“অভিভাবক না থাকলে যেটা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় খুব ভালো চলছে বলা যাচ্ছে না, কোনোমতে চলছে,” বলেন উপ-উপাচার্য।
Published : 20 Aug 2024, 12:30 AM
ক্ষমতার পালাবদলে উপাচার্য, প্রক্টর, হল প্রাধ্যক্ষ ও ডিনদের পদত্যাগের হিড়িকে অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ক্যাম্পাস খুললেও শিক্ষার্থীরা ফিরছেন না ক্লাসে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতার মধ্যে গত ১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়, খালি করা হয় হলগুলো। ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার পরদিন আবাসিক হলসহ ক্যাম্পাস খুললেও এখনও স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমে ফেরেনি।
শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ৮ অগাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. মাকসুদুর রহমানসহ প্রক্টরিয়াল বডির সবাই পদত্যাগ করেন। ১০ অগাস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল পদত্যাগ করেন। এ ছাড়া আগাম অবসরের জন্য আবেদন করেছেন রেজিস্টার প্রবীর কুমার সরকার।
এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম রোকেয়া হল, কবি সুফিয়া কামাল হল, শামসুন্নাহার হল, বিজয় একাত্তর হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ও সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রাধ্যক্ষও পদত্যাগ করেছেন।
সোমবার শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে পদত্যাগ করেছেন কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবদুল বাছির ও চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস রোববার থেকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার নির্দেশ দিলেও ক্লাসে যাননি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
তাদের দাবি, আন্দোলনের সময় যেসব শিক্ষক নিপীড়নকারীদের পক্ষ নিয়েছিলেন, তাদের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসে ফিরবেন না। শিক্ষার্থীদের অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনসহ বিভিন্ন অনুষদে ‘শুদ্ধি অভিযান’ চালাচ্ছেন।
উপাচার্য পদত্যাগ করলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্বে বহাল রয়েছেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম কেমন, কীভাবে চলছে- এমন প্রশ্নে সীতেশ চন্দ্র বাছার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অভিভাবক না থাকলে যেটা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় খুব ভালো চলছে বলা যাচ্ছে না। কোনোমতে চলছে। অফিসের ফাইলপত্র অনেক আটকে আছে। বিভিন্ন জায়গায় অনেক সমস্যা হচ্ছে।”
পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ আমরা শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরানোর চেষ্টা করছি। উপাচার্য নিয়োগ হলে শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়ে যাবে।”
ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি চান না শিক্ষার্থীরা
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে উত্তেজনার মধ্যে গত ১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবকটি হলে 'ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ' ঘোষণার অঙ্গীকারনামায় প্রাধ্যক্ষদের স্বাক্ষর নেন শিক্ষার্থীরা।
সেদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষের পর মধ্যরাতে ছাত্রলীগ নেতাদের অনেকের কক্ষ ভাঙচুর করে, তাদের হল থেকে বের করে দিয়ে শিক্ষার্থীরা এসব অঙ্গীকারনামায় প্রধ্যক্ষদের স্বাক্ষর আদায় করেন।
সরকার পতনের পরও ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে ছাত্র সংসদ চালুর দাবি জানান তারা। সোমবার দুপরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ-সমাবেশ থেকে ‘দলীয় ছাত্ররাজনীতি’ নিষিদ্ধের দাবি জানান একদল শিক্ষার্থী। অবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়ারও দাবি জানান তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের শিক্ষার্থী পাবেল আহমেদ বলেন, “আমরা সম্পূর্ণ সুন্দর, রাজনীতি মুক্ত, শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ চাই। আমরা রাজনীতি নিরপেক্ষ প্রশাসন চাই। ছাত্ররাজনীতি থাকুক বলতে ডাকসুর ভিত্তিতে ছাত্র রাজনীতি থাকুক। কিন্তু দলীয় লেজুড়বৃত্তিক দল এসব না থাকুক।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানাইজেশন স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড লিডারশিপ বিভাগের ছাত্র মোহাম্মদ নাজিম বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ চাই। যেমন- ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি থাকবে না, মানে কোনো রাজনৈতিক দলের সভা, সমাবেশ নিষিদ্ধ থাকবে ক্যাম্পাসে।
“আমরা এমন প্রশাসন চাই, যেই প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ উন্নয়ন এ কাজ করবে, হলে বৈধ সিট প্রদান করবেন অবিলম্বে। আর আমি ছাত্ররাজনীতি ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ থাকা জরুরি মনে করি শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখতে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সাবিকুন নাহার বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং হলের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন অত্যাবশ্যক। বহিরাগতদের সম্পূর্ণভাবে ক্যাম্পাস থেকে দূরে রাখতে হবে।
“ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি থাকবে না, তা যেই দলেরই হোক না কেন। ডাকসু হবে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের একমাত্র সংগঠন।”