ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম ১ জুলাই থেকে বন্ধ।
Published : 09 Sep 2024, 10:13 PM
প্রায় তিন মাস বন্ধ থাকার পর সেপ্টেম্বরের শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর আশা করছেন উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান।
সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “সবার সাথে কথা বলে আমরা একটা পর্যায়ে এসেছি। আশা করছি, এই মাসের শেষের দিকে কিংবা একটু আগে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের আলোকে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে পারব।”
সার্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিমের বিরোধিতায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কর্মবিরতির কারণে ১ জুলাই থেকে বন্ধ ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম।
এরপর কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতার মধ্যে গত ১৬ জুলাই দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরদিন বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে খালি করা হয় হলগুলো।
এরপর ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার পরদিন আবাসিক হলসহ ক্যাম্পাস খুললেও এখন পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়নি।
সরকার পতনের পর শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ৮ অগাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. মাকসুদুর রহমানসহ প্রক্টরিয়াল বডির সবাই পদত্যাগ করেন। ১০ অগাস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এস মাকসুদ কামাল পদত্যাগ করেন।
এরপর বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষ ও ডিনদের পদত্যাগের হিড়িকে কার্যত অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এর মধ্যে মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বতী সরকারের পক্ষ থেকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস শুরুর ঘোষণা এলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাসেও ফেরেননি।
নতুন উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ ২৮ অগাস্ট উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণের পর এক সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম পুরোদমে চালুর আশ্বাস দিলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।
সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার’ বিষয়ক খসড়া প্রস্তাব প্রকাশ অনুষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে নতুন আশা দেখালেন উপাচার্য।
শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে দেরিই কেন হচ্ছে, তার পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, “শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক করার আগে আমরা সবার সঙ্গে কথা বলে নিচ্ছি। এ কারণে সময় লাগছে।
“আমি মনে করি, এই সময় লাগাটা জরুরি। কারণ, সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করাটার দরকার আছে। এ ধরনের একটি পরিস্থিতি অনেক রক্তের বিনিময়ে এসেছে, এটা বিরাট বড় বিষয়। এমন সুযোগ কাজে না লাগানো হবে বিরাট রকমের ব্যর্থতা। এই ব্যর্থতার দিকে যেন আমরা না যাই, সেজন্য সবার সঙ্গে আলাপ করে নিচ্ছি।”
‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমাজ’ এর ব্যানারে ওই সংস্কার প্রস্তাবে ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা-ভাবনা’ এবং এবং ‘প্রশাসন ও ক্ষমতা কাঠামোর পুনর্বিন্যাস’ নামে দুই পর্বের বহু প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌসের সঞ্চালনায় লিখিত প্রস্তাব পাঠ করেন ড. শাহমান মৈশান, ড. খোরশেদ আলম, ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন ও অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষমতা কাঠামোর জবাবদিহিতা নিশ্চিতে বিভিন্ন পরিচালনা কমিটি এবং উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য, ডিন, প্রভোস্ট ও প্রক্টর নির্বাচনের রূপরেখাও ওই প্রস্তাবে দেন তারা।
ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনে বিশ্লেষণী ক্ষমতা ও বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করা, এক শিক্ষকের অনুপাতে ৪০ শিক্ষার্থী রাখা, দলীয় লেজুড়ভিত্তিক ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করাসহ বিভিন্ন প্রস্তাব অনুষ্ঠানে দেওয়া হয়।
আলোচনা অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা ও আবদুল কাদের বক্তব্য দেন।