গবেষণার জন্য নাসার অনুদান পেলেন ওয়াহিদুল হাসান ও তার দল

ভুট্টার ডাঁটার অবশিষ্টাংশ ব্যবহার করে ব্যাটারির অভ্যন্তরীণ রসায়নে পরিবর্তন ঘটিয়ে জনপ্রিয় লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির দ্বিগুণ বৈদ্যুতিক চার্জ ধারণ করতে প্রাথমিক সাফল্য পেয়েছেন তারা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 April 2023, 12:00 PM
Updated : 17 April 2023, 12:00 PM

মহাকাশে ব্যবহারোপযোগী নতুন প্রজন্মের ব্যাটারি প্রযুক্তির গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার কাছ থেকে সাড়ে ৭ লাখ ডলার অনুদান পেয়েছেন ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি)' এর প্রাক্তন শিক্ষার্থী মো. ওয়াহিদুল হাসান ও তার দল। 

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইইউবি জানায়, সম্প্রতি নাসার এসটাবলিশড প্রোগ্রাম টু স্টিমুলেট কম্পিটেটিভ রিসার্চ (ইপিএসসিওআর) কর্মসূচির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ডাকোটা মাইনস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা দলটিকে এই অনুদান দেওয়া হয়। 

নতুন এই প্রযুক্তিতে ভুট্টার ডাঁটার অবশিষ্টাংশ ব্যবহার করে ব্যাটারির অভ্যন্তরীণ রসায়নে পরিবর্তন ঘটিয়ে জনপ্রিয় লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির দ্বিগুণ বৈদ্যুতিক চার্জ ধারণ করতে প্রাথমিক সাফল্য পেয়েছেন তারা। 

আইইউবির ইলেক্ট্রিকাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়া ওয়াহিদ ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ডাকোটা মাইনস বিশ্ববিদ্যালয়ে সলিড স্টেট লিথিয়াম-সালফার ব্যাটারি এবং ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল এনার্জি স্টোরেজ বিষয়ে পিএইচডি করতে যোগ দেন। বর্তমানে পিএইচডি গবেষণার পাশাপাশি সেখানে তিনি গবেষণা সহকারী হিসেবে কর্মরত। 

নাসা'র ওয়েবসাইটের বরাত দিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নতুন ধরনের লিথিয়াম-সালফার ব্যাটারি প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করার জন্য সাউথ ডাকোটা স্কুল অফ মাইনস বিশ্ববিদ্যালয়কে ওই অনুদান দেওয়া হয়েছে। এই লিথিয়াম-সালফার ব্যাটারি লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির চেয়েও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন। নাসার পাওয়ার রকেট এবং অন্যান্য মহাকাশযানে চড়ে চাঁদে বা মঙ্গল গ্রহে ভ্রমণ বা অবস্থানের ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা যাবে। 

ওয়াহিদ বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি মাথায় রেখে পরিবেশ-বান্ধব বৈদ্যুতিক যানবাহনের ব্যবহার বাড়ানোর দিকে বিশেষ মনোযোগ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। আমরা যে প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছি, সেটি একদমই নতুন। এখনো প্রচুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাকি রয়েছে। তবে সকল পরীক্ষা শেষে চূড়ান্ত সাফল্য যদি অর্জন করা যায়, তাহলে বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে জ্বালানি সাশ্রয়ে, বিশেষ করে পরিবহন খাতে এই প্রযুক্তি ব্যপক ভূমিকা রাখতে পারবে।”

তিনি বলেন, “সালফার একটি জৈবিক মৌলিক পদার্থ যা প্রকৃতি থেকেই সরাসরি প্রচুর পরিমাণে আহরণ করা যায়। এর সাথে যেহেতু আমরা ভুট্টার ডাঁটার অবশিষ্টাংশ ব্যবহার করছি, সুতরাং সবদিক বিবেচনায় এটি একটি নবায়নযোগ্য জ্বালানি-নির্ভর প্রযুক্তি। তাই এটি একইসঙ্গে পরিবেশবান্ধবও বটে।” 

পিএইচডি এবং লিথিয়াম-সালফার ব্যাটারি প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি, ভবিষ্যতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং ব্যাটারির বৈদ্যুতিক চার্জ ধারণক্ষমতা বাড়ানোর ওপর উন্নততর গবেষণার ইচ্ছা আছে ওয়াহিদের। 

এছাড়া বাংলাদেশে একটি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করতে চান ওয়াহিদ, যেখানে নতুন নতুন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করবেন তরুণ প্রযুক্তিবিদ ও বিজ্ঞানীরা। 

এর আগে ২০২১ সালে গবাদিপশুর মূত্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি প্রকল্পের জন্য এলসিভিয়ার ফাউন্ডেশনের ‘কেমিস্ট্রি ফর ক্লাইমেট অ্যাকশন চ্যালেঞ্জ অ্যাওয়ার্ড’ জিতেছিলেন এই তরুণ গবেষক।