টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের আরেকটি নতুন শুরু

টি-টোয়েন্টিতে পায়ের নিচের জমিন শক্ত করার অভিযানে এবার অনেক পরিবর্তন এনে দল গড়া হয়েছে সাম্প্রতিক ফর্মকে প্রাধান্য দিয়ে।

শাহাদৎ আহমেদ সাহাদ, চট্টগ্রাম থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 March 2023, 11:43 AM
Updated : 7 March 2023, 11:43 AM

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচের আগের দিনের ঘটনা। চট্টগ্রামে ঐচ্ছিক অনুশীলনে ওয়ানডে দলের ক্রিকেটারদের চেয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটারদের ব্যস্ততাই ছিল বেশি। ব্যাটসম্যানদের শুধু চার-ছয়ের বার্তা দিতে দেখা গেল ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্সকে। বোলারদের জন্য নির্দেশনা ছিল তাদের আটকে রাখার। যেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে নামার আগে সব দিকে ইতিবাচক থেকে নিজেদের ঝালিয়ে নেওয়ার প্রয়াস। 

গত অক্টোবর-নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপের পর টি-টোয়েন্টি খেলেনি বাংলাদেশ। জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে এই সংস্করণে ফিরছে সাকিব আল হাসানের দল। 

বিশ্বকাপের সেই দল থেকে এই সিরিজের স্কোয়াডে আনা হয়েছে এক গাদা পরিবর্তন। প্রথমবারের মতো সুযোগ পেয়েছেন তৌহিদ হৃদয়, রেজাউর রহমান রাজা ও তানভির ইসলাম। দীর্ঘ ৮ বছর পর ফিরেছেন রনি তালুকদার। ফেরানো হয়েছে শামীম হোসেনকেও। তাদের সবারই দলে আসার মূল নিয়ামক ছিল এবারের বিপিএলের পারফরম্যান্স। 

ওয়ানডে সিরিজ চলার মাঝেই রোববার অনুশীলন শুরু করেন টি-টোয়েন্টি দলে থাকা এসব ক্রিকেটার। সেদিনের অনুশীলনে ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগেই আক্রমণাত্মক মানসিকতা ধরে রাখার নির্দেশনা দেন কোচিং স্টাফের সদস্যরা। সিডন্স বারবার শামীম-রনিকে মনে করিয়ে দেন, ‘প্রতি বলে চার-ছয়ের চেষ্টা করতে হবে। ব্লক করা যাবে না।’ 

লম্বা বিরতির পর সুযোগ পাওয়া রনি বিপিএলে ১২৯.১৭ স্ট্রাইক রেটে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪২৫ রান করেন। শামীমের ১৭৫ রান আসে ১৩৫.৬৫ স্ট্রাইক রেটে। আসন্ন সিরিজে সুযোগ পেলে তাদের কাছ থেকে যে থাকবে অভিন্ন চাওয়া, সেটির ছাপই দেখা যায় অনুশীলনে।  

বোলিংয়ে তানভির-নাসুম আহমেদকে ধারাবাহিকতা ধরে রেখে আক্রমণাত্মক বোলিংয়ের নির্দেশনা দেন স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ। রাজাকে কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করে বেশ কয়েকবার কিছু বলতে দেখা যায় পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ডকে। সবমিলিয়ে ওয়ানডে সিরিজ শেষ হওয়ার আগেই তাদের মধ্যে যে কাজ করছিল টি-টোয়েন্টিরও ভাবনা, তা ছিল স্পষ্ট। 

কারণটাও সহজে অনুমেয়। ওয়ানডের তুলনায় বিশ ওভারের সংস্করণে এখনও শক্ত ভিত খুঁজে নিতে পারেনি বাংলাদেশ। ২০২১ ও ২০২২ সালের বিশ্বকাপে বড় আশা নিয়ে গিয়েও ফিরতে হয়েছে এক রাশ ব্যর্থতা সঙ্গী করে।  

ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২০২১ বিশ্বকাপে প্রথম পর্বে স্কটল্যান্ডের কাছে হারার পর সুপার লিগের সব ম্যাচ হেরে যায় বাংলাদেশ। সবশেষ আসরে অস্ট্রেলিয়ায় তাদের জয় স্রেফ নেদারল্যান্ডস ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। হারতে হয় দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান ও ভারতের কাছে।

সাফল্যের খোঁজে গত দুই বছরে এই সংস্করণে মুনিম শাহরিয়ার, সাইফ হাসান, পারভেজ হোসেন ইমনের মতো তরুণ কিংবা মোহাম্মদ মিঠুন, সৌম্য সরকার, মোহাম্মদ নাইম শেখ, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, মোসাদ্দেক হোসেনদের মতো তুলনামূলক অভিজ্ঞদের দিয়েও চেষ্টা করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু ইতিবাচক ফল মেলেনি।  

দুই বিশ্বকাপের ব্যর্থতা ঝেড়ে নতুন শুরুর আশায় এবার বিপিএলের পারফরম্যান্সকে প্রাধান্য দিয়ে বেশ কয়েকজন নতুন ক্রিকেটার নিয়ে সাজানো হয়েছে দল। স্কোয়াডের ১৫ জনসহ সবমিলিয়ে ২২ থেকে ২৪ জন ক্রিকেটারকে নিয়ে এক বছরের পরিকল্পনা নিয়ে এগোনোর কথা বলেছেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন।  

নতুন শুরুর পরিকল্পনার কথা আগেও অনেকবার বলা হয়েছে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে। তবে দলের অ্যাপ্রোচ বা মানসিকতায় এর প্রতিফলন পড়েনি খুব একটা। বারবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একই ক্রিকেটারদের নেওয়া হতো দলে। 

এবার আরেকটি সিরিজ শুরুর আগে দল বাছাইয়ে বিপিএলের ফর্মকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পাশাপাশি প্রথম দিনের অনুশীলনেও মিলেছে ইতিবাচক ক্রিকেটের আভাস। দল ঘোষণার পর প্রধান নির্বাচকও জানান, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটারদের কাছ থেকে সাম্প্রতিক ফর্মের ছাপ আন্তর্জাতিক মঞ্চেও দেখতে চান তিনি।

“আমরা সাম্প্রতিক ফর্মকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। বিপিএলে অনেকগুলো ম্যাচ খেলেছে ওরা। সেই অভিজ্ঞতাটা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে... ইংল্যান্ড দুর্দান্ত দল। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে এসেছে টি-টোয়েন্টিতে। এসব মাথায় রেখে সাম্প্রতিক সময়ে ফর্মে থাকা ক্রিকেটারদের নিয়েই আমরা চ্যালেঞ্জটা নিচ্ছি।” 

চান্দিকা হাথুরুসিংহে কোচের দায়িত্বে আসার পর প্রথম টি-টোয়েন্টি সিরিজও এটি। তিনি দলকে কোন পথে দেখতে চান, তার কোচিংয়ে দলের খেলার ধরন কেমন হবে, সেটির ইঙ্গিতও মিলতে পারে এই সিরিজ থেকে। 

২০২১ বিশ্বকাপ থেকে টি-টোয়েন্টিতে ৩২ ম্যাচ খেলে স্রেফ ৮টি জিতেছে বাংলাদেশ। এই সংস্করণে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ খেলেছেন একটি ম্যাচ। আবু ধাবিতে ২০২১ বিশ্বকাপের ওই ম্যাচে ৮ উইকেটের অনায়াস জয় পায় ইংলিশরা। 

এবার জস বাটলারের দলের বিপক্ষে নিজেদের ঘরের মাঠে তিন ম্যাচের সিরিজ খেলবেন সাকিব, লিটন দাসরা। ওয়ানডে সিরিজ হারের পর বিশ ওভারের ক্রিকেটে চ্যালেঞ্জটা আরও বড়। সেই অভিযানে নতুন মানসিকতার ছাপ কতটা রাখতে পারে দল, কৌতূহল থাকবে সেদিকেই।