যাটিং নিয়েই যেন নিজেদের বিপদ ডেকে আনেন রোহিত শার্মা। অবশ্য টম ল্যাথাম বলেন, টস জিতলে তিনিও আগে ব্যাটিং নিতেন।
মেঘলা আকাশের সঙ্গে উইকেটে বাউন্সও ছিল অসমান। সুবিধা কাজে লাগিয়ে প্রায় নিখুঁত বোলিং করেন হেনরি, ও'রোকরা। এর সঙ্গে যোগ হয় বুদ্ধিদীপ্ত ফিল্ড প্লেসিং ও দুর্দান্ত ক্যাচিং। যার ফল এশিয়ার মাঠে সর্বনিম্ন স্কোরে ভারতের গুটিয়ে যাওয়া।
মাত্র ১৫ রানে ৫ উইকেট নেন হেনরি, ২২ রান খরচায় ও'রোকের শিকার ৪টি। নিউ জিল্যান্ডের বোলারদের মধ্যে এর চেয়ে কম রানে ৫ বা তার বেশি উইকেট নেওয়ার রেকর্ড নেই কারও।
কুলদিপ ইয়াদাভকে ফিরিয়ে পঞ্চম উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি টেস্টে একশ উইকেট পূর্ণ হয় হেনরির। মাত্র ২৬ ম্যাচে এই মাইলফলক ছুঁয়ে কিউইদের মধ্যে যৌথভাবে দ্বিতীয় দ্রুততম তিনি। ২৫ ম্যাচে উইকেটের সেঞ্চুরির রেকর্ড স্যার রিচার্ড হ্যাডলির।
ভিরাট কোহলি, লোকেশ রাহুলসহ ভারতের প্রথম আট ব্যাটসম্যানের পাঁচজনই রানের খাতা খুলতে পারেননি। প্রথম আট ব্যাটসম্যানের মধ্যে পাঁচজনের খালি হাতে ফেরার মাত্র দ্বিতীয় ঘটনা এটি।
সপ্তম ওভারে ভারতের ধসের সূচনা করেন টিম সাউদি। অভিজ্ঞ পেসারের ভেতরে ঢোকা ডেলিভারির কোনো জবাব ছিল না ভারত অধিনায়কের।
এরপর হেনরি-ও'রোকের তাণ্ডবের শুরু। শুবমান গিল না থাকায় তিন নম্বরে নামেন কোহলি। ও'রোকের হালকা লাফিয়ে ওঠা ডেলিভারিতে ব্যাকওয়ার্ড শর্ট লেগে ধরা পড়েন তিনি। সামনে ঝাঁপিয়ে দারুণ ক্যাচ গ্লেন ফিলিপস।
গিলের জায়গায় সুযোগ পাওয়া সারফারাজ খানও রানের খাতা খুলতে ব্যর্থ হন। এরপর যা একটু প্রতিরোধ গড়েন ইয়াশাসভি জয়সওয়াল ও রিশাভ পান্ত। ৬৮ বলে দুজন মিলে যোগ করেন ২১ রান।
২১তম ওভারে জয়সওয়ালকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন ও'রোক। পরের ওভারে রাহুলকেও ফেরান ২৩ বছর বয়সী পেসার। এরপর জাদেজাকে ড্রেসিং রুমের পথ দেখান হেনরি।
৩৪ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যায় ভারত। দ্বিতীয় সেশনের প্রথম বলে আউট হন অশ্বিন। টিকতে পারেননি পান্তও। দলের সর্বোচ্চ ২০ রান করে হেনরির বলে দ্বিতীয় স্লিপে ধরা পড়েন উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান।
এরপর ও'রোকের বলে অসাধারণ এক ক্যাচে বুমরাহর বিদায় নিশ্চিত করেন হেনরি। আর হেনরির বলে চোখধাঁধাঁনো ক্যাচে কুলদিপকে ফিরিয়ে ভারতের ইনিংসেরও সমাপ্তি টানেন বদলি ফিল্ডার মাইকেল ব্রেসওয়েল।
