ভারত-নিউ জিল্যান্ড সিরিজ
মুম্বাই টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে ১ উইকেট হাতে নিয়ে কেবল ১৪৩ রানে এগিয়ে আছে নিউ জিল্যান্ড।
Published : 02 Nov 2024, 06:02 PM
আরেকটি দিন, আবারও স্পিনারদের আধিপত্য। মুম্বাই টেস্টের দ্বিতীয় দিনেও বল হাতে আলো ছড়ালেন দুই দলের স্পিনাররা। ব্যাটিং দুরূহ উইকেটে রানও অবশ্য কম হলো না। রিশাভ পান্তের ঝড়ো ফিফটি, শুবমান গিলের নব্বই ছোঁয়া ইনিংস, ওয়াশিংটন সুন্দারের ক্যামিওতে মূল্যবান লিডের পর রাভিচান্দ্রান অশ্বিন ও রাভিন্দ্রা জাদেজার দারুণ বোলিংয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পেয়ে গেল ভারত।
ওয়াংখেড়েতে সিরিজের তৃতীয় টেস্টের প্রথম দিন ১৪ উইকেটের পর দ্বিতীয় দিন পতন হলো ১৫টি। রান হলো সব মিলিয়ে এ দিন ৩৪৮।
এই মাঠে টেস্টের প্রথম দুই দিনে এত (২৯) উইকেট আগে কখনও পড়েনি। ২০০০ সালে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্টের প্রথম দুই দিনের ২৫ উইকেট ছিল আগের সর্বোচ্চ।
প্রথম ইনিংসে ২৬৩ রান করে ২৮ রানের লিড পায় ভারত। নিউ জিল্যান্ড শনিবারের খেলা শেষ করে ৯ উইকেটে ১৭১ রান নিয়ে। ১ উইকেট হাতে নিয়ে কেবল ১৪৩ রানে এগিয়ে আছে তারা।
এ দিন ৭ চার ও এক ছক্কায় ১৪৬ বলে ৯০ রানের ইনিংস খেলেন গিল। কিপার-ব্যাটসম্যান পান্ত ৫৯ বলে ৮ চার ও ২ ছক্কায় করেন ৬০ রান। ৩৬ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩৮ রানে অপরাজিত রয়ে যান ওয়াশিংটন।
৫ উইকেট নিয়ে ভারতের লিড বড় হতে দেননি বাঁহাতি স্পিনার এজাজ প্যাটেল।
নিউ জিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেওয়া জাদেজার সামনে আরেকবার সেই স্বাদ পাওয়ার হাতছানি। দ্বিতীয় ইনিংসে এখন পর্যন্ত তার শিকার ৪টি, অশ্বিন নিয়েছেন ৩টি।
প্রথম দিন শেষ বিকেলে ১০ মিনিট আর ৮ বলের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া ভারত দ্বিতীয় দিন শুরু করে ৪ উইকেটে ৮৬ রান নিয়ে।
দিনের প্রথম দুই বলে টানা দুটিসহ ওভারে এজাজকে তিনটি চার মারেন পান্ত। তার ব্যাটে রান বাড়তে থাকে তরতরিয়ে।
প্রথম দিন ৩১ রানে অপরাজিত গিল জীবন পান ৪৫ রানে, গ্লেন ফিলিপসের বলে ক্যাচ নিতে পারেননি দ্বাদশ ফিল্ডার মার্ক চ্যাপম্যান।
পান্ত ফিফটি করেন স্রেফ ৩৬ বলে। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের কোনো ব্যাটসম্যানের দ্রুততম টেস্ট ফিফটি এটি। চলতি সিরিজেই আগের টেস্টে পুনেতে ৪১ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে আগের রেকর্ডটি ছিল ইয়াসাসভি জয়সওয়ালের।
প্রথম ঘন্টায় কোনো উইকেট না হারিয়ে ১৪ ওভারে ৭৭ রান তোলে ভারত।
ফিফটির পর ৫৩ রানে জীবন পান পান্ত, তার ক্যাচ ছাড়েন ম্যাট হেনরি, বোলার ছিলেন এবারও ফিলিপস।
বেশিদূর আর যেতে পারেননি পান্ত। লেগ স্পিনার ইশ সোধির বলে তিনি এলবিডব্লিউ হলে ভাঙে ১১৪ বলে ৯৬ রানের জুটি।
এরপর আর কোনো জুটি ত্রিশ পর্যন্ত যেতে পারেনি। জাদেজা ফেরেন ২৫ বলে ১৪ রান করে।
