Published : 05 May 2025, 03:45 PM
সকাল ৯টায় শুরু ম্যাচে যখন টস জিতে ব্যাটিং নিল নিউ জিল্যান্ড, বিস্ময় কিছুটা জেগেছিল তখনই। খেলার শুরুর পর খাল কেটে কুমির আনার অনুভূতিই হওয়ার কথা অধিনায়ক নিক কেলির। উইকেটের বাউন্স ও মুভমেন্ট কাজে লাগিয়ে কিউই ব্যাটসম্যানদের নাভিশ্বাস তুলে ছাড়লেন শরিফুল ইসলাম ও সৈয়দ খালেদ আহমেদ। শুরুর বিপর্যয়ের পর কিছুটা লড়াই করলেও লাভ খুব একটা হলো না। বড় জয়ে সিরিজ শুরু করল বাংলাদেশ ‘এ’ দল।
সিলেটে একদিনের ম্যাচের সিরিজের প্রথম ম্যাচে নিউ জিল্যান্ড ‘এ’ দলকে ৭ উইকেটে হারাল বাংলাদেশ ‘এ।’
বাংলাদেশের দুই পেসারের বোলিং তোপে আউট হওয়া প্রথম চার ব্যাটসম্যান রানের খাতাই খুলতে পারেননি। পরে ওপেনার রিস মারিয়ু ৪২ ও আট নম্বরে নামা ডিন ফক্সক্রফট ৭২ রানের ইনিংস খেললেও দেড়শ ছুঁতে পারেনি সফরকারীরা।
নতুন বলে শরিফুল ও খালেদের দারুণ বোলিংয়ের পর দুটি উইকেট শিকার করেন জাতীয় দলে ফেরার লড়াইয়ে থাকা ইবাদত হোসেন চৌধুরিও। পরে তিন উইকেট নিয়ে স্পিনেও কিউইদের চেপে ধরেন টি-টোয়েন্টির বাংলাদেশ দলে ফেরা তানভির ইসলাম।
১৪৮ রানের লক্ষ্য ছুঁতে কোনো সমস্যা হয়নি বাংলাদেশের। ১৩৬ বল বাকি রেখেই জিতে সিরিজে এগিয়ে যায় নুরুল হাসান সোহানের নেতৃত্বাধীন দল।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমেই বিপদে পড়ে যায় নিউ জিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা। মাইরু ও ফক্সক্রফটই শুধু দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেন।
নতুন বলে শরিফুল ও খালেদের সামনে অসহায় মনে হচ্ছিল কিউইদের। সাত ওভারের মধ্যে ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন চার কিউই ব্যাটসম্যান।
তৃতীয় ওভারে শরিফুলের ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ হন ডেল ফিলিপস। আট বল খেললেও সুবিধা করতে পারেননি নিউ জিল্যান্ড জাতীয় দলের অলরাউন্ডার গ্লেন ফিলিপসের দুই বছরের ছোট এই ভাই।
পরের ওভারে খালেদের জোড়া আঘাত। তিন বলের মধ্যে ড্রেসিং রুমে ফেরেন ম্যাট বয়েল ও মোহাম্মদ আব্বাস। গত মার্চে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেকে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড গড়া আব্বাস দুই বলের বেশি খেলতে পারেননি। অফ স্টাম্প ঘেষা ডেলিভারিতে ক্যাচ দেন তিনি উইকেটের পেছনে।
পরে চমৎকার ডেলিভারিতে নিক কেলির অফ স্টাম্প উপড়ে ফেলেন শরিফুল।
সপ্তম ওভারে নিউ জিল্যান্ডের রান তখন ৪ উইকেটে ১৩। খালেদের প্রথম স্পেল ছিল ৪-২-২-২!
