“মৌখিকভাবে ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে; পরে সিন্ডিকেটে এ সিদ্ধান্ত পাস করা হবে,” বলেন কোষাধ্যক্ষ।
Published : 13 Aug 2024, 06:22 PM
শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধের ‘মৌখিক’ ঘোষণা দিয়েছেন উপাচার্যহীন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর চৌধুরী।
মঙ্গলবার সকালে উপাচার্যের সভা কক্ষে বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগের চেয়ারম্যান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি একথা বলেন।
উপাচার্যহীন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোষাধ্যক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন কিনা, এমন প্রশ্নে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় আইনে বলা আছে- উপাচার্যের শূন্য পদে নবনিযুক্ত উপাচার্য কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত, আচার্যের ভিন্নরূপ সিদ্ধান্ত না থাকা সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ভাইস-চ্যান্সেলরের চলতি দায়িত্ব পালন করবেন। তারপরেও আমি যে সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছি তা শিক্ষার্থীদের ভালোর জন্য।
“আজকের সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে মৌখিকভাবে ক্যাম্পাসের ভেতর শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পরবর্তীতে এই সিদ্ধান্ত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পাস করা হবে।”
কোষাধ্যক্ষ বলেন, “এখন আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক বলতে উপাচার্য নেই। আবার রেজিষ্ট্রার ও প্রক্টরিয়াল বডিও পদত্যাগ করেছে। কোষাধ্যক্ষ হিসেবে আজকের সভায় আমিসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন, চেয়ারম্যান ও অনেক সিনিয়র শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।”
ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ ছাড়াও আরও চারটি দাবি তুলে ধরেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও অন্যান্য শিক্ষার্থীরা।
এগুলো হল- নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষিকা কামরুন্নাহার লিপিকে স্থায়ী বহিষ্কার করতে হবে। ক্যাম্পাসের সামনে সব লেগুনা/বাস স্ট্যান্ড বন্ধ করতে হবে। সবশেষ ‘ছাত্রলীগের ২৩ নিয়োগসহ দলীয় নিয়োগ’ বাতিল করতে হবে। ১৮ অগাস্ট থেকে সশরীরে ক্লাস শুরু করতে হবে।
পাঁচটি দাবি বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বুধবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তবে তাৎক্ষণিকভাবে ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধে মৌখিক ঘোষণা ও ১৮ অগাস্ট থেকে সশরীরে ক্লাস শুরু করার সিদ্ধান্ত দেন কোষাধ্যক্ষ।
এ দুটি বিষয়ে বৈঠকে উপস্থিত অনুষদের ডিন, বিভাগের চেয়ারম্যান ও ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টারা সম্মতি জানান। অন্য দাবিগুলোর বিষয়ে ‘সুষ্ঠু সমাধানের’ আশ্বাস দেন কোষাধ্যক্ষ।
নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কামরুন্নাহার লিপির স্থায়ী বহিষ্কার দাবির প্রসঙ্গে শিক্ষার্থীরা বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় কামরুন্নাহার লিপি ফেইসবুকে ‘আন্দোলনবিরোধী পোস্ট’ ও শিক্ষার্থীদের 'সুইপার' বলে কটূক্তি করেছিলেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সমন্বয়ক নূর নবী বলেন, “ক্যাম্পাসে সকল ধরনের রাজনীতি আজ থেকে বাতিল ঘোষণা করার জন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা। রাজনীতি করার অধিকার সকলের আছে, তবে ক্যাম্পাসের গেইট দিয়ে প্রবেশ করা মাত্র তাকে শুধুএকজন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও একজন ছাত্র হিসেবেই প্রবেশ করতে হবে।
“তারা চাইলে ক্যাম্পাসের বাইরে রাজনীতি করতেই পারে। আমাদের দাবির সবগুলোই মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও ব্যক্ত করেছেন বৈঠকে থাকা কোষাধ্যক্ষ, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, চেয়ারম্যান ও ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টারা।”
এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রক্টরিয়াল বডি, হল প্রভোস্ট, ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক এবং রেজিস্ট্রারকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করার আল্টিমেটাম দিয়ে মোট ১৩ দফা দাবি ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা। পরে রোববার সন্ধ্যায় উপাচার্য অধ্যাপক সাদেকা হালিমসহ রেজিস্ট্রার, প্রক্টরিয়াল বডি পদত্যাগ করেন।
পরদিন সোমবার ছাত্রীহল প্রাধ্যাক্ষ অধ্যাপক দীপিকা রানী সরকার ও পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক সিদ্ধার্থ ভৌমিক পদত্যাগপত্র জমা দেন।