ডান-বাম কম্বিনেশনের কারণেই হয়তো সারফারাজ খানকে নামানো হয় আট নম্বরে। তিনি শূন্য রানে বিদায় নেন এজাজের বাড়তি বাউন্সে।
সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে এজাজের বলেই আলগা শটে স্লিপে ধরা পড়েন গিল। টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবার ১০ নম্বরে নেমে অশ্বিন ফেরেন ৬ রানে। তাকে ফিরিয়েই পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন এজাজ।
২০২১ সালে ওয়াংখেড়েতে ইনিংসে ১০ উইকেট নিয়ে রেকর্ড গড়েছিলেন তিনি। নিজের জন্ম শহরের এই মাঠে তার টেস্ট উইকেট হলো ১৯টি। ভারতে নির্দিষ্ট একটি মাঠে সফরকারী বোলার হিসেবে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ওয়াংখেড়েতেই ২২ উইকেট নিয়ে চূড়ায় আছে ইংলিশ গ্রেট ইয়ান বোথাম।
ভারত লিড পায় মূলত ওয়াশিংটনের ক্যামিও ইনিংসের সুবাদে। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আকাশ দিপ রান আউট হন শূন্য রানে।
এই সিরিজে ভারতীয় ক্রিকেটারদের শূন্য রানে ফেরার ১৩তম ঘটনা এটি। তিন বা এর কম টেস্টের সিরিজে যা তাদের সর্বোচ্চ। ১৯৭৪ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে সিরিজে তাদের ১২ ‘ডাক’ ছিল আগের সর্বোচ্চ।
দ্বিতীয় ইনিংসে নেমে প্রথম ওভারেই টম ল্যাথামকে হারায় নিউ জিল্যান্ড। আকাশের আগের বলে রিভিউ নিয়ে বাঁচলেও, পরের বলে দারুণ ডেলিভারিতে বোল্ড হন বাঁহাতি ওপেনার।
আরেক ওপেনার ডেভন কনওয়ে শুরুটা ভালো করলেও ইনিংস টেনে নিতে পারেননি। ওয়াশিংটনের বাড়তি বাউন্সে স্লিপে ধরা পড়েন তিনি (৪৭ বলে ২২)। অশ্বিনকে বাউন্ডারির পরের বলে বেরিয়ে এসে খেলার চেষ্টায় বলের লাইন মিস করে স্টাম্পড হন রাচিন রাভিন্দ্রা।
৪৪ রানে ৩ উইকেট হারানো নিউ জিল্যান্ডকে টানেন উইল ইয়াং ও ড্যারিল মিচেল। চতুর্থ উইকেটে দুজন যোগ করেন ৫০ রান। অশ্বিনের দারুণ ক্যাচে মিচেলের (৪৪ বলে ২১) বিদায়ে ভাঙে এই জুটি।
জাদেজা নিজের পরের ওভারে বিদায় করেন টম ব্লান্ডেলকে। ৩ ছক্কা ও এক চারে ১৪ বলে ২৬ রান করে ফিলিপস ফেরেন অশ্বিনের বলে বোল্ড হয়ে।
সোধি টিকতে পারেননি। ফিফটি করার পরপরই বিদায় নেন ইয়াং (১০০ বলে ৫১)। হেনরিকে ফিরিয়ে চতুর্থ শিকার ধরেন জাদেজা। দিনের খেলা শেষ হয়ে যায় সেখানেই।
সিরিজের প্রথম দুই টেস্টে হারা ভারত তৃতীয় দিন শুরু করবে জয়ের সম্ভাবনায় এগিয়ে থেকে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২৩৫
ভারত ১ম ইনিংস: (আগের দিন ৮৬/৪) ৫৯.৪ ওভারে ২৬৩ (গিল ৯০, পান্ত ৪৫, জাদেজা ১৪, সারফারাজ ০, ওয়াশিংটন ৩৮*, অশ্বিন ৬, আকাশ ০; হেনরি ৮-১-২৬-১, ও’রোক ২-১-৫-০, এজাজ ২১.৪-৩-১০৩-৫, ফিলিপস ২০-০-৮৪-১, রাভিন্দ্রা ১-০-৮-০, সোধি ৭-০-৩৬-১)
নিউ জিল্যান্ড ২য় ইনিংস: ৪৩.৩ ওভারে ১৭১/৯ (ল্যাথাম ১, কনওয়ে ২২, ইয়াং ৫১, রাভিন্দ্রা ৪, মিচেল ২১, ব্লান্ডেল ৪, ফিলিপস ২৬, সোধি ৮, হেনরি ১০, এজাজ ৭*; আকাশ ৫-০-১০-১, ওয়াশিংটন ১০-০-৩০-১, অশ্বিন ১৬-০-৬৩-৩, জাদেজা ১২.৩-২-৫২-৪)