তালেবান সরকারের সিদ্ধান্তের সামনে নিজেদের অসহায়ত্বের কথা জানিয়ে হাশমাতউল্লাহ শাহিদি বললেন, ‘আমরা স্রেফ ক্রিকেট খেলোয়াড় এবং মাঠের ভেতরের ব্যাপারগুলিই কেবল আমাদের হাতে আছে।’
Published : 26 Feb 2025, 09:27 AM
আফগান নারীদের ক্রিকেট মাঠে দেখতে চান ছেলেদের দলের অধিনায়ক হাশমাতউল্লাহ শাহিদি। তবে স্রেফ এই এক লাইনের বাইরে আর বেশি কিছু বলতে চাইলেন না তিনি। রাজনীতি ও এই সংক্রান্ত ব্যাপারগুলি নিজেদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে জানিয়ে আফগানিস্তানের অধিনায়ক বললেন, মাঠের ক্রিকেটেই মনোযোগ দিতে চান তারা।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের আগে এই প্রসঙ্গটি যে জোরেজোরে উচ্চারিত হবে, তা অনুমিতই ছিল। এই ম্যাচটিই যে অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিল কিছুটা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে এই ম্যাচ বর্জনের ডাক উঠেছিল ইংল্যান্ডে।
২০২১ সালে তালেবানরা ক্ষমতায় আসার পর সমাজ ও রাষ্ট্রের নানা ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ চরমভাবে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। খেলাধুলায় নারীদের অংশগ্রহণ তো পুরোপুরি নিষিদ্ধ। নারীদের ক্রিকেট ও নারী দল গঠন করার কার্যক্রম পুরোপুরি ভেস্তে গেছে। নারীদের শিক্ষা কার্যক্রম একদমই সীমিত করা হয়েছে, উচ্চশিক্ষার পথ একরকম বন্ধ।
এটা নিয়ে ক্রিকেটবিশ্বে আলোচনা হয়ে আসছে কয়েক বছর ধরেই। অস্ট্রেলিয়া তো এটির জের ধরে আফগানদের সফর ও তাদের বিপক্ষে সিরিজও বাতিল করেছে। কিছুদিন আগে আফগান নারীদের নার্সিং কোর্স বন্ধের প্রতিবাদে সোচ্চার ছিলেন ছেলেদের দুই তারকা ক্রিকেটার রাশিদ খান ও মোহাম্মদ নাবি।
এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে ইংল্যান্ডের অনেক রাজনীতিবিদ ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) কাছে জোর দাবি জানায়, আফগানদের বিপক্ষে ম্যাচ বাতিল করে তালেবান সরকারকে চাপে ফেলতে। ইসিবির কাছে পাঠানো লেবার পার্টির সাংসদ টোনিয়া অ্যান্টোনিয়াজির সেই চিঠিতে স্বাক্ষর ছিল ১৬০ জন সাংসদের।
অনেক টানাপোড়েনের পর ম্যাচ বর্জনের সিদ্ধান্ত আর নেয়নি ইসিবি। তবে আফগানিস্তানের যে ভয়ঙ্কর ‘নারী নিপীড়ন’ চলছে, এটা নিয়ে উল্লেখ করে আইসিসি ও গোটা ক্রিকেট বিশ্বকে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানান ইসিবির চেয়ারম্যান রিচার্ড থম্পসন।
উল্লেখ্য যে, টেস্ট মর্যাদা পাওয়া ও আইসিসির রাজস্বের ভাগ পাওয়ার একটি শর্ত হলো নারী ক্রিকেট কার্যক্রম চালু থাকা। কিন্তু সেই শর্ত দীর্ঘদিন ধরেই মানছে না আফগানিস্তান।
লাহোরে সেই ম্যাচের আগের দিন হাশমাতউল্লাহ শাহিদির কাছে সরাসরিই জানতে চাওয়া হলো, আফগান নারীদের কি খেলতে দেখতে চান আপনি?
