দুই বছর আগের দুঃসময়ের সময়টায় আর ফিরে যেতে চাননি এই ইংলিশ ওপেনার।
Published : 12 Apr 2024, 10:52 AM
বদলি হিসেবে সুযোগ পেয়ে বেশ ভালো অবদান রেখেছিলেন জেসন রয়। কলকাতা নাইট রাইডার্সও (কেকেআর) প্রতিদান দিয়েছিল পরের মৌসুমের জন্য ধরে রেখে। কিন্তু তিনি নিজেই কিনা সরে দাঁড়ালেন ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট থেকে! সিদ্ধান্তটি যে কতটা কঠিন ছিল, সেটিই তুলে ধরলেন রয়। ইংল্যান্ডের এই আগ্রাসী ওপেনার বললেন, অনেক চিন্তাভাবনার পরই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি নিজেকে, নিজের শরীর ও মানের চাওয়াকে।
গত বছর দুয়েক ধরেই বেশ অস্থির সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে রয়ের ক্যারিয়ার। সেখানেই সবশেষ সংযোজন এবারের আইপিএল থেকে তার সরে দাঁড়ানো।
গত আইপিএলেও তার খেলার কথা ছিল না। কোনো দলই তো আগ্রহী ছিল না তাকে নিয়ে। পরে চোট পাওয়া ক্রিকেটারের বদলি হিসেবে ২ কোটি ৮০ লাখ রুপিতে তাকে নেয় কলকাতা। দেড়শর বেশি স্ট্রাইক রেটে ২৮৫ রান করেন তিনি ওই আসরে। এরপর কলকাতা তাকে ধরে রাখে এবারের আসরের জন্য।
কিন্তু ব্যক্তিগত কারণে এবারের টুর্নামেন্ট থেকে সরে দাঁড়ান রয়। তার বদলি হিসেবে ইংল্যান্ডের আরেক আগ্রাসী ওপেনার ফিল সল্টকে বেছে নেয় কলকাতা।
গত দেড়-দুই বছরে বেশির ভাগ সময়ই হতাশায় কেটেছে রয়ের। ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইংল্যান্ড দলে জায়গা পাননি তিনি। পরের বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপের দলেও সুযোগ হয়নি। অথচ একসময় সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ইংল্যান্ড দল ভাবা যেত না তাকে ছাড়া।
এই বছর ইংল্যান্ডের ঘরোয়া আসর দা হান্ড্রেড-এর ড্রাফটেও তিনি দল পাননি। যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ ক্রিকেটে খেলার জন্য গত মে মাসে ইংল্যান্ডের চুক্তি থেকেও নিজেকে সরিয়ে নেন তিনি।
গত বছরের শেষ দিক থেকে এই বছরের শুরু পর্যন্ত ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটেই তার ব্যস্ততা ছিল। চেন্নাই ব্রেভসের হয়ে টি-টেন ক্রিকেটে খেলার পর এসএ টোয়েন্টিতে খেলেন তিনি ডারবান জায়ান্টসের হয়ে। এই আসর শেষে আইএল টি-টোয়েন্টিতে দুটি ম্যাচে খেলেন আবু ধাবি নাইট রাইডার্সের হয়ে। পরে পিএসএলে কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্সের হয়ে খেলেন ১০টি ম্যাচে।
এরপরই তিনি জানিয়ে দেন আইপিএলে না খেলার সিদ্ধান্তের কথা। ‘দা অ্যাথলেট’স ভয়েস’ পডকাস্ট-এ নিজের সিদ্ধান্তের পেছনের কারণ ব্যাখ্যা করলেন ৩৩ বছর বয়সী ওপেনার।
