টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রাথমিক লক্ষ্য পূরণে দলের সাফল্য দেখলেও, আরও বড় অর্জনের সুযোগ ছিল মনে করেন সাকিব আল হাসান।
Published : 02 Jul 2024, 09:57 PM
সাত ম্যাচে জয় তিনটি। জয়ের হিসেবে নিজেদের সবচেয়ে সফল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কাটিয়েছে বাংলাদেশ। তবে সুযোগ ছিল আরও বড় অর্জনের। সুপার এইটের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সমীকরণ মেলাতে পারলে সেমি-ফাইনালে পৌঁছে যেত নাজমুল হোসেন শান্তর দল। সেটি করতে না পারায় আফসোসের শেষ নেই সাকিব আল হাসানের।
যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের প্রথম পর্বে শ্রীলঙ্কা, নেদারল্যান্ডস, নেপালকে হারিয়ে ২০০৭ সালের পর প্রথমবার সুপার এইটে নাম লেখায় বাংলাদেশ। এরপর সেরা আট দলের লড়াইয়ে আর জয়ের দেখা পায়নি তারা। অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের বিপক্ষে তো লড়াই করতেই পারেননি শান্ত, সাকিবরা।
তবু অন্যান্য ম্যাচের ফল পক্ষে আসায় সেমি-ফাইনালের দুয়ার খোলাই ছিল বাংলাদেশের সামনে। সেন্ট ভিনসেন্টে আফগানিস্তানকে মাত্র ১১৫ রানে আটকে রাখার পর ১২.১ ওভারে লক্ষ্য তাড়া করতে পারলেই নিজেদের ইতিহাসে প্রথম কোনো বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে খেলতে পারত বাংলাদেশ।
সেই লক্ষ্যপূরণে পাওয়ার প্লের ভেতরে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলায় আর চেষ্টাই করেনি শান্তর দল। শুধু জেতার পরিকল্পনা করেও তাতে সফল হয়নি তারা। শেষ পর্যন্ত বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচটি হেরে যায় ৭ রানে। ওই ম্যাচে প্রথম বলে নাভিন-উল-হাককে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে আউট হন সাকিব।
সুপার এইটে তিন ম্যাচের হারের পর দলের হতাশাজনক পারফরম্যান্সে সমর্থকদের মনে কষ্ট দেওয়ায় ক্ষমা চেয়েছিলেন অধিনায়ক শান্ত। পরে দেশে ফিরে সহ-অধিনায়ক তাসকিন নিজেদের ব্যর্থতা মেনে নিয়ে ইতিবাচক দিকগুলোও দেখার অনুরোধ করেছিলেন।
দলের এক দিন আগেই দেশে ফেরা সাকিব এবার উড়াল দিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ ক্রিকেট (এমএলসি) খেলতে। বিমানবন্দরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, আফগানিস্তানের বিপক্ষে ইতিহাস গড়ার সুযোগ হাতছাড়া হওয়াটা দলের জন্য ছিল বড় আফসোস।
“হ্যাঁ! আমি মনে করি, ওটা (ইতিহাস গড়ার সুযোগ হাতছাড়া) আমাদের জন্য একটা বড় আফসোস। এটা হতে পারলে আমাদের জন্য খুবই ভালো লাগত, খুবই বড় একটা অর্জন হতো। সেই জায়গা থেকে অবশ্যই আমাদের জন্য একটু হলেও দুঃখজনক।”
“হয়তো পুরোটা দিয়ে খেলতে পারিনি। যে ধরনের ফলাফল আমরা আশা করেছিলাম কিংবা হওয়ার সুযোগ ছিল সেভাবে পারিনি। আমাদের হয়তো প্রাথমিক লক্ষ্য পূরণ হয়েছে, সেদিক থেকে আমরা সফল। কিন্তু আমরা যে একটা অবস্থায় ছিলাম, যে জায়গায় যাওয়ার সুযোগ ছিল সেই জায়গাতে তো অবশ্যই আমরা যেতে পারিনি। সেটা আমাদের জন্য একটু হলেও হতাশাজনক।”
প্রায় ১৭ বছর পর সুপার এইট খেললেও পুরো টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের ব্যাটিং ছিল হতশ্রী। সাত ম্যাচ মিলিয়ে পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস দেখা গেছে মাত্র দুটি। তাওহিদ হৃদয় ছাড়া আর কেউ দেড়শ রানও করতে পারেননি। মূলত বোলারদের কাঁধে চড়েই প্রথম পর্বের বৈতরণী পার হয়েছিল বাংলাদেশ।
এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলিং সহায়ক উইকেটের দায় দেন সাকিব।
“(বিশ্বকাপের উইকেট) ব্যাটসম্যানদের জন্য কঠিন ছিল। আমি কারও নাম দেখিনি, যেখানে একজন ক্রিকেটার ধারাবাহিকভাবে প্রতিটা ম্যাচ ভালো খেলেছে। প্রতি বিশ্বকাপেই এক-দুজন কিংবা পাচ-দশজন থাকে যারা ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলে। এই বিশ্বকাপে আমি সেটা দেখিনি। হয়তো এক-দুই ম্যাচে ভালো খেলেছে। ওইভাবে দলগুলো জিতেছে।”
“বোলিং সবাই ভালো করেছে, প্রতিটা দলই ভালো করেছে। ব্যাটিংয়ে যে পারফর্ম করেছে সেই ম্যাচ জিতিয়ে নিয়েছে। যেহেতু বেশি বড় স্কোরের খেলা ছিল না, তাই একজন দুইজনের অবদানে ম্যাচটা জেতা সম্ভব ছিল। আমরাও যে কয়টা জিতেছি হয়তো একজন-দুইজনের অবদান ভালো ছিল। যেগুলো জিতিনি হয়তো বড় অবদান কারও ছিল না।”
সাকিবের কথার প্রমাণ অবশ্য বিশ্বকাপের সার্বিক পরিসংখ্যানেও মেলে। ২০০৯ সালের পর এবারই কোনো আসরে দেখা যায়নি ব্যক্তিগত সেঞ্চুরি। সর্বোচ্চ ৯৮ রান করেন নিকোলাস পুরান। এছাড়া পুরো আসরে ওভারপ্রতি রান ওঠে মাত্র ৭.০৯ করে। যা এক আসরে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০২১ সালে ৭.৪৩ ছিল টুর্নামেন্টের রান রেট।