এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত তিনটি এবং দীর্ঘ সময় ধরে তারল্য সংকটে থাকা বেসরকারি খাতের ছয়টি ব্যাংক রয়েছে।
Published : 23 Nov 2023, 12:22 AM
খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, পুনঃতফসিল করেও অর্থ আদায় করতে দেরি হওয়ায় এর বিপরীতে মুনাফা থেকে প্রভিশন সংরক্ষণ করা ও নতুন আমানত সংগ্রহে ভাটা দেখা দেওয়ায় প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে নয়টি ব্যাংক।
সেপ্টেম্বর শেষে এসব ব্যাংকের প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) সংরক্ষণের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে মোট ২৮ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত তিনটি এবং দীর্ঘ সময় ধরে তারল্য সংকটে থাকা বেসরকারি খাতের ছয়টি ব্যাংক রয়েছে। তবে এবার বিদেশি ও বিশেষায়িত কোনো ব্যাংকের নাম নেই।
এসব ব্যাংকের কারণে সার্বিকভাবে ব্যাংকিং খাতে সেপ্টেম্বর শেষে মোট ২৫ হাজার ২৭১ কোটি টাকা প্রভিশন ঘাটতি হয়েছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক।
সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকগুলোতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এ সময়ে শ্রেণিকৃত ঋণের হার দাঁড়িয়েছে মোট ঋণের ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশে।
ঝুঁকিপূর্ণ এ শ্রেণিকৃত ঋণের বিপরীতেই প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে নয়টি ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট প্রভিশন সংরক্ষণের দরকার ছিল এক লাখ ৬ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকগুলো সংরক্ষণ করেছে ৮১ হাজার ১০৩ কোটি টাকা। ফলে ব্যাংক খাতের সার্বিকভাবে নিরাপত্তা সঞ্চিতি ঘাটতি বেড়েছে ২৫ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। কিছু ব্যাংক প্রয়োজনের চেয়েও বেশি প্রভিশন সংরক্ষণ করায় সার্বিকভাবে ঘাটতির পরিমাণ কমেছে।
গত সেপ্টেম্বর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত তিন ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি হয়েছে ১৩ হাজার ৫৪৬ কোটি টাকা। বেসরকারি খাতের ছয় ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা।
নিয়ম অনুযায়ী, বিতরণ করা ঋণের বিপরীতে বিভিন্ন হারে নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) কেটে রাখতে হয়। মন্দ মানের ঋণের বিপরীতে তা শতভাগ।
ঋণ খেলাপি হলেও ব্যাংকটি যেন আর্থিকভাবে চরম ঝুঁকিতে না পড়ে, আমানতকারীদের অর্থ প্রাপ্তিতে সমস্যা না হয়, ব্যাংক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িতদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা ও ব্যাংকের ক্রেডিট রেটিং মূল্যায়ন করতে খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণের নিয়মটি অনুসরণ করা হয় আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং রীতি মেনে।
প্রতিটি ঋণের বিপরীতেই প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। তবে খেলাপি হলে এর বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণের হার বেশি ধরা হয়।
নিয়মিত বা অশ্রেণিকৃত ঋণের বিপরীতে শূন্য দশমিক ২৫ থেকে ৫ শতাংশ, খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হলে নিম্ন বা সাব-স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা কু-ঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ হারে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়।
প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হলে ব্যাংকের ক্রেডিট রেটিং কমে গিয়ে বৈদেশিক বাণিজ্যে খরচ বেড়ে যায়। ঝুঁকি বিবেচনায় আমানতকারীরা ব্যাংক বিমুখ হয়। এতে নগদ টাকার সংকটে পড়ে যায় ব্যাংকগুলো। এর ফলে আর্থিক ব্যবস্থাপনা খরচও বেড়ে যায়।
খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র প্রকাশ হলে এর বিপরীতে প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ আরও বাড়বে দীর্ঘদিন থেকে বলে আসছেন অর্থনীতিবিদরা।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের যে তথ্য দেয় বাস্তবে তা আরও বেশি। খেলাপি হওয়ার পরেও পুনঃতফসিল করা ঋণও খেলাপি, কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক তা দেখায় না।’’