Published : 24 Aug 2024, 06:46 PM
দেশের বন্যা উপদ্রুত পূর্বাঞ্চলের মানুষের সহায়তার জন্য তৃতীয় দিনের মতো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে গণত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচি চলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, যার কেন্দ্র হয়ে উঠেছে ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি)।
আগের দুই দিনের ধারাবাহিকতায় শনিবার সকাল থেকে শুরু হওয়া ত্রাণ সংগ্রহ কার্যক্রমে সাড়া দিয়ে ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ আসছেন সেখানে। কেউ নগদ টাকা, কেউ খাদ্যসামগ্রী, কেউবা দিয়ে যাচ্ছেন পোশাক-পরিচ্ছদ।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পূর্বাঞ্চলের প্রায় অর্ধকোটি মানুষের অসীম দুর্ভোগের কথা প্রবাসী বাংলাদেশিদের মনেও নাড়া দিয়েছে। এমন একজন প্রবাসীর স্ত্রী শনিবার টিএসসিতে এসেছিলেন তার স্বামীর পাঠানো কিছু টাকা দিয়ে যেতে।
টিএসসিতে তার সঙ্গে কথা হলে নাম প্রকাশে অনাগ্রহী এই নারী বলেন, “আমার স্বামী প্রবাসে থাকায় এই দুর্যোগ শুনে বিশ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন। সেটা এখানে দিয়ে গেলাম।
“আমার সংগ্রহ থেকে কিছু টাকা এবং প্রতিবেশীদের দেওয়া কিছু টাকাও একত্র করে এখানে (টিএসসি) দিয়ে গেলাম।”
আরও কিছু টাকা জোগাড় করতে পারলে আবার টিএসটিতে এসে গণত্রাণ কর্মসূচিতে সেটা দিয়ে যাওয়ার আগ্রহের কথা তুলে ধরেন ওই নারী।
টিএসসিতে গিয়ে দেখা যায়, গণত্রাণ সংগ্রহ কার্যক্রম ঘিরে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। শিক্ষার্থীদের ডাকে তাদের ওপর আস্থা রেখে সব শ্রেণির মানুষ আসছেন; রিকশাচালক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক- যিনিই আসছেন, কিছু না কিছু দিয়ে যাচ্ছেন।
শুকনো খাবার, সুপেয় পানি, খাবার স্যালাইন, শিশু খাদ্য, পোশাক, মোমবাতিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্রের পাশাপাশি নগদ টাকাও গণত্রাণ কর্মসূচিতে দিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন বয়সি মানুষ। সেগুলো একাধিক টেবিলে ভাগ করে খাতায় লিপিবদ্ধ করে রাখছেন শিক্ষার্থীরা।
বানভাসি মানুষের সাহায্যের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্বতন্ত্রভাবে ক্যাম্পাস এলাকাসহ আবাসিক হলে হলেও তহবিল সংগ্রহ করছেন। বিভাগভিত্তিক কর্মসূচিও অব্যাহত রয়েছে।
গণমানুষের দেওয়া ত্রাণ সংগ্রহ করে শিক্ষার্থীরা প্যাকেটজাত করার জন্য সেগুলো টিএসসির ভেতরের খোলা মাঠে নিয়ে গোছাচ্ছেন। পরে সেখান থেকে ত্রাণসামগ্রী টিএসসির ক্রীড়া কক্ষ ও ক্যাফিটেরিয়ায় নিয়ে রাখছেন তারা।
স্বেচ্ছাসেবীরা দলে দলে বিভক্ত হয়ে কাজ করছেন। একদল বোতলজাত পানি, খাবার স্যালাইন, চিড়া, মুড়ি, বিস্কুটসহ শুকনাজাতীয় বিভিন্ন খাবারের প্যাকেট করছেন। বন্যা উপদ্রুত এলাকায় পৌঁছাতে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে আরেককদল স্বেচ্ছাসেবক হাতে হাতে খাদ্যসামগ্রী কাভার্ডভ্যানসহ মালবাহী গাড়িতে তুলছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহর দেওয়া তথ্যমতে, টিএসসিতে গণত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচি থেকে শনিবার রাত ১০টা পর্যন্ত ১ কোটি ৮ লাখ ২৩ হাজার ৯৪৭ টাকা নগদ সংগ্রহ করা হয়েছে। যার মধ্যে সন্ধ্যার পর থেকে শেষ ৫ ঘণ্টায় আসে ৬৭ লাখ টাকা।
রোববার থেকে বন্যাকবলিত এলাকায় ‘গণরান্না’ কর্মসূচির পরিকল্পনা করছেন জানিয়ে সর্বসাধারণকে শুকনা খাবারের পাশাপাশি চাল, ডাল, তেল, আলু, পেঁয়াজ, লবণ, মসলা নিয়ে আসার অনুরোধ করেছেন তিনি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক গণমাধ্যমকে বলেন, শুক্রবার টিএসসি থেকে ২০টি ট্রাকে নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে ত্রাণ পাঠিয়েছেন তারা। ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করে তারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা চিহ্নিত করেছেন। সেসব জায়গায় ধারাবাহিকভাবে ত্রাণ পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
কর্মসূচির তৃতীয় দিন শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কী পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ হয়েছে, সে বিষয়ে দিনের সংগ্রহ শেষে গণনার পর জানা যাবে বলে তথ্য রয়েছে।