আফগান অধিনায়ক এখানে সায় দিলেন এবং শোনালেন এই ব্যাপারে নিজেদের অসাহয়ত্বের কথাও।
“হ্যাঁ (আফগান নারীদের খেলায় সমর্থন আছে), সবাই চায় সবাইকে খেলতে দেখতে। তবে আগেও যেমন একজনের প্রশ্নের উত্তরে বললাম, রাজনীতি ও এই সংক্রান্ত ব্যাপারগুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। আমরা স্রেফ ক্রিকেট খেলোয়াড়। মাঠের ভেতরের ব্যাপারগুলিই কেবল আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। মাঠই আমাদের জায়গা এবং সেখানে নেমে খেলার সময় আমরা সবসময় শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করি।”
‘আগেও একজনের প্রশ্নের’ যে কথাটি শাহিদি বললেন, সেটি ছিল ইংল্যান্ডের এই ম্যাচ বর্জনের আলোচনা নিয়ে। সেখানেও শাহিদি বলেছিলেন, কেবল মাঠের ক্রিকেটেই মনোযোগ রাখতে চান তারা।
“আমরা স্রেফ ক্রিকেট খেলোয়াড়, আমরা ক্রীড়াবিদ। মাঠের ভেতরের ব্যাপারই কেবল আমাদের হাতে আছে। মাঠের বাইরের ব্যাপার নিয়ে আমরা চিন্তিত নই। নিজের আত্মবিশ্বাসে ধাক্কা লাগার মতো কিছু করতে পারি না আমরা। ভালোভাবে নেট সেশন করি, কঠোর পরিশ্রম করি ও মাঠে নেমে কঠিনভাবে খেলার চেষ্টা করি। আমরা সেটাই ভাবছি এবং মাঠের ভেতরে যা করা যায়, আমরা কেবল সেটাই করতে পারি।”
কিছুদিন আগে আফগান নারীদের নার্সিং কোর্স যখন বন্ধ করা হলো, প্রকাশ্যেই প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন রাশিদ খান ও মোহাম্মদ নাবির মতো তারকারা। এবার শাহিদি নারীদের ক্রিকেট নিয়ে আরও খোলামেলা বলতে পারেননি হয়তো সঙ্গত কারণেই। তবে আফগানিস্তানের কোচ ও সাবেক ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যান জোনাথন ট্রট তার দলের মনোভাব আরেকটু খোলাসা করেছে বিবিসির কাছে।
"এই ছেলেরা অবশ্য সাহসী। কোনটি ভুল আর কোনটি ঠিক, তারা তা জানে। তাদের জন্য পরিস্থিতি সত্যিই 'ট্রিকি।' তারা জানে, কাদের হয়ে তারা খেলছে এবং প্রতিনিধিত্ব করছে। দেশে মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে ওরা কঠোর পরিশ্রম করে এবং ছেলেরা দারুণ সাহসী, তাড়না প্রবল ও গর্বিত এটা করতে পেরে। তবে এটাও তারা জানে, কিছু ব্যাপার ঠিক হচ্ছে না (আফগানিস্তানে)।"
আফগান নারীদের প্রতি সহানুভূতি জানালেন ইংল্যান্ডের অধিনায়ক জস বাটলার। তার আশা, এই ম্যাচ দিয়ে অন্তত কিছুটা আনন্দের খোরাক জোগানো যাবে নিপীগিতদের।
"অনেক বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে অনেক পরামর্শ নিয়েছি আমি। কৃতিত্ব দিতে হবে রব কি (ছেলেদের দলের পরিচালক) ও ইসিবিকে। তারা আমাকে ও গোটা দলকে ভালোভাবে সমর্থন দিয়েছে এবং এই ব্যাপারগুলি নিয়ে যথেষ্ট তথ্য ও ধারণা দিয়েছে এবং বোর্ডের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।"
"আফগানিস্তানে নারী ও মেয়েদের দুর্দশা এবং যে ভোগান্তির মুখোমুখি তারা হচ্ছে, তাতে আমরা অবশ্য খুবই ব্যথিত। তবে আশা করি, এমন কঠিন সময়ে এই ম্যাচ হয়ে উঠবে আশা ও আনন্দের উৎস। খেলাধুলার দারুণ এক শক্তি আছে মানুষকে একতাবদ্ধ করার ও আশা দেখানোর। আমার চাওয়া, এই ম্যাচটিও এমন কিছুই করবে।"
লাহোরে ইংল্যান্ড-আফগানিস্তান ম্যাচটি শুরু বাংলদেশ সময় বুধবার দুপুর ৩টায়। দুই দলের জন্যই ম্যাচটি নকআউট, হেরে গেলেই ছিটকে পড়তে হবে টুর্নামেন্ট থেকে।