বাংলাদেশ কোনো নিষেধাজ্ঞায় পড়লে ‘পণ্য না নেওয়া কিংবা পরিশোধ না করার’ শর্ত যুক্ত করে এক ক্রেতার অভিনব ক্রয়াদেশ দেওয়ার পর এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
Published : 06 Dec 2023, 11:54 PM
বিশ্বব্যাপী শ্রমিক অধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হুঁশিয়ারির পর বাংলাদেশের শ্রমঘন পোশাক শিল্পখাতের উদ্যোক্তারা বেশ সতর্কতার সঙ্গেই পরিস্থিতি মূল্যায়ন করছিলেন।
এরই মধ্যে বাংলাদেশ কোনো নিষেধাজ্ঞায় পড়লে ‘পণ্য না নেওয়া কিংবা পরিশোধ না করার’ শর্ত যুক্ত করে এক ক্রেতার অভিনব ক্রয়াদেশ দেওয়ার পর এ নিয়ে নতুন গুঞ্জন শুরু হয়েছে রপ্তানিকারকদের মধ্যে।
ক্রয়াদেশ বা এলসির আলোচনায় অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি বার বার উঠে আসছে। গত মঙ্গলবার চট্টগ্রামে রপ্তানিকারকদের এক অনুষ্ঠানে একটি সংবাদমাধ্যমের কাছে নিষেধাজ্ঞার শঙ্কাকে যুক্ত করে ক্রয়াদেশ আসার কথা স্বীকারও করেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।
তিনি বলেন, এক ক্রেতা ঋণপত্রের শর্তের মধ্যে বলেছেন, বাংলাদেশ কোনো নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়লে তারা পণ্য নেবেন না। যদি পণ্য জাহাজীকরণের পরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের কোনো ঘটনা ঘটে, তাহলেও অর্থ দেবে না ক্রেতা প্রতিষ্ঠান।
এ চিঠির প্রভাব ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, এতে অনেক ব্যাংক মূল ঋণপত্রের বিপরীতে ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র খুলতে নাও পারে। আবার ক্রেতা পণ্য না নিলে স্টক হয়ে যেতে পারে।
তবে বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, যেই ক্রেতা এ ধরনের ক্রয়াদেশ দিয়েছেন তিনি খুব বড় ক্রেতা নন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের একজন ক্রেতা। এটা নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। তাছাড়া এমন কোনো পরিস্থিতি হয়নি যে, আমাদের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে।
শ্রমিক অধিকার সম্পর্কে তিনি বলেন, সংশোধিত শ্রম আইন আপাতত কার্যকর হচ্ছে না। এখানে যতটুকু পরিমার্জন করা প্রয়োজন সেগুলো করতে আমরা সুপারিশ করব। এমন কোনো সুযোগ রাখতে চাই না যে কারণে কোনো নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে।
বিকেএমইএর আরেক নেতা ফজলে শামীম এহসান বলেন, আমরা তো সব সময় উদ্বেগের মধ্যেই আছি। কিন্তু ‘যদি’ শব্দ উল্লেখ করে যে ক্রয়াদেশ দিয়েছে সেটা নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। কারণ, যদি তো যদিই। এ নিয়ে এখনই উদ্বিগ্ন হওয়ার কী আছে। এই ধরনের ক্রয়াদেশকে আমরা প্রেসার মনে করতেছি না। অযথা বিষয়টি ভাইরাল করা হয়েছে।
বুধবার সন্ধ্যায় এলসির বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে ১ হাজার ১৭৫ শব্দের একটি বক্তব্য পাঠান বিজিএমইএ সভাপতি।
সেখানে তিনি লেখেন, বিশ্ব বাণিজ্যের ল্যান্ডস্ক্যাপ দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। মানবাধিকার ও পরিবেশগত বিষয়গুলো এখন বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। ভূরাজননৈতিক বিষয়গুলোও এখানে ভূমিকা রাখছে।
এ বার্তায় ক্রয়াদেশের সংশ্লিষ্ট ধারা হুবহু তুলে ধরা হয়। এতে দেখা যায়, “কোনো দেশ, অঞ্চল কিংবা পক্ষ জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়লে তাদের সঙ্গে আমরা লেনদেন করব না। নিষেধাজ্ঞাজনিত কারণে পণ্য সরবরাহে বিলম্ব বা অথবা ব্যর্থতার দায়ও আমরা নেব না।”
ফারুক হাসান বলেন, “এই ক্রয়াদেশের ব্যাখ্যা নিয়ে একটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব বা সংশয় তৈরি হয়েছে যে, বাংলাদেশে অবশ্যই নিষেধাজ্ঞা আসছে যা সঠিক নয়। ক্রয়াদেশ আসে একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছ থেকে। এটা কোনোভাবেই কোনো রাষ্ট্রীয় আদেশ নয়। সুতরাং এটাকে বাংলাদেশের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা হিসাবে বিবেচনা করা যাবে না।
“আরও পরিষ্কার করে বলতে গেলে, ক্রেতা বা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পলিসি বা নীতি থাকতে পারে। তবে একটা এলসি কোনো দাপ্তরিক ঘোষণা নয়। এছাড়া বিজিএমইএ কূটনীতিকদের কাছ থেকে নিষেধাজ্ঞা বা বাণিজ্যিক পদক্ষেপের কোনো তথ্য পায়নি।”
বিজিএমইএর পরিচালক ও ব্রাদার্স ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল্লা হিল রাকিব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। পুরো বিষয়টি একটি গালগল্প হতে পারে।
সাম্প্রতিক পশ্চিমা চাপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওরা ঢালাওভাবে কোনো দেশকে কিছু বলে নাই। যেসব অপরাধের ক্ষেত্রে শাস্তি আসবে সেগুলো আমাদের এখানে প্রাক্টিস হয় না। সুতরাং ভালো মানুষের এনিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই। আর হাতের পাঁচ আঙ্গুল সমান হয় না। ব্যক্তি বিশেষের হয়তো কোনো ত্রুটি থাকতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশের কম্প্লায়েন্স কারখানাগুলোর চিন্তার কোনো কারণ নেই।