তৃতীয় প্রান্তিকে বাংলালিংকের আয় ১,৫৮৮ কোটি টাকা

“ডিজিটাল ব্যাংকই ভবিষ্যৎ। আমি আশা করছি সরকার এ লাইসেন্স ইস্যু করবে,” বলেন মোবাইল ফোন অপারেটরটির সিইও এরিক অস।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Nov 2023, 04:50 PM
Updated : 21 Nov 2023, 04:50 PM

চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর তৃতীয় প্রান্তিকে বাংলালিংক এক হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা আয় করেছে। আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে যা ১৫ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। 

মঙ্গলবার ঢাকার গুলশানে মোবাইল ফোন অপারেটরটির প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। তবে এ প্রান্তিকে কোম্পানিটির মুনাফার তথ্য প্রকাশ করতে চাননি প্রধান নির্বাহী এরিক অস।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বর্তমানে চার কোটি ৩০ লাখ গ্রাহকের কোম্পানিটি সবশেষ ছয় প্রান্তিক ধরে টানা দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। চলতি ২০২৩ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বরে আয় বাড়ার পেছনে ভূমিকা রেখেছে ডেটার আয়ে প্রবৃদ্ধি।

কর্মকর্তারা জানান, এ সময়ে ডেটা থেকে আয় বেড়েছে ২৮ শতাংশ এবং ফোরজি থেকে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩১ শতাংশ। দেশজুড়ে বাংলালিংকের ১৫ হাজারেরও বেশি টাওয়ারের অবকাঠামো তৈরি এ প্রবৃদ্ধি অর্জনে ভূমিকা রেখেছে।

তবে সিইও এরিক অস বলেছেন, সম্প্রতি সরকারের সিদ্ধান্তে ইন্টারনেট ডেটার যে প্যাকেজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে তা আগামীতে প্রবৃদ্ধিতে ছেদ ফেলবে।

সংবাদ সম্মেলনে কোম্পানির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান ও চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার জেম ভেলিপাসাওগ্লু বক্তব্য দেন।

এরিক অস বাংলালিংকের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির আগ্রহ এবং ডিজিটাল ব্যাংক করার আবেদন নিয়েও কথা বলেন। নিজেদের হাতে থাকা সাড়ে তিন হাজার মোবাইল টাওয়ার বিক্রির জন্য ক্রেতা খোঁজার তথ্যও জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আয়ের প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে বাংলালিংকের অ্যাপ ‘মাই বিএল’ ও বিনোদন প্ল্যাটফর্ম ‘টফি’ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। ২০২২ সালের চেয়ে এ বছর টফি এর ব্যবহারকারী ৭২ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। বিশ্বকাপের খেলা দেখানো এতে বড় ভূমিকা রাখে। এর মধ্য দিয়ে টফি সব ক্যাটাগরিতে গুগল প্লে স্টোরে এক নম্বর প্ল্যাটফরমের জায়গা করে নিয়েছে বলে দাবি করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বিটিআরসির তথ্য তুলে ধরে দাবি করা হয়, নেটওয়ার্কে বছরভিত্তিক গ্রাহকের যুক্ত হওয়ার প্রবৃদ্ধির হিসাবে বাংলালিংকই সবচেয়ে এগিয়ে। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের চেয়ে এ বছর সেপ্টেম্বরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৫১ শতাংশ।    

এরিক অস বলেন, সম্প্রতি বাংলালিংক ২০০০ টাওয়ার বিক্রি করেছে সামিট কমিউনিকেশনের কাছে। ২০২১ সালে ১০ হাজার টাওয়ার ছিল। ২০২৩ সালে তা বেড়ে ১৫ হাজারে দাঁড়ায়। এরমধ্যে নিজস্ব টাওয়ার ছিল সাড়ে ৫ হাজার। এখন হাতে থাকা বাকি টাওয়ারগুলোর জন্য ক্রেতা খোঁজা হচ্ছে।

নতুন ডেটা প্যাকেজে কোম্পানির আয় কমতে পারে জানিয়ে প্রশ্নোত্তর পর্বে বাংলালিংকের সিইও বলেন, নিয়ন্ত্রণ সংস্থার নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের নতুন ডেটা প্যাকেজ করতে হয়েছে। এখন তিন দিন ও ১৫ দিনের প্যাকেজগুলো আর নেই। বাস্তবতা হল যে গ্রাহকরা স্বল্প টাকার তিন দিনের প্যাকেজ ব্যবহার করতেন। সংক্ষিপ্তভাবে বলতে গেলে আমাদের আয় কিছুটা কমেছে।

