গ্লোবাল সুপার লিগ ও বিপিএল মিলিয়ে টানা ১১ ম্যাচ জিতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের টানা জয়ের রেকর্ড স্পর্শ করল রংপুর রাইডার্স।
Published : 17 Jan 2025, 11:25 PM
মাঠে লড়ছে দুর্বার রাজশাহী ও সিলেট স্ট্রাইকার্স। কিন্তু গ্যালারি পরিপূর্ণ চিটাগং কিংসের নীল জার্সিতে। ঘরের মাঠের দলটির খেলা দেখতে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে দুপুরেই মাঠ পূর্ণ করে ফেলে চট্টগ্রামের দর্শকরা। কিন্তু পরে খেলা শেষ হওয়ার অনেক আগেই খালি হতে থাকে মাঠ। চিটাগং কিংস যে পূরণ করতে পারল না ঘরের দর্শকদের প্রত্যাশা!
চিটাগংয়ের সমর্থকদের নীলের জোয়ারকে হতাশায় ডুবিয়ে জয়রথ অব্যাহত রাখল রংপুর রাইডার্স। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা খুশদিল শাহর আরেকটি অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে শুক্রবার জিতল তারা ৩৩ রানে। এই জয়ে প্রথম দল হিসেবে এবারের আসরের প্লে-অফ নিশ্চিতও করে ফেলল তারা।
চলতি বিপিএলে রংপুরের এটি টানা অষ্টম জয়। এর আগে গ্লোবাল সুপার লিগে টানা তিন ম্যাচ জিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারা। সব মিলিয়ে টি-টোয়েন্টিতে টানা ১১ ম্যাচ জিতল নুরুল হাসান সোহানের দল।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের কোনো দলের টানা জয়ের এটিই রেকর্ড। ২০২৩ সালে চতুর্থ শিরোপা জয়ের পথে টানা ১১ ম্যাচ জিতেছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সও।
রেকর্ড ছোঁয়া ম্যাচে রংপুরের হয়ে ঝড় তোলেন খুশদিল। অন্যদের নিষ্প্রভ দিনে ২ চারের সঙ্গে ৭ ছক্কায় তিনি খেলেন ২৮ বলে ৫৯ রানের ইনিংস। পরে বল হাতেও ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন বাঁহাতি স্পিন অলরাউন্ডার।
খালেদের মায়ের মৃত্যুশোকে নীরবতা
বৃহস্পতিবার রাতে খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে ম্যাচ জিতে মায়ের মৃত্যুর সংবাদ পান চিটাগং কিংসের পেসার সৈয়দ খালেদ আহমেদ। রাতেই সিলেটে চলে যান তিনি। তার মায়ের মৃত্যুতে এক মিনিট নীরবতা পালন দিয়ে শুরু হয় চিটাগংয়ের ম্যাচ।
অবশেষে বিশ্রামে নাহিদ
বেশ কয়েক দিন ধরেই আলোচনায় ছিল নাহিদ রানার টানা খেলার প্রসঙ্গ। অবশেষে সাত ম্যাচ খেলার পর তাকে একাদশের বাইরে রাখে রংপুর। তার জায়গায় আসেন কামরুল ইসলাম। এছাড়া রেজাউর রহমান রাজার জায়গায় নেওয়া হয় রকিবুল হাসানকে।
চিটাগংয়ের হয়ে বিপিএল অভিষেক হয় সবশেষ দুটি অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপজয়ী পেসার মারুফ মৃধার।
শুরুতেই চাপে রংপুর
পাওয়ার প্লেতে চিটাগংয়ের দুই বাঁহাতি পেসার বিনুরা ফার্নান্দো ও মারুফের চমৎকার সিম বোলিংয়ে চাপে পড়ে যায় রংপুর। প্রথম ওভারে মাত্র ১ রান দেন বিনুরা। মারুফের পরের ওভারে খরচ ২ রান।
তৃতীয় ওভারে এর ফায়দা নেন আলিস আল ইসলাম। বড় শটের খোঁজে মিড অফে ক্যাচ দেন তৌফিক খান।
পরের ওভারে মাত্র ৩ রান দেন বিনুরা। পঞ্চম ওভারে স্টিভেন টেইলরকে আউট করার সুযোগ আনেন আলিস। কিন্তু লং অফে ক্যাচ ছেড়ে দেন উসমান খান। ৭ রানে বেঁচে যান বাঁহাতি ওপেনার।
তিন নম্বরে নেমে সাইফ হাসানও ছন্দ খুঁজে পাননি। পাওয়ার প্লেতে রংপুর করতে পারে মাত্র ৩১ রান। নবম ওভারে পূর্ণ হয় দলের পঞ্চাশ রান।
দশম ওভারের আলিসের প্রথম বল ছক্কায় ওড়ান টেইলর। ওই ওভারে সাইফকে এলবিডব্লিউ করে রংপুরের চাপ আরও বাড়ান এই স্পিনার।
১০ ওভারে রংপুরের স্কোর দাঁড়ায় ২ উইকেটে ৬৫ রান।
দ্রুত বিদায় টেইলর-ইফতিখারের
একাদশ ওভারে আক্রমণে এসে সহজ ফিরতি ক্যাচে টেইলরকে আউট করেন নাঈম ইসলাম। দ্বিতীয় সুযোগে ৩২ রান যোগ করে সব মিলিয়ে ৩৯ রান করেন রংপুর ওপেনার।
পরের ওভারে আরাফাত সানির টার্ন করে বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারিতে স্টাম্পড হন ইফতিখার আহমেদ। মাত্র ৬ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদ আরও বাড়ে রংপুরের।