“এবারের আইপিএল না খেলা ছিল বিশাল বড় সিদ্ধান্ত। গত মৌসুমে মোটামুটি পারফর্ম করার পর আমার ওপর অনেক বিশ্বাস রেখে কেকেআর আমাকে ধরে রেখেছিল। আমার মনে হয়েছিল, আমার কাছে তাদের অনেক কিছু প্রাপ্য। এটা অনেক অনেক বড় সিদ্ধান্ত, তবে শেষ পর্যন্ত এটিই বেছে নিয়েছি। আমাদের প্রথম ম্যাচের সূচি যখন, তখনই ছিল আমার মেয়ের পঞ্চম জন্মদিন। আরও কিছু ব্যাপার ছিল। বছরের শুরুতে এত ম্যাচ খেলে বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম।”
“খুব বেশি ক্রিকেট খেলিনি এর আগের সময়টায়। গত দুই মাসের ধকলে তাই শরীর থেকে অনেক কিছু শুষে নিয়েছে। কেকেআরের সঙ্গে আমি খুবই সৎ ছিলাম এবং আমাদের সম্পর্ক দারুণ। এজন্যই আমার না খেলা এবং এসব নিয়ে আমরা একটি সমঝাতোয় আসতে পেরেছি। তারা পুরোপুরি বুঝতে পেরেছে এবং এজন্য তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তবে নিজেকেই সবকিছুর ওপরে রাখতে হয়েছে আমাকে, নিজের মন ও শরীর।”
এবারই প্রথম নয়, ২০২২ আইপিএল থেকেও নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন রয়। সেবার তার খেলার কথা ছিল গুজরাট টাইটান্সে। ওই বছরের মার্চে শৃঙ্খলাভঙ্গের একটি ঘটনায় তাকে জরিমানা করেছিল ইংল্যান্ডের বোর্ড, ঘটনাটি যদিও খোলাসা করা হয়নি। দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হয়েছিল তাকে।
সেবারের পরিস্থিতির চেয়ে এবারের প্রেক্ষাপট পুরোই আলাদা বলে দাবি করলেন রয়। তবে সেই ঘটনা থেকে পাওয়া শিক্ষা এবার কাজে লেগেছে তার।
“বছর দুয়েক আগে, মানসিক অবস্থার দিক থেকে খুব বাজে সময়ে ছিলাম। গুজরাটের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েও আইপিএল থেকে সরে দাঁড়াই মানসিক স্বাস্থ্য ও এসব কারণে… এবারের চেয়ে পুরো আলাদা কারণ ছিল সেটি। আমি খুবই বাজে অবস্থায় ছিলাম তখন, মানসিক অবস্থা ভয়ঙ্কর ছিল এবং সেটা নিজের কারণেই।”
“আমি একরকম নিজেকে বোঝাচ্ছিলাম যে ‘ঠিক আছি, ঠিক আছি’ এবং জোর করেই খেলা চালিয়ে যেতে থাকি, বাড়ি থেকে দূরে থাকি। এটা ছিল আসলে নিজের পায়ে গুলি করার মতো। সেই জায়গা থেকেই এবার নিজেকে বলেছি, নিজের মাথা ও মনের কথা শুনব আমি এবং সেখান থেকেই সমাধান বের করব।”
রয় বললেন, সিদ্ধান্তটি তিনি হুট করেই নেননি। বরং নিজের সঙ্গে অনেক বোঝাপড়া তাকে করতে হয়েছে।
“সিদ্ধান্ত দিনশেষে নিজেরই… আমার পরিবার এখনও কাঁচা, আমি যথেষ্ট বেড়ে উঠেছি এবং অনেক ভেবেচিন্তেই সিদ্ধান্তটি নিয়েছি। এমন নয় যে একদিন সকালে উঠে মনে হলো যে ভারতের ফ্লাইটে উঠতে ইচ্ছে করছে না… অনেক চিন্তা করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
“হ্যাঁ, সিদ্ধান্তের কথা বলাটা অনেক সহজ, সিদ্ধান্ত নেওয়া অনেক কঠিন। তবে আগের অভিজ্ঞতা থেকেই জানি, যে জোর করে কিছু করলে কী হয়।”