বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে পাঁচ দাবি নিয়ে মঙ্গলবার বসবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, এমন সিদ্ধান্তে সচিবালয়ের সামনের সড়ক ছাড়েন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
Published : 11 Nov 2024, 07:40 PM
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ সেনাবাহিনীর নিকট হস্তান্তরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামের তিন দিন সময় চাওয়ার প্রেক্ষাপটে সচিবালয়ের সামনের অবস্থান থেকে সরে গেছেন শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার এ নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারী প্রতিনিধি দলের একজন মাসুদ রানা।
সোমবার দুপুরে পাঁচ দফা দাবি আদায়ে প্রথমে শিক্ষা চত্বর অবরোধ এবং পরে শিক্ষা সচিব দেখা না করলে সচিবালয় ঘেরাও করেন পুরান ঢাকায় অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
সচিবালয়ের ফটকের সামনের সড়কে শিক্ষার্থীদের অবস্থানের পর সেখানে আসেন তথ্য ও সম্প্রচার এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তিনি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। এরপর আন্দোলনকারীদের একটি প্রতিনিধি দল সচিবালয়ে যান।
নাহিদ বলেন, “আপনাদের যে দাবিগুলো ইউজিসির পাইলট প্রকল্পে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে যুক্ত করা এবং ঠিকাদারির বিষয়টা বলছেন সেনাবাহিনীকে দিতে হবে। আপনারা যে দাবিগুলো করছেন আমরা অবশ্যই সেগুলোকে পূরণ করবো। তিন দিনে নিশ্চয়ই হল তৈরি করা সম্ভব না, কিন্তু তিন দিনে আমরা নতুন ক্যাম্পাসের দায়িত্ব হস্তান্তরটা করতে পারি। সেই তিন দিন সময়টা আমাকে দিতে হবে।
”জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্ব ছিল তাদের শিক্ষার্থীদের সকল দাবি দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা। আমি দুঃখ প্রকাশ করছি আজকে আপনাদেরকে এখানে আসতে হয়েছে এবং যথাযথ সম্মান দেওয়া হয়নি।”
শিক্ষা সচিব আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা না বলার প্রসঙ্গে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ”আমরা বার বার বলেছি এই আমলাতন্ত্র, এই সচিবালয় যেন ভুলে না যায় কাদের রক্তে, কাদের আত্মত্যাগে আজকে তারা এখানে বসেছে। ফলে শিক্ষার্থীদের সেই যথাযথ সম্মান কিন্তু দিতে হবে।
”বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অযৌক্তিক দাবি নিয়ে আমাদের কাছে আসছে না, বরং তারা আসার আগেই যে দাবিগুলো পূরণ হচ্ছে না এটাই তো আমাদের ব্যর্থতা। যারা শিক্ষার্থীদের সাথে দুর্ব্যবহার করেছে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অবশ্যই সে তার কৃত কর্মের জন্য দুঃখ প্রকাশ করবে, ক্ষমা চাইবে।”
সচিবালয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক এম আমিনুল ইসলাম এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সিদ্দিক জোবায়েরের বৈঠক হয়। এতে তথ্য উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম।
সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক রইস উদ্দিন, প্রক্টর অধ্যাপক তাজেম্মুল হক, ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাছিরউদ্দিন, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি ও আন্দোলনের মুখপাত্র তৌসিফ মাহমুদ সোহান, সংগঠক এ কে এম রাকিব উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক থেকে বের হয়ে এসে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি দলের একজন মাসুদ রানা বলেন, বৈঠকে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের নির্মাণের কাজ সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিতে বিস্তারিত আলোচনার জন্য মঙ্গলবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আলোচনা হবে।
এরপর সচিবালয় থেকে প্রতিনিধি দল বের হয়ে এলে বিকেল ৫টার পর তারা অবরোধ তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে চলে যান।
এর আগে দুপুরে ইউজিসি প্রস্তাবিত পাইলট প্রকল্পে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্তর্ভুক্তি, নতুন ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তরসহ পাঁচ দাবিতে প্রায় দুই ঘণ্টা শিক্ষা চত্বর অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা।
অবরোধের এক ঘণ্টা পর ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল তাদের দাবির স্মারকলিপি নিয়ে শিক্ষা সচিবের সঙ্গে দেখা করতে সচিবালয়ে প্রবেশ করতে যান।
কিন্তু শিক্ষা সচিব দেখা না করায় প্রায় দুই ঘণ্টা শিক্ষা চত্বর অবরোধের পর দুপুর ২টা ২০ মিনিটে সচিবালয়ের ফটকের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষা চত্বর যানজট মুক্ত হলেও সচিবালয়ের সম্মুখ সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়।
প্রতিনিধি দলের একজন ও আন্দোলনের মুখপাত্র পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তৌসিব মাহমুদ সোহান বলেন, “আমরা প্রাথমিকভাবে সচিবের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সচিব নিজে দেখা না করে প্রতিনিধি পাঠিয়েছে আমাদের সঙ্গে কথা বলতে। আমরা এটা মানি না। এখন আমাদের দাবি শিক্ষা উপদেষ্টা এসে আমাদের দাবি শুনতে হবে। তাই আমরা সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছি। আমরা শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ চাই।”
প্রতিনিধিদের আরেকজন নওশিন নওয়ার জয়া বলেন, ”প্রতিনিধি পাঠিয়ে আমাদের দাবি তাদের কাছে দিতে বলা হয়েছে। আমাদেরকে ভেতরে যেতে দেওয়া হয়নি। সচিব জানিয়েছেন, তার সময় নেই আমাদের সাথে কথা বলার। উপদেষ্টা আসার আগ পর্যন্ত আমরা এখানে অবস্থান করব। আমরা যেহেতু একবার বের হয়ে এসেছি আমরা আর ভেতরে গিয়ে কথা বলব না। শিক্ষা উপদেষ্টাকে আমাদের সামনে আসতে হবে।”
শিক্ষার্থীদের ৫ দাবি হল- প্রকল্প পরিচালককে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং সাত দিনের মধ্যে সেনাবাহিনীর দক্ষ অফিসারদের হাতে এই দায়িত্ব অর্পণ করতে হবে; শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সুনির্দিষ্ট রূপরেখাসহ ঘোষণা করতে হবে যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর হয়েছে; অবিলম্বে বাকি ১১ একর জমি অধিগ্রহণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং পুরাতন ক্যাম্পাস নিয়ে আগের সব চুক্তি বাতিল করতে হবে; সম্প্রতি ইউজিসির ঘোষণা করা পাইলট প্রকল্পে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক বাজেট সর্বনিম্ন ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে হবে।
দাবি নিয়ে শিক্ষা ভবনের সামনে জগন্নাথ শিক্ষার্থীরা, যানজট
জবির দ্বিতীয় ক্যাম্পাস: উপাচার্যের ওপর আস্থা রাখতে বলল ছাত্রদল