“তোমরা একটু যৌক্তিক সময় দাও। অনশন ভাঙার জন্য তোমাদের অনুরোধ করছি,” শিক্ষার্থীদের বলেন উপাচার্য।
Published : 12 Jan 2025, 10:54 PM
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণের অবশিষ্ট কাজ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তর এবং অস্থায়ী আবাসনের দাবিতে চলমান অনশন ভাঙতে উপাচার্যের অনুরোধ প্রত্যাখান করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
এর আগে বিকালে শিক্ষক সমিতির অনুরোধও প্রত্যাখ্যান করে তারা।
সন্ধ্যা ৭টায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ‘একাত্মতা’ পোষণ করে অনশনে যোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রেজাউল করিম। একই সঙ্গে অনশনে বসেন প্রক্টর, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্র কল্যাণ পরিচালকসহ কয়েকজন শিক্ষক।
রোববার সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় প্রায় আধা ঘণ্টা শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আন্দোলনে থাকার পর অনশন ভাঙার অনুরোধ করলে শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করেন, এরপর উপাচার্যসহ শিক্ষকরা চলে যান।
এসময় অনশনরত শিক্ষার্থীদের উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম বলেন, “তোমাদের দাবিগুলো যৌক্তিক। আমরা একবারও তোমাদের বিরোধীতা করিনি, এই দাবিতে আমরা সর্বদা তোমাদের সাথে একাত্মতা পোষণ করেছি। দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের অবশিষ্ট কাজ সেনাবাহিনীকে যে প্রক্রিয়ায় দেয়া যায় সেই প্রক্রিয়ায় এগোচ্ছি।
“তোমাদের সঙ্গে আমাদের একটি ‘কমিউনিকেশন গ্যাপ’ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একত্র হয়ে করব। আমার সঙ্গে শিক্ষা সচিবের কথা হয়েছে। তোমরা একটু যৌক্তিক সময় দাও। অনশন ভাঙার জন্য তোমাদের অনুরোধ করছি।”
এসময় উপাচার্যের অনুরোধ প্রত্যাখান করে অনশনরত শিক্ষার্থী তানজিল বলেন, “আমরা আমাদের যৌক্তিক দাবি নিয়ে অনশনে বসেছি। আমাদের যে তিন দাবি আছে সেগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা অনশন ভাঙব না। আপনারা সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে আমাদের দাবি পূর্ণ করেন।”
অনশনরত আরেক শিক্ষার্থী ফয়সাল মুরাদ বলেন, “যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্দিষ্ট সময় দিতে পারছে না, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এসে যৌক্তিক সময় দিয়ে যাবে, তার পর আমরা অনশন থেকে উঠব।”
রোববার সকাল সাড়ে ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে তিনজন শিক্ষার্থী অনশন শুরু করেন। পরে বেলা ১০টার মধ্যে তাদের সঙ্গে যোগ দেন আরও নয়জন, পরে তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে আরও কিছু শিক্ষার্থী এসে অনশনে বসেন।
সবশেষ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ জন্য শিক্ষার্থী দাবি আদায়ে অনশন কর্মসূচি পালন করছেন।
দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর নিকট হস্তান্তর, পুরান ঢাকার বাণী ভবন ও ড. হাবিবুর রহমান হলের স্টিল বেইজড ভবনের কাজ অবিলম্বে সম্পন্ন এবং আবাসনের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসন ভাতা নিশ্চিতের দাবিতে শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন তারা।
যে কারণে আন্দোলন
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে আবাসিক হলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের মাসব্যাপী আন্দোলনের মুখে কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনের সিদ্ধান্ত জানায় আগের আওয়ামী লীগ সরকার।
অ্যাকাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, আবাসন ব্যবস্থা, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, ক্যাফেটেরিয়া, খেলার মাঠ, চিকিৎসা কেন্দ্র, সুইমিংপুল, লেক নির্মাণসহ উন্নতমানের ক্যাম্পাস তৈরির মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে তেঘরিয়ার পশ্চিমদি মৌজায় ২০০ একর ভূমি অধিগ্রহণের অনুমোদন দেওয়া হয়।
২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর জমির চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় ভূমি মন্ত্রণালয়। ৯ অক্টোবর নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনে ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়নের জন্য প্রকল্প অনুমোদন করে একনেক। এক হাজার ৯২০ কোটি ৯৪ লাখ ৩৯ হাজার টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের অক্টোবরের মধ্যে।
পরের বছর ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি মোট ২০০ একর জমির মধ্যে ১৮৮ দশমিক ৬০ একর জমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বুঝে পায়। কিন্তু এখনও অবশিষ্ট ১১ দশমিক ৪০ একর জমি বুঝে পায়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
গত অগাস্টে ক্ষমতার পালাবদলের পর দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের নির্মাণ কাজের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর হাতে দেওয়াসহ তিন দাবিতে আন্দোলনে নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গত ৫ নভেম্বর তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন।
এরপর ১১ নভেম্বর ইউজিসি প্রস্তাবিত পাইলট প্রকল্পে জগন্নাথের বিষয়টি অন্তর্ভুক্তিসহ ৫ দাবিতে সচিবালয় ‘ঘেরাও করেন’ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
সেদিন শিক্ষা সচিবের সঙ্গে দেখা করতে না পেরে তারা সচিবালয়ের বাইরে অবস্থান নেন। এরপর তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামের তিন দিন সময় চাইলে সচিবালয়ের সামনের অবস্থান থেকে সরে যান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের মুখে পরদিন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের নির্মাণ কাজ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তরে সায় দেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।