ইংল্যান্ড-শ্রীলঙ্কা
সিরিজের তৃতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিনে ব্যাটে-বলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে শ্রীলঙ্কা।
Published : 07 Sep 2024, 11:53 PM
প্রথম দিনের সেঞ্চুরিকে দেড়শতে টেনে নিলেন অলিভার পোপ। দলের আর কেউ নিজেকে মেলে ধরতে পারলেন না ব্যাট হাতে। দারুণ বোলিংয়ে ইংল্যান্ডকে সোয়া তিনশ রানে আটকে দিল শ্রীলঙ্কা। পরে ব্যাটিংয়ে চাপে পড়লেও, ধানাঞ্জয়া ডি সিলভা ও কামিন্দু মেন্ডিসের শতরানের জুটিতে ঘুরে দাঁড়িয়েছে লঙ্কানরা।
লন্ডনের দা ওভালে সিরিজের তৃতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিনেও আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন। আলোকস্বল্পতায় এদিনও খেলা শেষ হয়ে যায় বেশ আগেভাগে। একটা পর্যায়ে তো পেসার ক্রিস ওকসকে অফ স্পিন বোলিংও করতে হয়!
দিন শেষে শ্রীলঙ্কার রান ৫ উইকেটে ২১১। এখনও ১১৪ রানে পিছিয়ে আছে সিরিজের প্রথম দুই টেস্টেই হারা সফরকারীরা।
৩ উইকেটে ২২১ রান নিয়ে শনিবারের খেলা শুরু করে ইংল্যান্ড গুটিয়ে যায় ৩২৫ রানে। ৬৪ রানে শেষ ৭ উইকেট হারায় তারা। শেষ ৬ উইকেট হারায় ৩৫ রান আর ৫৬ বলের মধ্যে।
আগের দিন ১০৩ রানে অপরাজিত পোপ করেন ১৫৪। তার ১৫৬ বলের ইনিংস গড়া ১৯ চার ও ২ ছক্কায়। এদিন দলের আর কেউ বিশ পর্যন্তও যেতে পারেননি।
প্রথম দিন এলোমেলো বোলিং করা শ্রীলঙ্কার বোলাররা দ্বিতীয় দিন ছিল বেশ নিয়ন্ত্রিত। তাদের চার পেসার মিলে ভাগ করে নেন ৮ উইকেট। অফ স্পিনে বাকি ২ উইকেট নেন অধিনায়ক ধানাঞ্জয়া। ৫৬ রানে ৩ উইকেট নিয়ে দলের সফলতম বোলার মিলান রাত্নায়েকে।
ব্যাটিংয়ে ওপেনার পাথুম নিসাঙ্কার (৫১ বলে ৬৪) আগ্রাসী ইনিংসের পরও একশর আগে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে শ্রীলঙ্কা। সেখান থেকে দলকে টেনে তোলেন ধানাঞ্জয়া ও কামিন্দু। ফিফটি করে অপরাজিত আছেন দুজনই।
মেঘলা আকাশের নিচে উইকেটে পেসারদের জন্য ছিল মুভমেন্ট। দিনের প্রথম ওভারে হ্যারি ব্রুককে কট বিহাইন্ডের আবেদনে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। ব্যাটসম্যান রিভিউ নিয়ে বাঁচেন বল ব্যাটে না লাগায়। এক ওভার পর রাত্নায়েকের বলে ব্রুকের ক্যাচ ফেলেন আসিথা ফার্নান্দো।
রাত্নায়েকেই পরে ব্রুককে ফিরিয়ে ভাঙেন ৭০ রানের জুটি। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ড্রাইভ করেন ব্যাটসম্যান, কাভারে দারুণ ক্যাচ নেন কামিন্দু।
পোপ ১৩৯ রানে বেঁচে যান আম্পায়ার এলবিডব্লিউ দেওয়ার পর রিভিউ নিয়ে। জেমি স্মিথকে বেশি দূর যেতে দেননি ভিশ্ব ফার্নান্দো। ধানাঞ্জয়া নিজের পরপর দুই ওভারে বিদায় করে দেন ওকস ও গাস অ্যাটকিনসনকে।
১৫১ বলে দেড়শ স্পর্শ করা পোপকে থামান বিশ্ব। এই পেসারের শর্ট বল হুক করে ডিপ স্কয়ার লেগে ধরা পড়েন ইংল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক।
বাকি দুই উইকেট দ্রুতই নিয়ে ইংল্যান্ডকে অল আউট করে দেয় শ্রীলঙ্কা।
জবাবে নিসাঙ্কার ব্যাটে শ্রীলঙ্কার শুরুটা হয় আশা জাগানিয়া। প্রথম ৬ ওভারে তারা তুলে ফেলে ৩৪ রান। পরের ওভারে ওকসের বলে অযথা একটি রান নিতে গিয়ে স্টোনের সরাসরি থ্রোয়ে রান আউটে কাটা পড়েন দিমুথ কারুনারাত্নে।
নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিজে আসেন কুসাল মেন্ডিস। লাইটমিটারে পরীক্ষার পর আম্পায়ার ইংল্যান্ড অধিনায়ককে জানিয়ে দেন, পেসার দিয়ে বোলিং করানোর জন্য পর্যাপ্ত আলো নেই তখন। তাই অফ স্পিনে ওই ওভারের শেষ চারটি ডেলিভারি করেন ওকস। একটি চারও হজম করেন তিনি।
চরম নাটকীয়তার ওই মুহূর্তে পরের ওভারেই আবার পেসার দিয়ে বোলিং করানোর সুযোগ পায় ইংল্যান্ড!
