নিয়মিত এসব স্বীকৃতির বাইরে বিশেষ একটি পুরস্কার দেওয়া হবে কদিন আগে অবসর নেওয়া রাভিচান্দ্রান অশ্বিনকে।
Published : 31 Jan 2025, 09:52 PM
ভারতের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার হিসেবে সাচিন টেন্ডুলকারকে একবাক্যে মানেন সম্ভবত প্রায় সবাই। জীবন্ত কিংবদন্তি হিসেবে তার মর্যাদার একটি আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি মিলতে যাচ্ছে। ভারতের ক্রিকেট বোর্ড-বিসিসিআইয়ের আজীবন সম্মাননা পুরস্কার পাচ্ছেন সর্বকালের সফলতম আন্তর্জাতিক ব্যাটসম্যান। এই স্বীকৃতির কেতাবি নাম- ‘কর্নেল সিকে নাইডু লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড।’
বিসিসিআইয়ের বার্ষিক অ্যাওয়ার্ড আয়োজনে শনিবার এটি গ্রহণ করবেন টেন্ডুলকার। এমনিতে এই অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ থাকে বর্ষসেরা ক্রিকেটার। তবে টেন্ডুলকারের বিশালত্ব এতটাই যে, এবার তার আলোয় ম্লান অন্য সবাই বা সবকিছু।
ছেলেদের ক্রিকেটে বর্ষসেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার ‘পলি উমরিগার ট্রফি’ পাচ্ছেন জাসপ্রিত বুমরাহ। কয়েকদিন আগে আইসিসির বর্ষসেরা ক্রিকেটারের খেতাব জিতেছেন এই ফাস্ট বোলার। নিজ দেশের সেরা হওয়াটা তাই অনুমিতই ছিল। গত বছর ভারতের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ে তার ছিল বড় অবদান। এছাড়াও দেশের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জয়ে ভূমিকা রাখাসহ দুর্দান্ত বোলিং করেছেন তিনি বছরজুড়েই।
ভারতের বর্ষসেরা নারী ক্রিকেটারের পুরস্কার পাচ্ছেন স্মৃতি মান্ধানা। বাঁহাতি এই ওপেনার আইসিসি অ্যাওয়ার্ডে জিতেছিলেন বর্ষসেরা ওয়ানডে ক্রিকেটারের খেতাব। সব সংস্করণ মিলিয়ে ভারতের সেরা ব্যাটার ছিলেন তিনি গত বছর। বিশেষ করে, ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজে তার পারফরম্যান্স ছিল অসাধারণ। চেন্নাইয়ে টেস্ট ম্যাচে ১৪৯ রানের ইনিংস খেলার পর স্টাইলিশ এই ব্যাটার ওয়ানডে সিরিজের তিন ম্যাচে খেলেন ১১৭, ১৩৬ ও ৯০ রানের ইনিংস।
ভারতীয় ক্রিকেটে অবদানের জন্য বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হবে সদ্য অবসর নেওয়া রাভিচান্দ্রান অশ্বিনকে। ২০১১ সালে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেকের পর এক যুগের বেশি সময় ধরে দুর্দান্ত ধারাবাহিকতায় ভারতের টেস্ট ইতিহাসের দ্বিতীয় সফলতম বোলার তিনি। দেশের মাঠে টেস্ট ক্রিকেটে ১২ বছর ধরে ভারতের ১৮টি সিরিজে অপরাজেয় থাকার পেছনে মূল কারিগরদের একজন ছিলেন এই অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেরা অভিষেকের পুরস্কারটি পাচ্ছেন সারফারাজ খান। গত ফেব্রুয়ারিতে অভিষেকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে রাজকোটে দুই ইনিংসেই আগ্রাসী ফিফটি উপহার দিয়েছিলেন মুম্বাইয়ের ব্যাটসম্যান।
নারী ক্রিকেটে সেরা আন্তর্জাতিক অভিষেকের জন্য পুরস্কৃত হবেন আশা সোভানা। গত জুনে ওয়ানডে অভিষেকে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২১ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন এই অফ স্পিনার।
পুরস্কারের জন্য বিবেচিত সময়ে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ উইকেটের জন্য একটি ট্রফি পাবেন অফ স্পিনার দিপ্তি শার্মা।
ঘরোয়া ক্রিকেটে সেরা পারফরম্যান্সের স্বীকৃতি পাচ্ছেন তানুশ কোটিয়ান। গত মৌসুমে মুম্বাইয়ের রাঞ্জি ট্রফি জয়ে এই অফ স্পিনিং অলরাউন্ডারের ছিল মহামূল্য অবদান। ১০ ম্যাচ ৫০২ রান করার পাশাপাশি ২৯ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। অশ্বিনের অবসরের পর বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির ভারতীয় দলেও যোগ করা হয়েছিল ২৬ বছর বয়সী অলরাউন্ডারকে।
তবে সব পুরস্কার ছাপিয়ে টেন্ডুলকারের ওপরই থাকবে বেশি আলো। ভারতের প্রথম অধিনায়ক সিকে নাইডুর সম্মানে এই আজীবন সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে ১৯৯৪ সাল থেকে। টেন্ডুলকারের আগে ৩০ জন পেয়েছেন এই স্বীকৃতি।
টেন্ডুলকারের ক্রিকেট ক্যারিয়ার আর অর্জন নিয়ে বলার বাকি আছে সামান্যই। ছেলেবেলা থেকেই মুম্বাইয়ের ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের বন্যা বইয়ে দিয়ে পরে ঘরোয়া ক্রিকেট রাঙিয়ে মাত্র ১৬ বছর বয়সেই তিনি পা রাখেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। প্রতিভা ও সম্ভাবনার সবটুকু পূর্ণতা দিয়ে দুই যুগের বেশি সময় অসংখ্য রেকর্ড ও মাইলফলক গড়ে, অনেক অনন্য অর্জনকে সঙ্গী করে, ক্রিকেট খেলাটিকেই নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়ে তিনি অবসর নেন ২০১৩ সালে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি করা একমাত্র ব্যাটসম্যান তিনি। সবচেয়ে বেশি ৬৬৪টি ম্যাচ খেলার রেকর্ড তার। ১০০ সেঞ্চুরির মতোই তার ৩৪ হাজার ৩৫৭ রানের ধারেকাছে নেই আর কোনো ব্যাটসম্যান। ভারতের ২০১১ বিশ্বকাপ জয়েও তার ছিল বড় অবদান।