নিউ জিল্যান্ড ব্যাটিংয়ের নামার সময়ও চলতে থাকে রোদ ও মেঘের লুকোচুরি। নতুন বলে ভালোভাবেই প্রথম ঘণ্টা কাটিয়ে দেন দুই ওপেনার কনওয়ে ও ল্যাথাম। তিন স্পিনারে একাদশ সাজানো ভারত অষ্টম ওভারে আক্রমণে আনে অশ্বিনকে।
প্রথম সুযোগটা অবশ্য আসে পেসারের বলে। দ্বাদশ ওভারে মোহাম্মদ সিরাজের বল ল্যাথামের ব্যাটের বাইরের কানা ছুঁয়ে যায় স্লিপে। কিন্তু প্রথম স্লিপে থাকা কোহলি ও দ্বিতীয় স্লিপে থাকা রাহুল একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকায় বেঁচে যান কিউই অধিনায়ক।
১৮তম ওভারে আর বাঁচতে পারেননি ল্যাথাম। কুলদিপের সোজা ডেলিভারি ভুল লাইনে খেলে এলবিডব্লিউ হন ৪৯ বলে ১৫ রান করা ওপেনার।
ল্যাথামের বিদায়ের আগের ওভারে অশ্বিনের বলে ছক্কা মেরে মাত্র ৫৪ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন কনওয়ে। দ্বিতীয় উইকেটে তিনি উইল ইয়ংয়ের সঙ্গে গড়েন ৭৫ রানের জুটি। পরপর দুই ওভারে দুটি রিভিউ থেকে বাঁচেন ইয়ং।
জাদেজার পরপর দুই ওভারে স্লিপে দাঁড়িয়ে ইয়ং ও কনওয়ের ক্যাচ ছাড়েন রোহিত। কনওয়ে ৭০ ও ইয়ং ৩২ রানে জীবন পান। দুজনই অবশ্য এরপর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি।
জাদেজার পরের ওভারে সুইপ করতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে শর্ট ফাইন লেগে ধরা পড়েন আর ১ রান যোগ করতে পারা ইয়ং।
আর সেঞ্চুরির কাছে গিয়ে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন ১০৫ বলে ১১ চার ও ৩ ছক্কার ইনিংস খেলা কনওয়ে। এ নিয়ে তিনবার নব্বই ছুঁয়েও সেঞ্চুরির আগে ফিরলেন অভিজ্ঞ বাঁহাতি ওপেনার।
এরপর আর বিপদ ঘটতে দেননি রাচিন রাভিন্দ্রা ও ড্যারেল মিচেল। ৬৫ বলে ২৬ রান যোগ করে বাকি সময় কাটিয়ে দেন তারা। রাভিন্দ্রা ২২ ও মিচেল ১৪ রানে শুক্রবার শুরু করবেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (দ্বিতীয় দিন শেষে)
ভারত ১ম ইনিংস: ৩১.২ ওভারে ৪৬ (জয়সওয়াল ১৩, রোহিত ২, কোহলি ০, সারাফারাজ ০, পান্ত ২০, রাহুল ০, জাদেজা ০, অশ্বিন ০, কুলদিপ ২, বুমরাহ ১, সিরাজ ৪*; সাউদি ৬-৪-৮-১, হেনরি ১৩.২-৩-১৫-৫, ও'রোক ১২-৬-২২-৪)
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৫০ ওভারে ১৮০/৩ (ল্যাথাম ১৫, কনওয়ে ৯১, ইয়ং ৩৩, রাভিন্দ্রা ২২, মিচেল ১৪*; বুমরাহ ১০-৪-২৩-০, সিরাজ ৭-১-২১-০, অশ্বিন ১১-১-৪৬-১, কুলদিপ ১২-১-৫৭-১, জাদেজা ১০-০-২৮-১)