অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তান সিরিজ
Published : 16 Nov 2024, 06:14 PM
প্রথম ডেলিভারিই লেগ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে ওয়াইড, সঙ্গে ‘বাই’ থেকে আরও চার রান। এক বল পর ওয়াইড আরেকটি। সব মিলিয়ে প্রথম ওভারে খরচ ১২ রান। এমন বিবর্ণ শুরুর পর কী দারুণভাবেই না ঘুরে দাঁড়ালেন স্পেন্সার জনসন। দুর্দান্ত বোলিংয়ে বাঁহাতি এই পেসার শিকার করলেন পাঁচ উইকেট। পাকিস্তানকে ফের হারিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ জয় নিশ্চিত করল অস্ট্রেলিয়া।
দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়ার জয় ১৩ রানে। সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে শনিবার ১৪৭ রানের পুঁজি নিয়ে পাকিস্তানকে ১৩৪ রানে গুটিয়ে দেয় স্বাগতিকরা।
জয়ের নায়ক জনসন। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে টি-টোয়েন্টিতে আগের ৬ ম্যাচে তার শিকার ছিল ৭ উইকেট। ২৮ বছর বয়সী পেসার এবার এক ম্যাচেই নিলেন ৫ উইকেট, ২৬ রান দিয়ে।
সাড়ে আট বছরের বেশি সময় পর এই সংস্করণে পাঁচ উইকেটের স্বাদ পেলেন অস্ট্রেলিয়ার কোনো পেসার। ২০১৬ সালের মার্চে মোহালিতে বিশ্বকাপের ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষেই ২৭ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন জেমস ফকনার।
এই দুজন ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার হয়ে পাঁচ উইকেট শিকারি বাকিরা স্পিনার। দুবার এই স্বাদ পেয়েছেন অ্যাশটন অ্যাগার। একবার করে অ্যাডাম জ্যাম্পা ও ম্যাথু শর্ট, যিনি মূলত টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান।
অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং ইনিংসকে ভাগ করা যায় দুই ভাগে। স্রেফ ৩.১ ওভারে বিনা উইকেটে পঞ্চাশ ছুঁয়ে ফেলার পর পথ হারিয়ে ফেলে তারা। উড়ন্ত শুরুর পরও সংগ্রহটা তাই বড় হয়নি তাদের।
দারুণ বোলিংয়ে স্বাগতিকদের দেড়শর নিচে আটকে রাখেন হারিস রউফ, আব্বাস আফ্রিদি ও সুফিয়ান মুকিম। এই তিন জন মিলে ১২ ওভারে ৬০ রানে নেন ৯ উইকেট। আবার শাহিন শাহ আফ্রিদি ও নাসিম শাহ মিলে ৮ ওভারে ৮৩ রান দিয়ে পাননি কোনো উইকেট।
রান তাড়ায় বিস্ময়করভাবে প্রথম ৯ ওভারে কোনো বাউন্ডারিই পায়নি পাকিস্তান! ১০ ওভারের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলা দলকে লড়াইয়ে রাখেন উসমান খান ও ইরফান খান। উসমান ফিফটি করে ফেরার পর লড়াই চালিয়ে যান ইরফান। তবে জয় এনে দিতে পারেননি তিনি।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ওভারেই শাহিন আফ্রিদিকে তিনটি চার ও একটি ছক্কা মারেন জেইক ফ্রেজার-ম্যাকগার্ক। পরের ওভারে নাসিমকে একটি করে চার ও ছক্কা মারেন শর্ট।
প্রথম ২ ওভারে আসে ৩৭ রান। এই সংস্করণে প্রথম ২ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার যা সর্বোচ্চ।
প্রথম ৩ ওভারে রান আসে ৪৮। পরের ওভারে রউফ আক্রমণে আসার পরই পাল্টে যায় চিত্র। ওভারের শেষ তিন বলের মধ্যে ফ্রেজার-ম্যাকগার্ক (৯ বলে ২০) ও জশ ইংলিসকে ফিরিয়ে দেন দেন তিনি।
