ডেভিড ওয়ার্নারের জায়গায় স্টিভেন স্মিথকেই ওপেনিংয়ে বেছে নিল অস্ট্রেলিয়া, চার নম্বরে খেলবেন ক্যামেরন গ্রিন।
Published : 10 Jan 2024, 09:44 AM
আগের দিনই একটি ‘পারফেক্ট’ দৃশ্যপটের ছবি এঁকেছিলেন মার্নাস লাবুশেন। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে ওপেনিংয়ের চলমান বিতর্ক নিয়ে এই ব্যাটসম্যান বলেছিলেন, স্টিভেন স্মিথকে ওপেনিংয়ে এনে ক্যামেরন গ্রিনকে চারে খেলানোই হতে পারে আদর্শ সমাধান। তার ভাবনার সঙ্গে মিলে গেল অস্ট্রেলিয়ান নির্বাচকদের সিদ্ধান্তও। অবসরে যাওয়া ডেভিড ওয়ার্নারের জায়গায় ওপেনিংয়ে স্মিথকেই বেছে নিল অস্ট্রেলিয়া।
টেস্ট ক্রিকেটে প্রায় ১৪ বছর কাটিয়ে ১০৫ ম্যাচ খেলার পর নতুন এক চ্যালেঞ্জ নিচ্ছেন স্মিথ। টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবার ওপেন করবেন ৩৪ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ দিয়েই শুরু হবে স্মিথ ও অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট দলের নতুন এই পথচলা। চারে ব্যাট করবেন গ্রিন। প্রথম টেস্টের জন্য ১৩ সদস্যের অস্ট্রেলিয়া দলে বাড়তি ব্যাটসম্যান হিসেবে নেওয়া হয়েছে ম্যাট রেনশকে।
ওয়ার্নার অবসরের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই গত বেশ কিছুদিন ধরে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের সবচেয়ে আলোচিত প্রসঙ্গ ছিল তার সম্ভাব্য বদলি নিয়ে। গত মৌসুম ও এই মৌসুমে শেফিল্ড শিল্ডের সর্বোচ্চ রান স্কোরার ক্যামেরন ব্যানক্রফট, ঘরোয়া ক্রিকেটের অন্য দুই অভিজ্ঞ ওপেনার মার্কাস হ্যারিস ও রেনশ তো লড়াইয়ে ছিলেনই, এমনকি মিডল অর্ডার থেকে গ্রিন, মিচেল মার্শ, লাবুশেনদের ওপেনিংয়ে তুলে আনা নিয়েও কথা হয়েছে অনেক। স্মিথ সেই আলোচনায় ছিলেন না।
হুট করেই কয়েক দিন আগে গুঞ্জন শোনা যায়, স্মিথ ওপেন করতে চান। পরে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিডনি টেস্ট চলার সময় স্মিথ নিজেই সংবাদমাধ্যমকে জানান, তিনি ওপেন করতে প্রবলভাবে আগ্রহী এবং ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে এসে নতুন চ্যালেঞ্জের তাড়না অনুভব করছেন।
ওই টেস্ট শেষে যদিও অধিনায়ক প্যাট কামিন্স সরাসরিই জানিয়ে দেন, স্মিথকে ওপেনিংয়ে তুলে এনে থিতু ব্যাটিং অর্ডার অস্থির করে তোলার কোনো ইচ্ছে তার নেই। তবে স্মিথের পক্ষে মতামতের জোর বাড়তেই থাকে। লাবুশেন, অ্যালেক্স কেয়ারির মতো সতীর্থদের ভোট পড়ে তার পক্ষে। সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক তো আরও বাড়িয়ে বলে দেন, স্মিথকে ওপেনিংয়ে তুলে আনা হলে এক বছরের মধ্যে বিশ্বের সেরা ওপেনার হয়ে উঠবেন এবং ব্রায়ান লারার ৪০০ রানের রেকর্ডও ভেঙে দিতে পারেন।
