দ্বীপ জেলাটিতে পাওয়া গ্যাসের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিয়ে আলোচনাকালে তিনি এ নির্দেশনা দেন।
Published : 11 Dec 2023, 08:23 PM
ভোলায় পাওয়া প্রাকৃতিক গ্যাসকে কাজে লাগাতে সেখানে একটি সার কারখানা স্থাপনের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে সমীক্ষা চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে দেশের জ্বালানি পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনার এক পর্যায়ে তিনি ভোলায় আবিষ্কৃত গ্যাসের ব্যবহার প্রসঙ্গে এ নির্দেশনা দেন বলে বৈঠক শেষে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এদিন সকালে তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিকালে বৈঠকের বিষয়ে ব্রিফিং করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
তিনি বলেন, বৈঠকে নিয়মিত এজেন্ডার বাইরে সম্প্রতি সিলেট-১০ নম্বর কূপে গ্যাস ও তেল পাওয়ার বিষয়টি অবহিত করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। আলোচনার এক পর্যায়ে ভোলা এলাকায় যে গ্যাস পাওয়া গেছে সেটির কীভাবে সর্বোচ্চ ব্যবহার করা যায় সেটি নিয়েও আলোচনা হয়ে।
এ নিয়ে আলোচনার প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, বৈঠকে জানানো হয় ভোলা থেকে কিছু পরিমাণ গ্যাস সিএনজি আকারে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিল্প কারখানায় দেওয়া হচ্ছে। তবে সেটা পরিমাণে খুব বেশি নয়। সেখানে আরও কিছু করা সম্ভব কি না তা চিন্তা করতে বলা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “ওই আলোচনার সময় ভোলায় একটি সার কারখানা করে ওই গ্যাস ব্যবহার করে সার উৎপাদন করা যায় কি না সেজন্য একটি সমীক্ষা চালাতে প্রধানমন্ত্রী পরামর্শ দিয়েছেন।”
দ্বীপ জেলা ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের শাহবাজপুরে ১৯৯৩-৯৪ সালের দিকে গ্যাসক্ষেত্র খনন শুরু হয়। বর্তমানে সেখানে শাহবাজপুর, ভোলা নর্থ ও ইলিশা নামে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে। এসব গ্যাসক্ষেত্রে অন্তত নয়টি কূপে গ্যাসের সন্ধান মিলেছে।
রাষ্ট্রীয় খনিজসম্পদ অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শোয়েব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ভোলায় বর্তমানে যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র ও শিল্প কিংবা আবাসিক সংযোগ রয়েছে তাতে দৈনিক ৮৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ব্যবহার করা যাচ্ছে। আরও ৮০ মিলিয়ন গ্যাস সরবরাহ করার সক্ষমতা এ মুহূর্তে সেখানে রয়েছে।
বর্তমানে সিলেট, আশুগঞ্জ, নরসিংদী, জাপালপুর ও চট্টগ্রামে যেসব সার কারখানা রয়েছে তা গ্যাস সংকট ও যান্ত্রিক দক্ষতার অভাবে পুরো সক্ষমতায় ইউরিয়া সার উৎপাদন করতে পারছে না। ফলে চাহিদা মেটাতে প্রতিবছর চড়া দামে বিদেশ থেকে সার আমদানি করতে হয়।
অন্যদিকে ভোলার গ্যাসকে কাজে লাগাতে প্রয়োজনে পাইপলাইন নির্মাণ করে তা খুলনা অঞ্চলে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা আলোচনায় রয়েছে। পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগে ভোলার গ্যাসকে সিএনজিতে রূপান্তর করে তা ময়মনসিংহ অঞ্চলের শিল্প সংযোগে সরবরাহ করার বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন। তবে এর বাইরেও ভোলায় শিল্প কারখানা ও সার কারখানা স্থাপন করে গ্যাসের ব্যবহারের পরামর্শ এতদিন বিশেষজ্ঞরা দিয়ে আসছিলেন।
মাদারগঞ্জে চীনা বিনিয়োগে সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রে
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বৈঠকে চীনের ক্রিক (সিআরইসি) ইন্টারন্যাশনাল রিনিউয়েবল এনার্জি লিমিটেড এবং বাংলাদেশের বিপিডিবি ও আরইবির যৌথ মালিকানাধীন কোম্পানি বি-আর পাওয়ারজেন লি. (বিআরপিএল) এর যৌথ উদ্যোগে মাদারগঞ্জ সোলার পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড নামের একটি যৌথ ভেঞ্চার কোম্পানি চালুর প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে।
