ওয়ানডে সংস্করণে রানের জোয়ার বইয়ে দেওয়া এনামুলকে টেস্ট দলে নেওয়ার প্রেক্ষাপট তুলে ধরলেন বাংলাদেশের কোচ ফিল সিমন্স।
Published : 27 Apr 2025, 03:50 PM
চার দিন আগেও রঙিন পোশাক সাদা বলের ক্রিকেট ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ব্যস্ত সময় পার করেছেন এনামুল হক। গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের হয়ে করেছিলেন পরপর দুটি সেঞ্চুরি। হঠাৎই তার অবস্থান গেছে বদলে। মাত্র দুই দিনের অনুশীলনে তাকে হয়তো নেমে যেতে হবে সাদা পোশাক লাল বলের কঠিন চ্যালেঞ্জে। সব ঠিকঠাক থাকলে চট্টগ্রাম টেস্টে সাদমান ইসলামের সঙ্গে ইনিংস বাংলাদেশের ইনিংস শুরু করবেন এনামুল।
তবে আরেক সংস্করণে খেলতে থাকা ক্রিকেটারকে হুট করে ভিন্ন বলের সিরিজে বাছাই করা উপযুক্ত নয় বলেই মনে করেন ফিল সিমন্স। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের বাস্তবতাও মনে করিয়ে দিলেন প্রধান কোচ।
এমনিতে বাংলাদেশ ক্রিকেটে আদর্শগত ভাবনার চর্চা খুব একটা দেখা যায় না। জোড়াতালি দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ব্যাপারটিই এখানে থাকে বেশি। তবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই এখানে কিছুটা ব্যতিক্রম সিমন্স। নানা বিষয়ে অন্তত যথাযথ ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক এই অলরাউন্ডার।
চট্টগ্রাম টেস্ট শুরুর আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে তার কাছে জানতে চাওয়া হয় স্কোয়াডে এনামুলের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে। কোনোরকম কৌশলী উত্তর না দিয়ে পুরো বাস্তবতা তুলে ধরেন বাংলাদেশের প্রধান কোচ।
“না, এটি আদর্শ নয়। কিন্তু বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের টুর্নামেন্টগুলো এভাবে সাজানো।চার দিনের টুর্নামেন্ট বছরের শেষ দিকে খেলা হয়। এখন ডিপিএলের (ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ) সময়। এই বিষয়ে আমাদের কিছু করার ছিল না। আমাদের উদ্বোধনী জুটি তো বেশ কিছুদিন ধরেই সমস্যার কারণ।”
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে দুর্দান্ত ছন্দে থেকেই টেস্ট খেলতে জাতীয় দলে যোগ দিয়েছেন এনামুল। প্রথম দুই ম্যাচে শূন্য রানে আউট হওয়ার পরও প্রথম ১৪ রাউন্ড শেষে বাকি সবাইকে ছাড়িয়ে অভিজ্ঞ উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান। চারটি করে সেঞ্চুরি ও ফিফটিতে ৭৯.৪৫ গড়ে তার সংগ্রহ ৮৭৪ রান।
তবে শুধু সাদা বলের টুর্নামেন্টে ভালো করার কারণেই প্রায় তিন বছর পর টেস্ট দলে ডাক পেয়েছেন এনামুল, সেটি জোর দিয়ে বলার সুযোগ নেই। ঢাকা লিগের আগে বড় দৈর্ঘ্যের ত্রিকেটের আসর জাতীয় ক্রিকেট লিগেও ছন্দে ছিলেন খুলনার বিভাগের অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। ১৩ ইনিংসে ১ সেঞ্চুরির সঙ্গে ৬ ফিফটিতে ৭০০ রান করে আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ছিল তার।
ঘরোয়া ক্রিকেটের প্রায় সব প্রতিযোগিতায় রানের ফোয়ারা ছুটিয়ে নিজের জন্য জাতীয় দলের দুয়ার খুলে নিয়েছেন এনামুল। চট্টগ্রাম টেস্টে সুযোগ পেলে প্রায় তিন বছর পর নতুন জীবন পাবে তার সাদা পোশাকের ক্যারিয়ার। ২০২২ সালের জুনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সবশেষ টেস্ট খেলেছিলেন ৩২ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
২০১৩ সালে অভিষেক হওয়া টেস্ট ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত ৫টির বেশি ম্যাচ খেলতে পারেননি এনামুল। ২০১৪ সালে ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে হতাশ করার পর প্রায় ৮ বছরের জন্য থমকে যায় তার টেস্ট অধ্যায়। এরপর একই দলের বিপক্ষে একই মাঠে সুযোগ পেলেও, ফের বড় রান করতে ব্যর্থ হওয়ায় আবার বাদ পড়ে যান।
সব মিলিয়ে ৫ টেস্টের ক্যারিয়ারে বলার মতো কিছুই করতে পারেননি এনামুল। ১০ গড়ে তার সংগ্রহ মাত্র ১০০ রান। সর্বোচ্চ ইনিংস মাত্র ২৩ রানের।
৩২ বছর পূর্ণ হওয়ার পর প্রায় শেষ হয়ে যাওয়া টেস্ট ক্যারিয়ারে নতুন শুরুর পথ পেয়েছেন এনামুল। চট্টগ্রামের তুলনামূলক ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে তিনি ভালো করতে পারলে শুরুর সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে বাংলাদেশ। এনামুলও হয়তো পাবেন সাদা পোশাকে নতুন জীবন।