“হাই কোর্টের নিষেধাজ্ঞা ও সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে গিয়ে ভবনটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে।”
Published : 21 Mar 2024, 06:27 PM
ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের প্রায় দুইশ বছর বয়সী ভবন ভাঙার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে পুরান ঢাকার ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করা সংগঠন আরবান স্টাডি গ্রুপ-ইউএসজি।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় ভাঙা ভবনের সামনেই এ কর্মসূচি আয়োজন করা হয়।
অবিভক্ত ভারতের প্রথম সরকারি স্কুল হিসেবে ১৮৩৫ সালের ১৫ জুলাই ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৮৯ বছর বয়সী শিক্ষালয়টি ঢাকার সদরঘাটে ১ নম্বর লয়াল স্ট্রিটে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়াল ঘেঁষে অবস্থিত।
আরবান স্টাডি গ্রুপের প্রধান নির্বাহী তাইমুর ইসলাম বলেন, “প্রচুর প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ভেঙে ফেলা হচ্ছে। কলেজিয়েট স্কুলের ভবনের বিরাট ঐতিহ্য রয়েছে। এটা ইংরেজ আমলে গেস্ট হাউজ হিসেবে ব্যবহার করা হতো।
“হাই কোর্টের নিষেধাজ্ঞা ও সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে গিয়ে ভবনটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। সরকার একদিকে বলছে- প্রত্নতত্ত্ব সংরক্ষণ করার কথা, আবার অন্যদিকে এসব ঐতিহ্য ভেঙে ফেলছে। এভাবে সরকার আমাদের সঙ্গে বেঈমানি করতে পারে না।”
তাইমুর বলেন, “দুবছর আগে এটা ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছিল, কিন্তু তোপের মুখে পিছু হটে তারা। এখন এই ভবনসহ পুরান ঢাকার ২২০০ ভবন ভাঙার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এটা ভাঙা হচ্ছে।”
স্কুলটির সাবেক শিক্ষার্থী মেজবাহুল হক বলেন, “আমি মনে করি, এসব পুরাতন ভবন না ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ করা সম্ভব। আমরা চাই, এই ধ্বংসযজ্ঞ অনতিবিলম্বে বন্ধ করে এই ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করা হোক।”
আরবান স্টাডি গ্রুপের সদস্য রহিম ফরায়েজী বলেন, “এটি শুধুমাত্র একটি ভবন নয়। এর সাথে মিশে আছে শত বছরের হাজারো ইতিহাস। ভবন ধ্বংসের সাথে সাথে ভবনের ইতিহাসও মুছে ফেলা হচ্ছে। আগামী প্রজন্ম জানতেই পারবে না যে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল নামে একটি প্রাচীন স্কুল ছিল।
“আহসান মঞ্জিল যেভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে, সারা বিশ্বে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংরক্ষণ করা হচ্ছে, এটা আরো ১০০ বছর ব্যবহার করা সম্ভব। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান করছি।”
বর্তমান এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মোহন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখানে আমার ছেলেসহ অনেকের সন্তানরাই পড়াশোনা করেন। খেলার ছলে অনেকেই পরিত্যক্ত এই ভবনে ওঠে। ইট খসে পড়ে যদি একটা দুর্ঘটনা হয়, তাহলে এর দায়ভার নেবে কে? আমি সাধুবাদ জানাই ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবনটি ভাঙার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
সরেজমিনে দেখা গেছে, ২০ থেকে ৩০ জন শ্রমিক দ্বিতল ভবনটি ভাঙার কাজ করছেন। তারা দ্বিতীয় তলার ছাদসহ দরজা ও জানালা ভাঙছেন। কয়েকদিন ধরে ভবন ভাঙার কাজ করছেন বলে তারা জানিয়েছেন।
শ্রমিক রুহুল মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের কাজ শুধু ভবনটিকে ভেঙে ফেলা। আমরা তিন মাসের সময় নিয়েছি। এর মধ্যে এটা সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলতে পারব।”
আরেক শ্রমিক মেহেদী হোসেন বলেন, “দরজা জানালা ভাঙার কাজ প্রায় শেষ। এখন আমরা দ্বিতীয়তলা ভাঙছি। দ্বিতীয় তলার কাজ শেষ হলে আমরা নিচতলা ভাঙ্গা শুরু করবো। ভাঙার পর ভবনের যে জিনিসপত্র, সেগুলো পিকআপে করে নিয়ে যাব।”