এ কোম্পানি জামালপুরের মাদারগঞ্জে ৩০০ একর জমিতে ১০০ মেগাওয়াটের একটি সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করবে। ২০ বছর মেয়াদি ওই প্রকল্পে বাংলাদেশের ৩০ শতাংশ এবং চীনের ৭০ শতাংশ মালিকানা থাকবে। এই প্রকল্পের জন্য যে ঋণ নেওয়া হবে সেটার গ্যারান্টর হবে চীন।
ভোলায় আরও এক কূপে গ্যাস, দৈনিক মিলবে ২ কোটি ঘনফুট
ভোলায় ইলিশা কূপের তৃতীয় স্তরেও গ্যাসের সন্ধান
এছাড়া বৈঠকে বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বিমান চলাচল চুক্তির খসড়া এবং বাংলাদেশ ও কসোভোর সাংস্কৃতিক সহযোগিতা বিষয়ক চুক্তির খসড়া অনুমোদন করা হয়েছে বলে জানান সচিব মাহবুব।
তিনি বলেন, ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমাদের বিমান চলাচল চুক্তি আছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে প্রস্তাব করা হয়েছিল যে, তারা ইউনিয়ন হিসেবে এমন প্রস্তাব করতে চান। এখন তাদের সঙ্গে চুক্তি করা হবে।
“এ চুক্তির আওতায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো দেশের সঙ্গে বিমান চলাচল চুক্তি হলে সেটা ইউরোপীয় ইউনিয়ন স্ট্যান্ডার্ড মেনে করতে হবে। এছাড়া বিদ্যমান যে চুক্তিগুলো আছে সেগুলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্ট্যান্ডার্ড আলোকে বাস্তবায়ন করতে হবে।”
দুই নীতিমালা অনুমোদন
বৈঠকে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে সামুদ্রিক পর্যটন নীতিমালা ২০২৩ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে উত্থাপিত জাতীয় স্বেচ্ছাসেবা নীতিমালা, ২০২৩ এর খসড়া অনুমোদন করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মেরিটাইম ট্যুরিজম নামে কোনো নীতিমালা আগে ছিল না। বঙ্গোপসাগরকে ভিত্তি করে যাতে করে একটা ট্যুরিজম ইকনোমি করা যায়, সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে কীভাবে সহযোগিতা করা হবে, কোন কোন বিষয়ের উপর কাজ করতে হবে তার একটা কর্মপন্থা ঠিক করা হচ্ছে নীতিমালায়।
“পর্যটকদের জন্য সুযোগ সুবিধা, বেসরকারি খাত কিভাবে এখানে বিনিয়োগ করবে তাদের সমন্বয় করা, আন্তর্জাতিক ট্যুর অপারেটরদের সাথে কীভাবে সমন্বয় করতে হবে সেই বিষয়গুলো এখানে আছে। এমনকি সমুদ্রপথে যদি কেউ হজ করতে যেতে চায় বা নিতে চায় সেখানে সরকারের কিধরনের সহযোগিতা থাকবে সেটা এই নীতিমালায় বলা আছে।”
তিনি বলেন, “এখানে প্রধানমন্ত্রী একটা নির্দেশনা দিয়েছেন যে, সমুদ্র তীরে আমাদের পর্যাপ্ত জেটি নেই। বিদেশে সমুদ্র উপকূলে টার্মিনালের জেটি থাকে। সেখানে জাহাজগুলো ভিড়ে, যাত্রী নিয়ে সমুদ্রে ট্যুর করে ওখানে আবার যাত্রী নামিয়ে দেয়। কোথায় কোথায় এরকম টার্মিনাল নির্মাণ করা যায় সেজন্য একটা সমীক্ষা চালাতে নির্দেশনা দিয়েছেন।”
জাতীয় স্বেচ্ছাসেবা নীতিমালা সম্পর্কে তিনি বলেন, বাংলাদেশে স্বেচ্ছাসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহযোগিতা করার জন্য নীতিমালাটা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবীদের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হবে, তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, তাদেরকে ছবিসহ আইডি কার্ড দেওয়া হবে, সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। তাদের কর্তব্য কাজে কোনো আইনি বাধা থাকলে সেগুলো দূর করা হবে।
তাদের কাজগুলো দেখভাল করার জন্য দুর্যোগমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটা কাউন্সিল গঠন করা হবে। বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবকরা যাতে বিভিন্ন দেশে গিয়ে কাজ করতে পারেন সেজন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।