ওভারের মাঝপথেই বোলারকে থামিয়ে বল হাতে নিলেন আম্পায়ার মাসুদুর রহমান। লেগ আম্পায়ার মোর্শেদ আলি খানের সঙ্গে পরামর্শ করলেন আর ঘড়ি দেখলেন বারবার। বেশ দ্রুতই সিদ্ধান্ত নিয়ে তারা ইতি টেনে দিলেন দিনের খেলার। জশুয়া দা সিলভা তা মানতেই পারছিলেন না। ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক বারবার কিছু বলছিলেন আম্পায়ারদের। তার শরীরী ভাষায় আপত্তিটা বোঝা যাচ্ছিল স্পষ্ট। দুই ব্যাটসম্যান জাকির হাসান ও মাহমুদুল হাসান জয় ততক্ষণে হাঁটা দিয়েছেন ড্রেসিং রুমের দিকে। দুজন যেন হাঁফ ছেড়ে যেন বাঁচলেন।
শেষ দিনের চ্যালেঞ্জ এখনও অপেক্ষায়। ম্যাচ বাঁচানোর কঠিন লড়াই সামনে। তবে এই দিনটা তো অন্তত নিরাপদে পার করা গেল!
চতুর্থ ইনিংসে জয়ের জন্য লক্ষ্য ৪৬১। তবে সেদিকে তাকানোর কোনো বাস্তবতা নেই। বাংলাদেশ ‘এ’ দলের লক্ষ্য ম্যাচ বাঁচানো। সেই চেষ্টায় তৃতীয় দিনে কোনো বিপদ হতে দেননি জয় ও জাকির।
আনঅফিসিয়াল এই টেস্ট সিরিজ জয়ের পথে অবশ্য এখনও ফেভারিট ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দল। প্রথম ইনিংসে ৪৪৫ রান করা ক্যারিবিয়ানরা বাংলাদেশকে গুটিয়ে দেয় ২০৫ রানেই। ২৪০ রানের লিড নিয়েও ফলো অন না করিয়ে আবার ব্যাটিংয়ে নামে তারা। তেজনারাইন চন্দরপলের আরেকটি দুর্দান্ত ইনিংসে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে তারা ৫ উইকেটে ২২০ রানে।
ওপেন করতে নেমে চন্দরপল অপরাজিত থাকেন ৮৩ রানে। এই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে তিনি আউট হয়েছিলেন ৮৩ রানে। সিরিজের প্রথম ম্যাচেও তার ব্যাট থেকে এসেছিল ঠিক ৮৩ রানই।
এই সিরিজের বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের যা অবস্থা, তাতে নিরাপদে দিন পার করা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। জয় ও জাকির শেষ পর্যন্ত অক্ষত থেকে বৃহস্পতিবার দিনটি শেষ করতে পারেন ৪৭ রানের জুটিতে।
বাংলাদেশ দিন শুরু করে প্রথম ইনিংসে ৭ উইকেটে ১৫৭ রান নিয়ে। আগের দিন শেষ বিকেলে প্রতিরোধ গড়া তানজিম হাসান সাকিব বিদায় নেন প্রথম ওভারেই। কোনো রান যোগ না করেই তিনি বোল্ড হন ভিরাসামি পেরমলের টার্নে।
এরপর নাসুম আহমেদ ও শরিফুল ইসলামের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে দুইশ ছাড়ায় বাংলাদেশ। ৩৫ বলে ৪৮ রানের জুটি গড়েন দুজন। এই জুটি থামানোর পাশাপাশি টানা দুই বলে উইকেট নিয়ে ইনিংস শেষ করেন পেরমল। ক্রিজে ছেড়ে বেরিয়ে খেলার চেষ্টায় ব্যাটের কানায় লেগে স্লিপে ধরা পড়েন ৮ বলে ১৩ রান করা শরিফুল। পরের বলে ফিরতি ক্যাচ দেন মুশফিক হাসান। নাসুম অপরাজিত থাকেন ৭ চারে ৩৮ রান করে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ আবার ব্যাটিংয়ে নেমে এগিয়ে যায় চন্দরপলের ব্যাটের নির্ভরতায়। কার্ক ম্যাকেঞ্জির সঙ্গে তার উদ্বোধনী জুটি থামে ৩৬ রানে। ২০ রানে সাইফ হাসানের শিকার হন ম্যাকেঞ্জি, শর্ট মিড উইকেটে অনেকটা লাফিয়ে দারুণ ক্যাচ নেন জাকির হাসান।