শেষ পর্যন্ত স্মিথের ওপর আস্থা রাখলেন নির্বাচকরাও। তিন নম্বর পজিশনে যার ব্যাটিং গড় ৬৭.০৭, চার নম্বর পজিশনে ৬১.৫০, পাঁচ নম্বরে ৫৭.১৮, তিন থেকে ছয়ে খেলেই যিনি ৩২টি সেঞ্চুরি করেছেন, আইসিসি টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে ছিলেন লম্বা সময় ধরে, এসব পজিশনে খেলেই এক সময় রেটিং পয়েন্টে যিনি নিজেকে তুলে নিয়েছিলেন সর্বকালে দ্বিতীয় সেরার উচ্চতায়, তিনিই এখন খেলবেন ওপেনিংয়ে।
ব্যানক্রফট ও হ্যারিসের টেস্ট দলে ফেরার আশা আপাতত শেষ হয়ে গেল এতে। রেনশ অবশ্য সান্ত্বনা পেতে পারেন যে, অন্তত স্কোয়াডে আছেন তিনি।
প্রথাগত ওপেনারের বদলে বিকল্প পথ বেছে নেওয়ার এই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিশ্চিতভাবে আলোচনা-সমালোচনা হবে অনেক। নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান জর্জ বেইলি ব্যাখ্যা করেছেন তাদের যুক্তি।
"স্টিভ (স্মিথ) অবশ্যই প্রবলভাবে তাড়না অনুভব করছে, খুবই উদ্যমী ও আগ্রহী এটা করতে। দলের ভেতর বেশ কজন প্রকাশ্যে বলেছে, তারা এটা করতে চান না। এটা তাই দারুণ একটা ব্যাপার যে স্টিভ নিজে থেকেই এগিয়ে এসেছে ও বলেছে, সে করতে চায়। এটা নিয়ে আমরা নির্বাচকরাও আড়ালে কথা বলছিলাম কোচদের সঙ্গে।"
"মিডল অর্ডারে এক বা একাধিক পজিশনে দারুণ সফল হওয়ার পরও ওপেন করতে চাওয়ার ইচ্ছা, সেই তাড়না ও ক্ষুধা থাকা এবং নতুন ও ভিন্ন কিছু করে দেখতে চাওয়াটা নিঃস্বার্থ একটা ব্যাপার। এটা ক্যামকে (গ্রিন) সুযোগ করে দিয়েছে এমন একটা পজিশনে জায়গা (চার নম্বর) করে দেওয়ার, যেখানে সে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খুবই সফল হয়েছে এবং আমাদের মনে হয়, টেস্ট দলে এটিই তার জন্য দারুণ জায়গা।"
বেইলি এটিও জানিয়ে দিয়েছেন, আপাত সমাধান হিসেবে নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি ভাবনা থেকেই স্মিথকে ওপেনিংয়ে আনা হচ্ছে। নতুন পজিশনে ব্যর্থ হলে আবার মিডল অর্ডারে খেলাতে স্মিথ অনুরোধ করবেন না বলেও নিশ্চিত করেছেন বেইলি।
পাশাপাশি বেইলি বলেছেন, ওপেনার নেওয়ার খাতিরে ওপেনার নেওয়ার চেয়ে তারা বেছে নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার 'সেরা ৬ টেস্ট ব্যাটসম্যান।' বিকল্প ব্যাটসম্যান হিসেবে স্কোয়াডে আসা রেনশ তাদের দৃষ্টিতে সেরা ৬ জনের পরই অস্ট্রেলিয়ার সেরা ব্যাটসম্যান।
আগামী বুধবার শুরু ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেইড টেস্ট।
অস্ট্রেলিয়া টেস্ট দল: প্যাট কামিন্স (অধিনায়ক), স্কট বোল্যান্ড, অ্যালেক্স কেয়ারি, ক্যামেরন গ্রিন, জশ হেইজেলউড, ট্রাভিস হেড, উসমান খাওয়াজা, মার্নাস লাবুশেন, ন্যাথান লায়ন, মিচেল মার্শ, ম্যাট রেনশ, স্টিভেন স্মিথ, মিচেল স্টার্ক।