খুশদিল ঝড়ে লড়াইয়ের পুঁজি
পাঁচ নম্বরে নেমে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন খুশদিল। চতুর্থ বলে ছক্কা মেরে ডানা মেলে দেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
পঞ্চদশ ওভারে অভিষিক্ত মারুফের পরপর তিন বল ছক্কায় ওড়ান খুশদিল। প্রথম দুই ওভারে মাত্র ৬ রান খরচ করা বাঁহাতি পেসার পরের দুই ওভার দিয়ে ফেলেন ৩০ রান।
পরের ওভারে নুরুল হাসান সোহানকে আউট করেন মোহাম্মদ ওয়াসিম। খুশদিলকে বেশি দূর যাওয়ার আগেই ফেরাতে পারত চিটাগং।
সপ্তদশ ওভারে বিনুরার প্রথম বলে কভারে সহজ এক ক্যাচ ছেড়ে দেন আরাফাত সানি। ৩২ রানে বেঁচে গিয়ে আরও ২৭ রান যোগ করেন খুশদিল। শেষ ৩ ওভারে ৫১ রান করে রংপুর।
স্বদেশি ওয়াসিমের ওভারে ৩ ছক্কার সঙ্গে ১ চার মেরে প্রথম পাঁচ বলে ২৫ রান নিয়ে ফেলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। মাত্র ২৬ বলে পূর্ণ হয় চলতি আসরে তার দ্বিতীয় ফিফটি।
ওই ওভারের শেষ বল আবারও ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় হাওয়ায় ভাসিয়ে দেন খুশদিল। ক্রিজের পাশ থেকে ক্যাচ নেন ওয়াসিম।
শেষ দিকে দুই চার ও এক ছক্কায় ১২ বলে ১৭ রান করেন শেখ মেহেদি হাসান। ইনিংসের শেষ বল ছক্কায় ওড়ান সাইফ উদ্দিন।
প্রথম বলেই আউট উসমান, ব্যর্থ টপ-অর্ডার
রান তাড়ায় রকিবুল হাসানের প্রথম বলে বড় শটের খোঁজে থার্ড ম্যানে ক্যাচ দেন চিটাগংয়ের সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান উসমান খান।
শুরুর ধাক্কা সামলে পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করেন পারভেজ হোসেন। পঞ্চম ওভারে আকিফ জাভেদের বলে দুই ছক্কার মাঝে চার মারেন বাঁহাতি ওপেনার।
ওভারের শেষ বলে ব্যাটের ওপরের কানায় লেগে উঠে যায় অনেক ওপরে। উইকেটের পেছনে দারুণ ক্যাচ নেন সোহান। হতাশায় ব্যাট দিয়ে বারবার মাটিতে আঘাত করতে করতে মাঠ ছাড়েন ১৪ বলে ২৬ রান করা পারভেজ।
নিজের পরের ওভারে চার বলের মধ্যে মোহাম্মদ মিঠুন ও আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান গ্রাহাম ক্লার্ককে ফেরান আকিফ।
মাত্র ৫৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় চিটাগং।
নাঈমকে নিয়ে শামীমের বৃথা চেষ্টা
ধাক্কা সামলে পঞ্চম উইকেট জুটিতে প্রতিরোধ গড়েন নাঈম ইসলাম ও শামীম হোসেন। কিন্তু দ্রুত রান তোলার চাহিদা মেটাতে পারেননি নাঈম। অন্য প্রান্তে শামীম একাই রানের গতি বাড়াতে চেষ্টা করেন।
নবম ওভারে সাইফ উদ্দিনের বলে চমৎকার স্কুপ শটে ছক্কা মারেন শামীম। পরে ইফতিখার আহমেদের বলও তিনি ওড়ান ছক্কায়।
পঞ্চদশ ওভারে নাঈমকে বোল্ড করে ৪৭ বলে ৫৩ রানের জুটি ভাঙেন খুশদিল। ২৪ বলে ১৯ রান করেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।
এরপর শামীমও তেমন কিছু করতে পারেননি। শেষ ছয় ওভারে মাত্র ২৯ রান করে চট্টগ্রাম।
আকিফের ৪, খুশদিল ২
চিটাগংয়ের ব্যাটিং গুঁড়িয়ে ৩২ রানে ৪ উইকেট নেন আকিফ জাভেদ। ঝড়ো ব্যাটিংয়ের পর নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে ২৩ রানে ২ উইকেট শিকার খুশদিলের।
রংপুর রাইডার্স: ২০ ওভারে ১৬৪/৭ (তৌফিক ৫, টেইলর ৩৯, সাইফ ১৭, ইফতিখার ৩, খুশদিল ৫৯, সোহান ৮, মেহেদি ১৭, সাইফ উদ্দিন ৮*, কামরুল ০*; বিনুরা ৪-০-১৪-১, মারুফা ৪-০-৩৬-০, আলিস ৪-০-২৮-২, ওয়াসিম ৪-০-৪২-২, সানি ৩-০-৩৬-১, নাঈম ১-০-৪-১)
চিটাগং কিংস: ২০ ওভারে ১৩১/৮ (উসমান ০, পারভেজ ২৬, ক্লার্ক ২৩, মিঠুন ২, নাঈম ১৯, শামীম ৩৮, ওয়াসিম ৬, আলিস ৭, আরাফাত ৫*, মারুফ ২*; রকিবুল ৩-০-১৫-১, মেহেদি ৪-০-২৫-০, আকিফ ৪-০-৩২-৪, সাইফ উদ্দিন ১-০-১২-০, ইফতিখার ৪-০-২২-১, খুশদিল ৪-০-২৩-২)
ফল: রংপুর রাইডার্স ৩৩ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: খুশদিল শাহ