তিনে নামা জাচারি ম্যাককেস্কি (২) অল্পতেই ফেরেন নাসুমের আর্ম ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ হয়ে। তবে চার ও পাঁচে নেমে দ্রুত রান তোলেন আলিক আথানেজ ও জশুয়া দা সিলভা।
ফর্মে থাকা আথানেজ ৩৩ বলে ২৭ রান করে আউট হন দুর্ভাগ্যজনকভাবে। সাইফের লেংথ বল পিচ করে স্রেফ গোড়ালি উচ্চতায় ছোবল উঠে দেল আথানেজের পায়ে। ব্যাটসম্যানের করার ছিল না কিছুই।
জশুয়া ক্রিজে যাওয়ার পর রানের গতি বাড়তে থাকে আরও। পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে খেলতে থাকেন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক। তানজিম হাসানের সাকিবের এক ওভারে দুটি বাউন্ডারি মারেন তিনি, ছক্কায় ওড়ান নাসুমকে।
তার আগ্রাসী ইনিংসটি শেষ হয় নাসুমের বলেই। অনেকটা প্রথম ইনিংসের মতোই ঝুলিয়ে দেওয়া বলকে ইয়র্ক বানিয়ে বোল্ড হয়ে যান ৪০ বলে ৪৭ রান করে। ১০০ গড়ে ৩০০ রান করে সবার ওপর থেকে সিরিজ শেষ করেন তিনি।
তেজনারাইন চন্দরপল আরেকপ্রান্তে খেলে যান তার মতো করেই। সাইফকে ছক্কা মেরে ফিফটি পূরণ করেন তিনি ১১৪ বলে। পঞ্চাশেরও পর দলকে এগিয়ে নিয়ে যান এক পাশ আগলে।
আরেক পাশে রেমন রিফারকে ফিরিয়ে তৃতীয় শিকার ধরেন সাইফ। কিপার-ব্যাটসম্যান টেভিন ইমলাখ নেমে ২৮ রান করেন ২১ বলে। ইনিংস ঘোষণার সময় চন্দরপল অপরাজিত থাকেন ১৬৫ বলে ৮৩ রান করে।
দিনের খেলার তখনও বাকি ছিল ২২ ওভার। তবে শেষ পর্যন্ত খেলা হয় ১৩.৫ ওভার। সাবধানী শুরুর পর রেমন রিফারের এক ওভারে তিনটি চার মারেন জয়। সতর্ক ব্যাটিংয়ে উইকেট আঁকড়ে রাখেন জাকির।
এ দিন উতরে গেলেও তাদের সামনে বড় পরীক্ষা শেষ দিনে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ ১ম ইনিংস: ৪৪৫
বাংলাদেশ ‘এ’ ১ম ইনিংস: ৫৪ ওভারে ২০৫ (আগের দিন ১৫৭/৭) (জয় ৯, জাকির ২৯, মুমিনুল ৫, সাইফ ৩২, ইয়াসির ৯, শাহাদাত ৩, নুরুল ২৮, তানজিম ১৭, নাসুম ৩৮*, শরিফুল ১৩, মুশফিক ০; জর্ডান ৮-২-২১-১, রিফার ৬-০-২৩-১, ফিলিপ ৯-২-৩৬-২, সিনক্লেয়ার ১৮-৩-৭৫-২, পেরমল ১৩-২-৩৮-৩)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ ২য় ইনিংস: ৭৩.২ ওভারে ২২০/৫ (ডি.) (চন্দরপল ৮৩*, ম্যাকেঞ্জি ২০, ম্যাককেস্কি ২, আথানেজ ২৭, জশুয়া ৮২, রিফার ৪৭, রিফার ৬, ইমলাখ ২৮*; মুশফিক ৭-৩-২৭-০, শরিফুল ৬-২-১৯-০, তানজিম ৮-০-৪৩-০, সাইফ ২০.২-২-৬২-৩, নাসুম ১৩-২-৫৬-২, মুমিনুল ১-০-৭-০)।
বাংলাদেশ ‘এ’ ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৪৬১) ১৩.৫ ওভারে ৪৭/০ (জয় ২৮*, জাকির ১৪*; জর্ডান ৫-১-১৪-০, রিফার ৪-২-১৩-০, সিনক্লেয়ার ২.৫-০-১১-০, ফিলিপ ২-০-৫-০)।