শুরুর নড়বড়ে ভাব কাটিয়ে একটু থিতু হয়ে বেশ কিছু ভালো শট খেলেন রিস মারিয়ু। তানভিরের ওভারে জোড়া চার মারেন কিউই ওপেনার। ইবাদতের বলেও মারেন দুটি চার।
আরেকপ্রান্তে কিছুটা সময় উইকেট আঁকড়ে রাখা জশ ক্লার্কসনকে থামান ইবাদত। লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে কিপারের কাছে ক্যাচ দেন ৭ রান করা ব্যাটসম্যান।
একটু পর আরও বড় ধাক্কা খায় কিউইরা। তানভির ইসলামকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলার চেষ্টায় স্টাম্পড হন মারিয়ু।
দলের রান তখন ৬ উইকেটে ৫৮, তাতে মারিয়ুর রানই ৭ চারে ৪২।
বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি কিউইদের বড় ভরসা মিচেল হে। এক মাস আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডেতে ৭ ছক্কায় ৭৮ বলে ৯৯ রান করা ব্যাটসম্যানকে তানভির ফেরান ৪ রানেই।
পরের বলেই যখন ক্রিস্টিয়ান ক্লার্ককে বোল্ড করেন এই বাঁহাতি স্পিনার, দলের একশ ছোঁয়াই তখন অনেক দূরের পথ। ৬২ রানেই নেই ৮ উইকেট।
সেখান থেকে ফক্সক্রফটের লড়িয়ে ব্যাটিংয়ে শেষ দুই উইকেটে আরও ৮৫ রান যোগ করে সফরকারীরা। ৮৫ রানে নবম উইকেটের পতনের পর শেষ জুটিতে আসে ৫২ বলে ৬২ রান। যেখানে বেন লিস্টারের অবদান স্রেফ ১০ বলে ৪ রান।
শরিফুলের বলে দুটি চার মারেন ফক্সক্রফট। খালেদের দুই ওভার মিলিয়ে তিন চারের সঙ্গে মারেন ছক্কা। ইবাদত আর তানভিরের বলও সীমানার ওপারে পাঠান নিউ জিল্যান্ডের হয়ে ৬টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা স্পিনিং অলরাউন্ডার।
৫৩ বলে ফিফটি ছুঁয়ে আরও এগোতে থাকেন ২৭ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। ইবাদতের বলে পুল করে মারেন চতুর্থ ছক্কা। পরের বলেই অবশ্য কট বিহাইন্ড হয়ে যান ফক্সক্রফট। ৩৫তম ওভারেই শেষ কিউইদের ইনিংস।
উইকেট ততক্ষণে অনেকটাই সহজ হয়ে এসেছে। ছোট লক্ষ্যে প্রথম ওভারেই তিনটি চার মেরে নিজের অভিপ্রায় পরিষ্কার করে দেন পারভেজ হোসেন ইমন।
আগ্রাসী শুরুর পর বেশিক্ষণ অবশ্য টিকতে পারেননি তিনি। ক্লার্কের ফুল লেংথ ডেলিভারি ফ্লিক করার চেষ্টায় ভারসাম্য হারিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেন বাঁহাতি ওপেনার। ৬ চারে ১২ বলে করেন তিনি ২৪ রান।
আরেক ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম শেখ শুরুতে ছিলেন বেশ নড়বড়ে। পরে তিনটি চার মারলেও আউট হয়ে যান ২০ বলে ১৮ রান করে।
তিন নম্বরে নেমে প্রথম দুই বলে দৃষ্টিনন্দন কাভার ড্রাইভে বাউন্ডারি মারেন এনামুল হক। বেন লিস্টারের ওভারেও মারেন দুটি চার। পাওয়ার প্লেতে ৭০ রান করে বাংলাদেশ।
সাবলীল ব্যাটিংয়ে এগোতে থাকেন এনামুল ও মাহিদুল ইসলাম। বাঁহাতি জেডেন লেনক্সের বল ছক্কায় উড়িয়ে জুটির পঞ্চাশ পূর্ণ করেন মাহিদুল।
তবে ভালো শুরুর পর ইনিংস বড় করতে পারেননি এনামুল। ফক্সক্রফটের বলে সুইপ করার চেষ্টায় ফাইন লেগে ধরা পড়েন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান (৪৫ বলে ৩৮)।
এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের সর্বোচ্চ তিন রান স্কোরার ছিলেন এই তিনজন। এনামুলের রান ছিল ৮৭৪, পারভেজের ৭৯৮, নাঈমের ৬১৮। ‘এ’ দলে এসে প্রথম সুযোগে বড় রান করতে পারলেন না কেউ।
এরপর আর উইকেট পড়তে দেননি মাহিদুল ও সোহান। ৪১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন দুজন। ১ চার ও ৩ ছক্কায় ৬১ বলে ৪২ রান করেন মাহিদুল। সোহানের ব্যাট থেকে আসে ১টি করে চার-ছক্কায় ২০ রান।
একই মাঠে সিরিজের দ্বিতীয় এক দিনের ম্যাচ বুধবার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড ‘এ’: ৩৪.৩ ওভারে ১৪৭ (মারিয়ু ৪২, ফিলিপস ০, বয়েল ০, আব্বাস ০, কেলি ০, ক্লার্কসন ৭, হে ৪, ফক্সক্রফট ৭২, ক্লার্ক ০, লেনক্স ৯, লিস্টার ৪*; শরিফুল ৭-০-২৭-২, খালেদ ৭-২-২৭-৩, ইবাদত ৭.৩-০-৩৫-২, তানভির ১০-২-৪৫-৩, মোসাদ্দেক ৩-০-৭-০)
বাংলাদেশ ‘এ’: ২৭.২ ওভারে ১৪৯/৩ (নাঈম ১৮, পারভেজ ২৪, এনামুল ৩৮, মাহিদুল ৪২*, নুরুল ২০*; লিস্টার ৫-০-৪০-০, ক্লার্ক ৫-০-৩০-২, আব্বাস ৩-০-২১-০, লেনক্স ৮.২-১-৩২-০, ফক্সক্রফট ৬-১-২৬-১)
ফল: বাংলাদেশ ‘এ’ ৭ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: সৈয়দ খালেদ আহমেদ