কুসাল মেন্ডিস বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ওকসের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি।
একটা পর্যায়ে শ্রীলঙ্কার রান ছিল ২ উইকেটে ৮৬। এরপর ৭ রানের মধ্যে দ্রুত ৩ উইকেট হারায় তারা।
স্টোন পরপর দুই ওভারে ফেরান অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ও দিনেশ চান্দিমালকে। ম্যাথিউস ক্যাচ দেন স্লিপে, চান্দিমাল হন এলবিডব্লিউ। এর মাঝে বিপজ্জনক হয়ে ওঠা নিসাঙ্কাকে ফিরিয়ে প্রথম উইকেটের দেখা পান অভিষিক্ত দীর্ঘদেহী বাঁহাতি পেসার জশ হাল। কাভারে চমৎকার ক্যাচ নেন ওকস।
৯৩ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে তখন বিপদে শ্রীলঙ্কা। সেখান থেকে দলের হাল ধরেন ধানাঞ্জয়া ও কামিন্দু।
অবশ্য ২৩ রানে ধানাঞ্জয়াকে ফেরানোর সুযোগ এসেছিল। অফ স্পিনার শোয়েব বাশিরকে বেরিয়ে এসে খেলে মিড অনে ক্যাচ তুলে দেন লঙ্কান অধিনায়ক, কিন্তু লোপ্পা ক্যাচ ছাড়েন হাল।
জীবন পেয়ে ধানাঞ্জয়া ফিফটি করেন ৮১ বলে। ৬০ বলে পঞ্চাশে পা রাখেন কামিন্দু। ক্যারিয়ারের প্রথম ৬ টেস্টে তার পঞ্চাশ-ছোঁয়া ইনিংস হলো ৭টি, বার্ট সাটক্লিফ, হ্যারি ব্রুক ও সাউদ শাকিলের সঙ্গে যৌথভাবে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এই তালিকায় চূড়ায় আছেন সুনিল গাভাস্কার (৯টি)।
কামিন্দুর ফিফটির পর আর বেশিক্ষণ খেলা হতে পারেনি। ৭০ বলে ৬টি চারে ৫৪ রানে অপরাজিত আছেন তিনি। ১০৬ বলে ১০ চারে ৬৪ রানে খেলছেন ধানাঞ্জয়া। দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটির রান ১১৮।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৬৯.১ ওভারে ৩২৫ (আগের দিন ২২১/৩) (পোপ ১৫৪, ব্রুক ১৯, স্মিথ ১৬, ওকস ২, অ্যাটকিনসন ৫, স্টোন ১৫*, হাল ২, বাশির ১; আসিথা ২০-০-৮৮-১, ভিশ্ব ১৩-১-৪৬-২, কুমারা ১৬-১-৯৭-২, রাত্নায়েকে ১৩.১-৩-৫৬-৩, ম্যাথিউস ৩-০-১৪-০, ধানাঞ্জয়া ৪-০-১৮-২)
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৪৫ ওভারে ২১১/৫ (নিসাঙ্কা ৬৪, কারুনারাত্নে ৯, কুসাল মেন্ডিস ১৪, ম্যাথিউস ৩, চান্দিমাল ০, ধানাঞ্জয়া ৬৪*, কামিন্দু মেন্ডিস ৫৪*; ওকস ৯-২-৪১-১, অ্যাটকিনসন ৯-১-৪৬-০, হাল ৫-০-২৬-১, স্টোন ৫-১-২৮-২, বাশির ৯-০-২৯-০, লরেন্স ৬-০-২৯-০, রুট ২-০-১১-০)