এই ভবনে কোনো ‘ফায়ার এক্সিট’ না থাকায় কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে মানুষের নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব হবে না বলে মনে করছে সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
Published : 05 Mar 2024, 03:00 PM
‘অগ্নিঝুঁকিতে’ থাকা রাজধানীর খিলগাঁওয়ে ‘নাইটিঙ্গেল স্কাইভিউ’ নামে একটি বহুতল ভবন বন্ধ করে দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
ওই ভবনের একটি তলা বাদে সবকটিতে রেস্তোরাঁ খোলা হয়েছে। এমনকি ভবনের বেইজমেস্ট, গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা এবং ছাদও বাদ যায়নি।
ভবনটিতে কোনো ‘ফায়ার এক্সিট’ না থাকায় কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে মানুষের নিরাপত্তা দেওয়া ‘সম্ভব হবে না’ বলে মনে করছে সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ডিএসসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাহাঙ্গীর আলম রেস্তোরাঁয় ঠাসা খিলগাঁওয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা শুরু করেন। শুরুতে শহীদ বাকী সড়কের সি ব্লকের ৫৬৬/এ ভবনের দ্বিতীয় তলায় ‘শর্মা কিং’ রেস্তোরাঁয় যান তিনি।
ওই সময়ে রেস্তোরাঁর মালিক বা ব্যবস্থাপক কেউই সেখানে ছিলেন না। তাদের মোবাইলে ফোন করা হলেও তারা ধরেননি। রেস্তোরাঁর কর্মীদের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাইলেও তারা ভ্রাম্যমাণ আদালতকে তা দেখাতে পারেননি।
‘শর্মা কিং’ থেকে ‘নাইটিঙ্গেল স্কাইভিউ’ ভবনের তৃতীয় তলায় ‘পাস্তা ক্লাব’ নামে আরেকটি রেস্তোরাঁয় যান ম্যাজিস্ট্রেট জাহাঙ্গীর আলম। সেখানেও মালিকপক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি।
পরে ভবন থেকে নেমে এসে মূল ফটক সিলগালা করে বন্ধ করে দেন তিনি। আর ফায়ার সার্ভিস ভবনের সামনে ‘ভবনটি অগ্নিনিরাপত্তার জন্য অত্যধিক ঝুঁকিপূর্ণ’ ব্যানার টানিয়ে দেয়।
জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, “ভবনটি আপাতত বন্ধ থাকবে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে পারলে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারা পার্কিংয়ের জায়গা এমনকি ছাদেও রেস্তোরাঁ বানিয়েছে। ওই ভবনের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থাও খুবই নাজুক। ভবনে একটি সিঁড়ি তিন ফুট প্রশস্ত। ফায়ার এক্সিট নেই। ফলে কোনো দুর্ঘটনা হলে মানুষ বের হতে পারবেন না।”
পরে সাড়ে ১২টার দিকে ওই এলাকার ‘কাচ্চি ভাই’ ও ‘সিরাজ চুঁইগোস্ত’ নামে দুটি রেস্তোরাঁয় যায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। কিন্তু তালা দেওয়া ওই দুই খাবারের দোকানের গেইটে 'রেস্টুরেন্টের উন্নয়ন কাজের জন্য প্রতিষ্ঠানটি সাময়িক বন্ধ' ব্যানার ঝুলছিল। তাই সেখানে অভিযান পরিচালনা করতে পারেননি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
অভিযানের খবর পেয়ে এদিন বেইলি রোডের মত খিলগাঁওয়ের ওই সড়কের বেশিরভাগ রেস্তোরাঁই বন্ধ পাওয়া যায়।
ঘুরে দেখা গেছে, চায়না ল্যান্ড, আপন কফি হাউজ, চায়ের বাড়ি, সাব লাভার্স, সুলতান, হট কেক, হার্ফি, গোল্ডেন চিকসহ আরও অনেক রেস্তোরাঁয় তালা ঝুলছে।
আলফ্রেসকো নামে একটি রেস্তোরাঁ বন্ধ পেয়ে তাদের কাস্টমার কেয়ারে ফোন করলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক মো. হানিফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “খিলগাঁওয়ের রেস্তোরাঁগুলোয় সিটি করপোরেশন অভিযান চালাচ্ছে। এজন্য আজ আমরা বন্ধ রেখেছি।”
তবে ওই এলাকার সিক্রেট রেসিপি, ভুতের আড্ডাসহ কয়েকটি রেস্তোরাঁ খোলা পাওয়া যায়।
ভুতের আড্ডার কর্মচারী পান্থ রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,”আমাদের রেস্টুরেন্টের নিরাপত্তা ভালো। কিছুক্ষণ আগে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসেছিলেন। তারা দেখে গেছেন, সবকিছু ঠিক আছে।”
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “এইদিকে প্রায় সব রেস্তোরাঁই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জরিমানা করব কাকে?”
সকালের দিকে বেইলি রোডে অভিযান চালিয়ে ‘একিউআই’ শপিং মলের বেইজমেন্টে রেস্তোরাঁ চালানোয় ‘নবাবী ভোজ’ নামে একটি খাবারের দোকান বন্ধ করে দিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউক।
বেইলি রোডের বেশিরভাগ রেস্তোরাঁর মত অভিযানের সময় সেখানে নবাবী ভোজ রেস্তোরাঁও ছিল তালাবদ্ধ।
রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মনির হোসেন হাওলাদারের নেতৃত্বে এই অভিযান শুরু হয়।
মনির হোসেন হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, “নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আমরা অভিযানে এসেছি। রেস্তোরাঁয় আগুন জ্বালিয়ে খাবার রান্না করা হয়, গ্যাসের ব্যবহার হচ্ছে। এসব জায়গায় আগুন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা আছে কি না তা দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি অন্যান্য নিয়ম মানা হচ্ছে কিনা সেটিও দেখা হচ্ছে। “
নবাবী ভোজ রেস্তোরাঁ কেন সিলগালা করা হল প্রশ্ন করলে ম্যাজিস্ট্রেট হাওলাদার বলেন, “নবাবী ভোজ রেস্তোরাঁ আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এজন্য সিলগালা করে দিয়েছি।"
এই সড়কের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে আগুনে ৪৬ জনের প্রাণহানির ঘটনার পর ধানমণ্ডি, খিলগাঁও, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় একই রকম অনিরাপদ পরিবেশে ভবনজুড়ে রেস্তোরাঁ গড়ে তোলার বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় আসে। এই প্রেক্ষাপটে সমালোচনার মুখে রোববার থেকে রাজধানীতে অভিযানে নেমেছে রাজউক, সিটি করপোরেশন, পুলিশ ও র্যাব।
আবাসিক ভবনে নিয়মের বাইরে গিয়ে বানানো রেস্তোরাঁগুলো বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে এসব অভিযানে, আবার কোনো কোনো জায়গায় গ্রেপ্তার ও জরিমানাও করা হচ্ছে।
সোমবার ঢাকার ধানমন্ডির সাত মসজিদ সড়কের গাউসিয়া টুইন পিক ভবনে অভিযান চালিয়ে সব রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেয় রাজউক।
আর বাণিজ্যিক অফিস করার অনুমোদন নিয়ে অবৈধভাবে রেস্তোরাঁ চালানোয় জিগাতলার কেয়ারি ক্রিসেন্ট টাওয়ার বন্ধ করে দেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
আরও পড়ুন:
বেইলি রোডে বেইজমেন্টে ‘নবাবী ভোজ’, বন্ধ করল রাজউক