পরের ওভারে আব্বাস আফ্রিদির শিকার হয়ে ফেরেন শর্ট। তার ১৭ বলে ৩২ রানের ইনিংসই শেষ পর্যন্ত হয়ে থাকে অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ।
দুইবার জীবন পেয়ে মার্কাস স্টয়নিস ফেরেন ১৫ বলে ১৪ রান করে। ইনিংস বড় করতে পারেননি গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (২০ বলে ২১) ও টিম ডেভিডও (১৯ বলে ১৮)।
পাকিস্তানের ফিল্ডারদের একের পর এক ক্যাচ ছাড়ার পরও নিয়মিত উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়া দেড়শর কাছাকাছি যেতে পারে অ্যারন হার্ডির ২৩ বলে ২৮ রানের সৌজন্যে।
রউফ ২২ রানে নেন ৪ উইকেট। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে এই সংস্করণে সেরা বোলিং এটি। পাকিস্তানের হয়ে এই সংস্করণে সবচেয়ে বেশি উইকেটের রেকর্ডে শাদাব খানের পাশেও বসেছেন তিনি, দুজনেরই ১০৭টি করে।
লক্ষ্য তাড়ায় দ্বিতীয় ওভারে বাবর আজমকে হারায় পাকিস্তান। প্রথম ওভারে খরুচে বোলিংয়ের পর নিজের পরের ওভারে শাহিবজাদা ফারহানকে ফিরিয়ে শিকার ধরা শুরু করেন জনসন।
দশম ওভারে বোলিংয়ে ফিরে পরপর দুই বলে তিনি ফিরিয়ে দেন মোহাম্মদ রিজওয়ান ও সালমান আলি আগাকে। রিজওয়ান ১৬ রান করতে খেলেন ২৬ বল।
পাকিস্তানের স্কোর তখন ৪ উইকেটে ৪৪। সেখান থেকে আশা জাগিয়ে তোলেন উসমান ও ইরফান। পঞ্চম উইকেটে দুজনে গড়েন পঞ্চাশোর্ধ জুটি।
শেষ ৫ ওভারে পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ৪৭ রান। ষোড়শ ওভারে এসে উসমানকে (৩৮ বলে ৫২) ফিরিয়ে ৩৫ বলে ৫৮ রানের জুটি ভাঙেন জনসন। এক বল পর আব্বাস আফ্রিদিকে ফিরিয়ে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন তিনি।
পরের ওভারে দুই শিকার ধরেন লেগ স্পিনার জ্যাম্পা। অষ্টাদশ ওভারে ন্যাথান এলিসকে ২ চার ও এক ছক্কায় সম্ভাবনা জিইয়ে রাখেন ইরফান।
শেষ ওভারে দরকার ছিল ১৬ রান। পকিস্তান যেতে পারেনি কাছাকাছিও। রুউফের রান আউটে দুই বল বাকি থাকতেই অল আউট হয়ে যায় তারা।
ইরফান অপরাজিত থাকেন ২৮ বলে ৩৭ রানে।
আগামী সোমবার হোবার্টে হবে শেষ ম্যাচ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া: ২০ ওভারে ১৪৭/৯ (শর্ট ৩২, ফ্রেজার-ম্যাকগার্ক ২০, ইংলিস ০, ম্যাক্সওয়েল ২১, স্টয়নিস ১৪, ডেভিড ১৮, হার্ডি ২৮, বার্টলেট ৫, এলিস ১*, জনসন ০, জ্যাম্পা ০*; শাহিন আফ্রিদি ৪-০-৩৯-০, নাসিম ৪-০-৪৪-০, রউফ ৪-০-২২-৪, আব্বাস আফ্রিদি ৪-০-১৭-৩, মুকিম ৪-০-২১-২)
পাকিস্তান: ১৯.৪ ওভারে ১৩৪ (রিজওয়ান ১৬, বাবর ৩, ফারহান ৫, উসমান ৫২, সালমান ০, ইরফান ৩৭*, আব্বাস আফ্রিদি ৪, শাহিন আফ্রিদি ০, নাসিম ০, মুকিম ০, রউফ ২; জনসন ৪-০-২৬-৫, বার্টলেট ৪-০-১৮-১, স্টয়নিস ৩-০-২৭-০, জ্যাম্পা ৪-০-১৯-২, এলিস ৩.৪-০-৩০-০, ম্যাক্সওয়েল ১-০-১১-০)
ফল: অস্ট্রেলিয়া ১৩ রানে জয়ী
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে প্রথম দুটির পর ২-০তে এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া
ম্যান অব দা ম্যাচ: স্পেন্সার জনসন