পাকিস্তান-ইংল্যান্ড সিরিজ
মুলতানের ব্যাটিং স্বর্গে দুই সেঞ্চুরি ও দুই ফিফটিতে পাঁচশ রানের দুয়ারে পৌঁছে গেছে ইংল্যান্ড।
Published : 09 Oct 2024, 07:08 PM
প্রথম দিন থেকেই উইকেটে প্রাণের ছোঁয়া মাত্র নেই, তৃতীয় দিনেও একদম নিষ্প্রাণ। বোলারদের জন্য নেই কোনো সহায়তা। ব্যাটিং স্বর্গে সেঞ্চুরি ছুঁয়ে ডাবলের পথে ছুটছেন জো রুট। দেড়শর কাছে পৌঁছে গেছেন হ্যারি ব্রুক। তাদের রেকর্ড জুটি, আরও দুটি সত্তর ছাড়ানো ইনিংসে পাঁচশ রানের দুয়ারে ইংল্যান্ড।
মুলতানে প্রথম টেস্টে পাকিস্তানের রান পাহাড়ের জবাব ভালোভাবেই দিচ্ছে ইংলিশরা। তৃতীয় দিন শেষে সফরকারীদের রান ৩ উইকেটে ৪৯২। এখনও ৬৪ রানে পিছিয়ে আছে তারা।
গোটা দিনে ৮১ ওভারে উইকেট পড়েছে স্রেফ ২টি, ইংল্যান্ড তুলেছে ৩৯৬ রান। পাকিস্তানের মাটিতে টেস্টে এক দিনে এর চেয়ে বেশি রানের নজির আছে দুটি। ২০২২ সালে রাওয়ালপিন্ডিতে ইংল্যান্ডই প্রথম দিন করেছিল ৫০৬, ২০০৯ সালে করাচিতে প্রথম দিন শ্রীলঙ্কা তুলেছিল ৪০৬ রান।
সারা দিন ব্যাটিং করে ১৭৬ রানে অপরাজিত আছেন রুট। তার ২৭৭ বলের ইনিংস গড়া ১২টি চারে।
প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে পাকিস্তানের মাটিতে টানা চার টেস্টে সেঞ্চুরির কীর্তি গড়ে ১৪১ রানে অপরাজিত ব্রুক। তার ১৭৩ বলের ইনিংসে ১২ চারের পাশে আছে একটি ছক্কা।
সেঞ্চুরির পথে স্যার অ্যালেস্টার কুককে ছাড়িয়ে ইংল্যান্ডের ১৪৭ বছরের টেস্ট ইতিহাসের সফলতম ব্যাটসম্যান হয়ে গেছেন রুট। কুক ১২ হাজার ৪৭২ রান করেন ২৯১ ইনিংসে। ২৬৮ ইনিংসে রুটের রান এখন ১২ হাজার ৫৭৮।
৩৫তম সেঞ্চুরিতে তিনি ছাড়িয়ে গেছেন ইউনিস খান, সুনিল গাভাস্কার, ব্রায়ান লারা ও মাহেলা জায়াওয়ার্দানাকে। টেস্টে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির তালিকায় রুটের ওপরে আছেন কেবল রাহুল দ্রাবিড় (৩৬), কুমার সাঙ্গাকারা (৩৮), রিকি পন্টিং (৪১), জ্যাক ক্যালিস (৪৫) ও সাচিন টেন্ডুলকার (৫১)।
২০১২ সালে অভিষেক থেকে ২০২০ পর্যন্ত ৯৭ টেস্টে রুটের সেঞ্চুরি ছিল ১৭টি। সেখানে ২০২১ থেকে পরের ৫০ টেস্টেই করে ফেললেন ১৮ সেঞ্চুরি।
অস্ট্রেলিয়া বাদে অন্তত চারটি করে টেস্ট খেলা প্রতিটি দেশেই সেঞ্চুরির স্বাদ পেলেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ায় ১৪ টেস্ট খেলে এখনও সেই স্বাদ পাননি।
রুটের অর্জনের শেষ নয় এখানেই। এই বছরে ১২ টেস্টে ৫টি সেঞ্চুরি হয়ে গেল তার। পাঁচ বা এর বেশি সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি আরও দুটি ভিন্ন পঞ্জিকাবর্ষে- ২০২১ সালে ৬টি, ২০২২ সালে ৫টি, দুবারই খেলেছিলেন ১৫টি করে টেস্ট।
পঞ্জিকাবর্ষে পাঁচ বা এর বেশি সেঞ্চুরি রুটের চেয়ে বেশিবার করতে পেরেছেন কেবল অস্ট্রেলিয়ার ম্যাথু হেইডেন ও পন্টিং, দুজনই ৪ বার করে। রুটের সমান তিন বার আছে স্টিভেন স্মিথ ও ক্যালিসের।
