প্রতিমন্ত্রী জানান, প্রথম চালানে আসছে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ। এরপর বাংলাদেশের ‘চাহিদা অনুযায়ী’ পেঁয়াজ পাঠাবে ভারত।
Published : 31 Mar 2024, 03:21 PM
সরকার ভারত থেকে যে পেঁয়াজ আনছে, তার প্রথম চালান রোববারই দেশে পৌঁছাবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।
তিনি বলেছেন, ফ্যামিলি কার্ডধারীদের জন্য চলমান বিপণন ব্যবস্থার পাশাপাশি পুরোনো নিয়মে ঢাকা চট্টগ্রামে ট্রাক সেলের মাধ্যমে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করবে সরকারি ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ টিসিবি।
রোববার দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা বিষয়ক টাস্কফোর্সের সভা শেষে এ কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।
ভারত থেকে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আসার কথা রোজা শুরুর আগে থেকেই বলা হচ্ছে। কিন্তু নানা জটিলতায় তা পেছাতে থাকে।
ভারত থেকে চিনি কেনার পরিকল্পনা থাকলেও বাজার নিম্নগামী হওয়ায় আপাতত চিনি কেনার সিদ্ধান্ত থেকে সরকার সরে এসেছে।
বৈঠক শেষে প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “জানি আপানারা আমাকে একটা প্রশ্ন করবেন। প্রশ্ন করার আগেই আমি উত্তর দিয়ে দিচ্ছি। আল্লাহর অশেষ রহমতে ভারত থেকে পেঁয়াজের ট্রেন আজকে রাতের মধ্যেই পৌঁছে যাবে।
“কাল থেকে ডিলারদের কাছ থেকে টাকা জমা নেওয়া শুরু করব। ঢাকা এবং চট্টগ্রামে প্রতি কেজি ৪০ টাকা দরে ট্রাক সেলের মাধ্যমে পেঁয়াজ আমরা বিক্রি করব।”
প্রতিমন্ত্রী জানান, প্রথম ট্রেনে আসছে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ। এরপর বাংলাদেশের ‘চাহিদা অনুযায়ী’ পেঁয়াজ পাঠাবে ভারত।
তিনি বলেন, “বাজারে সঠিক মূল্যে পর্যাপ্ত চিনি পাওয়া যাচ্ছে। সে কারণে উৎপাদকরা চিনি আমদানির প্রয়োজন মনে করছেন না। এই মুহূর্তে চিনির জন্য চেষ্টা করছি না।”
টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আনা হয়েছে প্রতি টন ৪০০ ডলার দামে।
“ভারতের বাজারও নিম্নমুখী। সে কারণে সব পেঁয়াজ আমরা একসাথে আনিনি। প্রয়োজন অনুযায়ী ধাপে ধাপে আমরা ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আনতে পারব। ভোক্তারা টিসিবির ট্রাক থেকে প্রথম দিকে সর্বোচ্চ ২ কেজি করে পেঁয়াজ নিতে পারবেন।”
পেঁয়াজ কেবল ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিক্রির কারণ ব্যাখ্যা করে আরিফুল হাসান বলেন, “এগুলো শহরাঞ্চল। এখানে ব্যাপক চাহিদা। এই চাহিদায় পূরণ করা গেলে উপজেলা পর্যায়েও সরবরাহের চাপ বাড়বে এবং দাম কমবে।”
বাজার পরিস্থিতি ‘সন্তোষজনক’
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী দাবি করেন, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তাবয়নের মাধ্যমে বাজার পরিস্থিতি ‘অনেকটা নিয়ন্ত্রণে’ এসে গেছে।
“টাস্কফোর্সে যে অংশীজনরা আছেন, তারা গত কয়েক বছরের তুলনায় বর্তমান বাজার মূল্য পরিস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বাজারে সব পণ্যের সরবরাহ আছে, ক্রাইসিস নেই। এটাই আমার সন্তুষ্টির মূল কারণ। যতগুলো প্রাইস ইন্ডিকেটর দেখা যাচ্ছে, সব কিছুই নিচের দিকে।
“অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের দাম গত এক মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে ১১ থেকে ১২ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু আমাদের আমদানিকারকদের সহযোগিতায় বাজার স্থিতিশীল রাখা হয়েছে। রোজা শুরুর পর অধিকাংশ জিনিসপত্রের দাম কমে গেছে।”
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর যে ২৯টি পণ্যের যৌক্তিক মূল্য ঘোষণা করেছে, তা ‘চূড়ান্ত মূল্য নয়’ বলেও মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “২৯টি কৃষিপণ্যের যৌক্তিক মূল্য বা ইন্ডিকেটিভ প্রাইস ডিসক্লোজ বা প্রকাশ করা হয়েছে। এটা যে মেনে চলতে হচ্ছে (নট ফর কমপ্লায়েন্স) তা নয়। এটা হচ্ছে ইন্ডিকেটিভ মূল্য।
“বাজারে কৃষিপণ্যের দাম অনেকটা যৌক্তিক পর্যায়ে চলে এসেছে। কিছু কিছু পণ্য যেই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে তার চেয়ে কম দামে বিক্রি হচ্ছে। যদিও এটা আমাদের কাম্য নয়।”
প্রতিমন্ত্রী বলেন, টিসিবির মাধ্যমে এক কোটি পরিবারকে চাল, তেল, ডাল, চিনি, ছোলা দেওয়া হচ্ছ, এর একটি প্রভাব বাজারে পড়ছে।
“সেটারও একটা সুফল বাজার পাচ্ছে। উপজেলা পর্যায়ে সবজির বাজারেও একটা স্বস্তি লক্ষ্য করছি।”
আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, তেল ও চিনির বাজারে আগামী দুই-তিন মাসে ‘কোনা সংকট হবে না’ বলেই বৈঠকে আশ্বস্ত করেছেন শিল্প মালিকরা।
“আগামী ২/৩ মাসের জন্য ভোজ্যতেলের যথেষ্ট সরবরাহ থাকছে। চিনি নিয়েও তেমন সমস্যা নেই। মিল মালিক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।”
একসঙ্গে কাজ করবে বাণিজ্য, কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয়
কিছু কিছু ক্ষেত্রে কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক সঙ্গে কাজ করবে বলে বৈঠক শেষে জানান প্রতিমন্ত্রী টিটু।
তিনি বলেন, আগামী পহেলা বৈশাখ থেকে ‘সরু চাল’, ‘মোটা চাল’ ও ‘চিকন চাল’ এই ধরনের শব্দের ব্যবহার থেকে বেরিয়ে এসে জাতভিত্তিক চালের নাম প্রচলন করা হবে। মওসুম ভিত্তিক ধানের উৎপাদন খরচ ঠিক করার রূপরেখা তৈরি হয়েছে। খাদ্য, কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এসব ঠিক করে জানিয়ে দেওয়া হবে।
“বাজারের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে পেরেছি। আগামী ঈদ পর্যন্ত এটা ধরে রাখা যাবে বলে আশা করছি। পরিবহনের চ্যালেঞ্জ আছে। সেটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আগামী বাজেট থেকে নিত্যপণ্যের দাম যেন সারা বছর একটা যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে পারি এর জন্য এনবিআররের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। আমদানিকারক ও উৎপাদকের জন্যও এক বছরের একটা পরিকল্পনা সাজানো থাকলে ভালো হয়।”
অন্যদের মধ্যে এফবিসিসিআই প্রতিনিধি, ভোজ্যতেল ও চিনি পরেশোধনকারী কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধি, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার প্রতিনিধিরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।