৪৩৯ রান ও ৩২ ছক্কার টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ব্যবধান কমাল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
Published : 17 Nov 2024, 10:08 AM
‘ট্রেনারের সঙ্গে কথা বলতে হবে, বারবার কেন রান আউট হয়ে যাচ্ছি…”, ম্যাচ শেষে বললেন শেই হোপ। তার মুখে তখন হাসি, কারণ হাতে যে ম্যান অব দা ম্যাচের ট্রফি! ফিফটির পরপরই তিনি রান আউট হয়েছেন বটে, তবে এভিন লুইসের সঙ্গে মিলে উদ্বোধনী জুটিতে যা করেছেন, তাতেই রানের পাহাড় টপকানোর পথে অনেকটা এগিয়ে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আগেই সিরিজ হেরে যাওয়া দল কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে রেকর্ড-গড়া জয়ে।
সেন্ট লুসিয়ায় ৪৩৯ রানের আর ৩২ ছক্কার টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জিতে সিরিজে ব্যবধান একটু কমাতে পেরেছে ক্যারিবিয়ানরা। প্রথম তিন ম্যাচে জিতে সিরিজ জয় নিশ্চিত করা ইংল্যান্ড এবার হেরে গেছে ৫ উইকেটে।
বাংলাদেশ সময় রোববার ভোরে শেষ হওয়া ম্যাচে ইংল্যান্ড ২০ ওভারে তোলে ২১৮ রান। ক্যারিবিয়ানরা জিতে যায় এক ওভার বাকি রেখেই।
দেশের মাঠে এই প্রথম দুইশ রান তাড়ায় জিতল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দেশের বাইরে এর চেয়ে বেশি রান তাড়ায় জয়ের নজির তাদের আছে একটিই। ২০১৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ২৩১ রান তাড়ায় জিতেছিল তারা জোহানেসবার্গে।
এবার এই রান উৎসবের ম্যাচে দুই দলেই ফিফটি আছে কেবল দুটি করে। সেই দুই ইনিংসও খুব বড় হয়নি। তবে তাদের সঙ্গে অন্যদের কার্যকর ব্যাটিং মিলিয়েই রানের স্রোত বয়ে যায়। দুই দলের ইনিংসেই ছিল ১৬টি করে ছক্কা।
সেখানে পার্থক্য গড়ে দেন হোপ ও লুইস। ৩ চার ও ৭ ছক্কায় ৩১ বলে ৬৮ রান করেন লুইস, ৭ চার ও ৩ ছক্কায় ২৪ বলে ৫৪ হোপ।
দুজনের জুটিতে মাত্র ৯.১ ওভারেই আসে ১৩৬ রান!
শুরুটা যদিও ছিল একদম ধীরস্থির। অভিষিক্ত ইংলিশ পেসার জন টার্নার প্রথম ওভারে রান দেন পাঁচ, পরের ওভারটি মেডেন নেন দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সাকিব মাহমুদ।
তৃতীয় ওভার থেকে আচমকা শুরু হয় তাণ্ডব। টার্নারের বলে ছক্কা মেরে সিঙ্গল নেন লুইস, বাকি চার বলে তিন চার ও এক ছক্কা মারেন হোপ।
এই যে রানের প্লাবন ছুটল, আর বাঁধ দিতে পারেনি ইংল্যান্ড।
পাওয়ার প্লেতে আসে ৬৯ রান। পাওয়ার প্লে শেষেও একই চিত্র।
সপ্তম ওভারে লেগ স্পিনার রেহান আহমেদকে চার মেরে হোপ পঞ্চাশে পৌঁছে যান ২৩ বলে।
লুইস তখনও পর্যন্ত অনেকটাই নীরব। তার রান তখনও ১৯ বলে ২৩। পরের দুই ওভারে বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে তা পুষিয়ে দেন তিনি। লিয়াম লিভিংস্টোনের ওভারে চার ছক্কা ও এক চারে রান তোলেন ৩০। পরের ওভারে স্যাম কারানকে বিধ্বস্ত করেন দুই ছক্কা দুই চারে ওভারে ২৫ রান নিয়ে।