প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে এই বছরে টেস্টে হাজার রানের মাইলফলকও এদিন ছুঁয়েছেন তিনি।
রুট ও ব্রুকের অবিচ্ছিন্ন জুটির রান এখন ২৪৩। পাকিস্তানের মাটিতে যেকোনো উইকেটে ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ জুটি এটিই। ২০২২ সালে জ্যাক ক্রলি ও বেন ডাকেটের ২৩৩ রানের উদ্বোধনী জুটি ছিল আগের সর্বোচ্চ।
পাকিস্তানের বিপক্ষে চতুর্থ উইকেটে ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ জুটিও এটি। ২০০৬ সালে লর্ডসে কুক ও পল কলিংউডের ২৩৩ রানের জুটি ছিল আগের রেকর্ড।
এবার ডাকেট ৭৫ বলে ১১ চারে করেন ৮৪ রান, ৮৫ বলে ৭৮ ক্রলি।
মুলতান ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ১ উইকেটে ৯৬ রান নিয়ে বুধবার ব্যাটিং শুরু করে ইংল্যান্ড। আগের দিন ৬৪ রানে অপরাজিত থাকা ক্রলি বিদায় নেন আর ১২ রান যোগ করেই। শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে মিডউইকেটে দুবারের চেষ্টায় ক্যাচ নেন আমের জামাল।
চার নম্বরে উইকেটে গিয়ে শুরু থেকে ওয়ানডে ঘরানার ব্যাটিং করেন ডাকেট। ফিফটি করেন তিনি ৪৫ বলে। ৭৬ বলে পঞ্চাশে পা রাখেন রুট। ৬৭ থেকে জামালকে দারুণ এক অন-ড্রাইভে চার মেরে কুককে ছাড়িয়ে যান তিনি।
সকালের সেশনে ২৫ ওভারেই ১৩৬ রান তুলে ফেলে ইংল্যান্ড।
সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে ৮৪ রানে জামালের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান ডাকেট, ভাঙে ১৩৬ রানের জুটি।
ডাকেটের মতোই শুরু থেকে আগ্রাসী ব্যাটিং করেন ব্রুক। ৭ চারে ফিফটি করেন তিনি ৪৯ বলে। পরের ওভারেই ১৬৭ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন রুট।
দেশের বাইরে রুটের চতুর্দশ সেঞ্চুরি এটি। ইংল্যান্ডের হয়ে দেশের বাইরে তার চেয়ে বেশি টেস্ট সেঞ্চুরি আছে শুধু কুকের, ১৮টি।
তৃতীয় সেশনে ব্রুক সেঞ্চুরিতে পা রাখেন ১১৮ বলে। পাকিস্তানের মাটিতে ৬ ইনিংসে তার চতুর্থ সেঞ্চুরি এটি, আর ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ। এর মধ্যে পাঁচটিই দেশের বাইরে।
সফরকারী ব্যাটসম্যানদের মধ্যে পাকিস্তানে ব্রুকের চেয়ে বেশি সেঞ্চুরি নেই আর কারও। তার সমান ৪ সেঞ্চুরি আছে ভারতের মাহিন্দার আমারনাথ (১৮ ইনিংস) ও শ্রীলঙ্কার আরাভিন্দা ডি সিলভার (১৭ ইনিংস)।
দ্বিতীয় নতুন বলেও রুট ও ব্রুককে টলাতে পারেননি পাকিস্তানের বোলাররা। নির্বিঘ্নেই দিন পার করে দেন তারা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ৫৫৬
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ১০১ ওভারে ৪৯২/৩ (আগের দিন ৯৬/১) (ক্রলি ৭৮, রুট ১৭৬*, ডাকেট ৮৪, ব্রুক ১৪১*; আফ্রিদি ১৯-১-৮৮-১, নাসিম ২১-০-৮৭-১, আবরার ৩৫-০-১৭৪-০, জামাল ১৭-০-৭৮-১, সালমান ৬-০-৪০-০, সাইম ১-০-৫-০, শাকিল ২-০-১৪-০)