“এভাবে যদি কাঁচা মরিচের দাম ওঠানামা করতে থাকে তাহলে কেমন লাগে বলেন? একবার দাম বাড়ছে আবার পরদিনই দেখি দাম নেমে গেছে,” শান্তিনগর বাজারে এক ক্রেতার প্রতিক্রিয়া।
Published : 07 Jul 2023, 05:43 PM
কাঁচা মরিচের দাম নিয়ে তোলপাড় থামছে না। না কিনলেও ক্রেতারা দাম জেনে নিচ্ছেন।
ঈদের আগে ও ঈদ শেষে যে দর, তা এখন আর নেই। তবে দাম স্থিতিশীলও হচ্ছে না। একদিন একশ টাকা বাড়ে তো পরের দিন কমে দেড় বা দুইশ।
শুক্রবার ছুটির দিন ঢাকার কোনো এলাকায় আড়াইশ, কোথাও ২৮০, কোথাও ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে রান্নার উপকরণটি। আগের দিনই দাম ছিল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।
ঈদের ছুটি শেষে ভারত থেকে আমদানি শুরুর আগে কোনোদিন ৫০০ কোনোদিন ৭০০, কোথাও এক হাজার এমনকি কেজিপ্রতি ১২০০ টাকা দরেও কাঁচামরিচ বিক্রি হওয়ার খবর মিলেছে।
দাম নিয়ে ক্ষোভের পাশাপাশি রসিকতারও শেষ ছিল না। কিশোরগঞ্জে বিয়ের উপহার হিসেবে কাঁচামরিচের প্যাকেট দেওয়ার বিষয়টি সংবাদ হয়ে এসেছে জাতীয় গণমাধ্যমে।
শুক্রবার শান্তিনগরে বাজার করতে আসা বেইলি রোডের বাসিন্দা কানিজ ফাতেমা বলেন, ‘‘কিছুদিন আগে মরিচের কেজি ছিল ৭০০ টাকা। একদিন পরে নেমে হল ৪০০, গতকাল ছিল ৫০০ টাকা। আজকে দেখি আড়াইশ টাকা।
“এভাবে যদি কাঁচা মরিচের দাম ওঠানামা করতে থাকে তাহলে কেমন লাগে বলেন? একবার দাম বাড়ছে আবার পরদিনই দেখি দাম নেমে গেছে।”
পাশে আরেকজন ক্রেতা হাফিজা খাতুন বললেন, ‘‘আগে আমরা মরিচ কিনতাম ১৫ থেকে ২০ টাকার। তিন-চারদিন যেত। গত এক সপ্তাহ ধরে ২০ টাকার কাঁচা মরিচ কিনতে পাওয়া যায় না।”
শান্তিনগর বাজার থেকে দুয়েক কিলো দূরে মালিবাগ রেল গেইটে সিটি করপোরেশন মার্কেটে দাম দেখা গেল তিনশ টাকা।
এক বিক্রেতার হাঁক-ডাক শোনা গেল, “স্যার নিয়া যান। কালকে দেখবেন এই দামে পাইবেন না।”
এই দুই বাজারের মত নগরীর বিভিন্ন এলাকায় কেজি প্রতি দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকাও পার্থক্য দেখা গেছে। এদিন নগরীতে এলাকা ভেদে দাম ২০০ থেকে ৩২০ টাকার মধ্যেই দেখা গেছে।
ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, গত ৩/৪ দিন ধরে দামের এমন হেরফের দেখা যাচ্ছে। একদিনের সঙ্গে আরেকদিনের পার্থক্য হয়ে যায় কখনও কখনও ২০০ টাকা।
মিরপুরের কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, আড়াইশ গ্রাম ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় কাঁচা মরিচ। অর্থাৎ কেজিপ্রতি দাম পড়ছে ২৮০ টাকা।
একই সময়ে কারওয়ান বাজারে এসে দেখা যায়, ২৫০ গ্রাম কাঁচা মরিচের দাম চাওয়া হচ্ছে ৮০ টাকা। কেজিপ্রতি দাম পড়ে ৩২০ টাকা।
এ বাজারের খুচরা বিক্রেতা শরীফুল ইসলাম জানান, কোরবানির ঈদের সময় দাম ৫০০ টাকারও বেশি ছিল।
বাজারে নতুন করে বাড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজের দর। কারওয়ান বাজার ও মিরপুরে দেশি পেঁয়াজ প্রতিকেজি ৭৫ টাকা থেকে ৮০ টাকায় এবং ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতিকেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। গত মঙ্গলবার কারওয়ানবাজারে পাঁচ কেজির এক পাল্লার দাম ছিল ২০০ টাকা, অর্থাৎ কেজিপ্রতি ৪০।
গত সপ্তাহে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ সর্বোচ্চ ৭০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৫০ টাকায় বিক্রি হয়ে বলে বিক্রেতরা জানিয়েছেন।
দামের এই হেরফেরের কারণ কী, কারা দাম ঠিক করে, এই প্রশ্নে কারও কাছে কোনো ধারণা পাওয়া গেল না। বিক্রেতাদের সবাই বললেন, তারা যেমন দামে কেনেন, তেমন দামে বেচেন।
মিরপুর-২ এর বড়বাগ কাঁচা বাজারে কেনাকাটা করতে আসা সাব্বির আহমেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “যে যেভাবে পারছে মানুষের পকেট কাটছে। চাল ডাল, তেল-নুন, চিনি কোন জিনিসটার দাম বাড়েনি আপনি দেখান।”
সরকারের ‘না’ শোনেননি চিনি উৎপাদকরা
চিনিকল মালিকরা দাম বাড়ানোর ঘোষণার পর সরকার ‘না’ করলেও বাজারে তার কোনো প্রভাবই নেই।
গত ১৯ জুন সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে জানানো হয়, কেজিপ্রতি ২৫ টাকা বেশিতে খোলা চিনি ১৪০ ও প্যাকেটের চিনি বিক্রি হবে কেজিতে দেড়শ টাকা দরে।
যেদিন থেকে বাড়তি দামে বিক্রি হওয়ার কথা সেই ২২ জুন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানান, বাড়তি দর সরকার মেনে নেয়নি। দাম কত হবে, তা নিয়ে তারা বৈঠকে বসবেন। সরকারের অনুমোদন ছাড়া দাম বাড়লে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এমন ঘোষণাও ছিল তার।
তবে ঈদের সপ্তম দিনে বাজারে গিয়ে মিল মালিকদের ঘোষিত দাম ১৪০ টাকা দরেই পণ্যটি বিক্রি হতে দেখা গেল। বাড়তি দাম নিলে ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর তা পর্যবেক্ষণ করবে’ বলে মন্ত্রী যে কথা বলেছিলেন, তার কোনো প্রভাবই দেখা যায়নি।
তবে সরকার নির্ধারিত দামেই বিক্রি হতে দেখা গেছে ভোজ্যতেল।
খুচরা পর্যায়ে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৬২ টাকা আর পাম তেল ১২৬ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।