রেহানের বলে লুইসের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। পরের বলে রান আউট হয়ে যান শেই হোপ। আগের ম্যাচেও তিনি রান আউট হয়েছিলেন।
এর পরের বলেই রেহানের গুগলিতে আউট হয়ে যান নিকোলাস পুরান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে সবচেয়ে বেশি টি-টোয়েন্টি (১০২) খেলার রেকর্ড গড়ার দিনে আগ্রাসী এই ব্যাটসম্যান ফেরেন শূন্য রানে।
বিনা উইকেটে ১৩৬ থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তখন ৩ উইকেটে ১৩৬।
তবে ম্যাচে নাটকীয়তা ফেরেনি ততটা। ১০ ওভারে ১৩৮ রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইনিংসের মাঝমাঝি যা তাদের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।
চারে নেমে ২৩ বলে ৩৮ রানের ইনিংস খেলে দলকে জয়ের দিকে এগিয়ে নেন অধিনায়ক রভম্যান পাওয়েল। ১৭ বলে অপরাজিত ২৯ রান করে কাজ শেষ করেন শেরফেন রাদারফোর্ড। টানা দুই ছক্কায় তিনি ম্যাচ শেষ করে দেন ১৯তম ওভারেই।
ড্যারেন স্যামি স্টেডিয়ামে ম্যাচের প্রথম ভাগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা ইংল্যান্ডের শুরুটা ছিল ভালো। উদ্বোধনী জুটিতে ৫ ওভারে ৫৪ রান তোলেন ফিল সল্ট ও উইল জ্যাকস।
১২ বলে ২৫ করে বিদায় নেন জ্যাকস। এরপর সল্ট ও জস বাটলার মিলে দশম ওভারে একশ পার করান দলকে।
প্রথম ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান সল্ট এবার ফেরন ৩৫ বলে ৫৫ রান করে। গুডাকেশ মোটিকে রিভার্স সুইপ করে বাটলার আউট হন ২৩ বলে ৩৮ করে।
এরপর নিজের প্রতিভার ঝলক আরেকবার দেখিয়ে দেন জ্যাকব বেথেল। ম্যাচ জেতানো ফিফটিতে সিরিজ শুরু করা ২১ বছর বয়সী অলরাউন্ডার নিজেকে ছাড়িয়ে যান এবার ৫ ছক্কায় ৩২ বলে অপরাজিত ৬২ করে। ব্যাট হাতে দারুণ ফর্মে থাকা স্যাম কারান করেন ১৩ বলে ২৪।
ইংল্যান্ড পৌঁছে যায় ২১৮ রানে। ম্যাচ শেষে অধিনায়ক জস বাটলার বলেন, ২২০ রানের কাছাকাছি স্কোরই তাদের কাম্য ছিল।
কিন্তু ক্যারিবিয়ান ঝড় যেদিন ওঠে, সেদিন তো আসলে ভেঙে পড়ে প্রতিপক্ষের সব সৌধই!
সেন্ট লুসিয়ায় সিরিজের শেষ ম্যাচ রোববারই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড: ২০ ওভারে ২১৮/৫ (সল্ট ৫৫, জ্যাকস ২৫, বাটলার ৩৮, বেথেল ৬২*, লিভিংস্টোন ৪, কারান ২৪; ম্যাককয় ৪-০-৪০-০, জোসেফ ৪-০-৩৩-১, আকিল ৩-০-৪০-০, মোটি ৪-০-৪০-২, পাওয়েল ১-০-১১-০, চেইস ৪-০-৪৭-১)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ১৯ ওভারে ২২১/৫ (লুইস ৬৮, হোপ ৫৪, পুরান ০, পাওয়েল ৩৮, হেটমায়ার ৭, রাদারফোর্ড ২৯*, চেইস ৯*; টার্নার ৪-০-৪২-১, সাকিব ৪-১-২৪-০, কারান ৩-০-৪১-০, মুজলি ৩-০-৩৬-০, রেহান ৪-০-৪৩-৩, লিভিংস্টোন ১-০-৩০-০)
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: পাঁচ ম্যাচের সিরিজের চারটি শেষে ইংল্যান্ড ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে
ম্যান অব দা ম্যাচ: শেই হোপ