“এবং স্বল্প পরিসরে হলেও এটা প্রবৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলবে। তবে আমরা নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছি।”

প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারে ট্যারিফ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমরা প্রতিযোগিতায় বিশ্বাস রাখি। আমরা প্রকৃত অর্থেই বিশ্বাস করি ট্যারিফ নিয়ন্ত্রণ করাটা জরুরি নয়। কারণ গ্রাহক প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারে অপারেটর বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা ভোগ করছে।”

বাংলালিংক গত সপ্তাহে ঝুলে থাকা অডিট আপত্তির মূল অর্থ ১৬৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিকে পরিশোধ করে। আইনি লড়াইয়ে সুযোগ থাকার পরও তা পরিশোধের বিষয়ে সিইও এরি অস বলেন, “তথাকথিত বিটিরআরসির অডিট নিয়ে আপনার যে প্রশ্নটা… বিটিআরসি সময় সময় প্রতিটি মোবাইল অপারেটরেই অডিট করে। অডিটের সময় আমরা তাদের পুরোপুরি সহায়তা করেছি। এবং আমরা এটা পরিষ্কার করতে চাই যে সাধারণত আমরা কোর্টে গিয়ে কোনো বিষয় নিষ্পত্তিতে বিশ্বাস করি না।

“আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে বিশ্বাসী। সেজন্য আমরা অব্যাহতভাবে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা অডিটের সব আপত্তির সঙ্গে একমত না হলেও এক্ষেত্রেও আমরা আলোচনার মাধ্যমেই বিষয়টি সমাধানের পথে যেতে চাই, আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমে নয়। আপনারা জানেন এর মধ্যেই আমরা অডিট আপত্তির একটা অংশ পরিশোধ করেছি। এখন আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টায় আছি।”

সরকারের সঙ্গে ফলপ্রসু আলোচনা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমার মনে হয় তারা এটা খুব ইতিবাচকভাবে নিয়েছে যে আমরা আদালতের বাইরে থেকে কেবল সমাধানের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছি।”

অনেক সময় কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে লাভের অংক বাড়িয়ে দেখায়। বাংলালিংকও পুঁজিবাজারে আসতে চায়। এক্ষেত্রে তারা সেরকম কিছু করছে কী না জানতে চাইলে এরিক অস বলেন, বাংলালিংকের মূল কোম্পানি ভিওন বৈশ্বিক রীতিনীতি মেলে ব্যবসা পরিচালনায় বিশ্বাসী, তাদের অনৈতিক কিছু করার সুযোগ নেই।

“আমরা সরকারের অনেক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলালিংকের পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনার বিষয়ে আলোচনা করেছি। দেশের অর্থনীতিতে বাংলালিংক যেমন অবদান রেখে চলেছে আমি বিশ্বাস করি পুঁজিবাজার গঠনেও বাংলালিংক অবদান রাখতে পারে। আমাদের মূল কোম্পানি ‘ভিওন’ও এটা বিশ্বাস করে। আমি বিশ্বাস করি তারা দ্রুততম সময়ে বাংলালিংককে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করে এ প্রক্রিয়ার সমাপ্তি ঘটাবে।”

বাংলালিংকের ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স চাওয়া প্রসঙ্গে চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, “আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছিলাম। সেখানে কিছু অংশীদারীত্বের বিষয় আছে। আমরা সেগুলো পূরণ করতে কাজ করছি। আমরা ডিজিটাল ব্যাংকের বিষয়ে এখনও আমাদের আগ্রহ দেখিয়ে যাচ্ছি।”

একই প্রশ্নে এরিক অস বলেন, “ডিজিটাল ব্যাংকই হচ্ছে ভবিষ্যৎ। আমি আশা করছি সরকার এ লাইসেন্স ইস্যু করবে।”

আরেক প্রশ্নে তিনি জানান, বাংলালিংকের মার্কেট শেয়ার এখন ২০ শতাংশের মতো। কোম্পানির রাজস্ব আয়ের ২৭ দশমিক ৭ শতাংশ আসে ডেটা থেকে। ৩০ শতাংশের বেশি আয় হয় ভয়েস কল থেকে। মাসিকভিত্তিতে গড়ে একজন গ্রাহক ১৩২ টাকা ব্যয় করেন। যারা টফি অ্যাপ ব্যবহার করছেন তারা ব্যয় করছেন ২৮০ থেকে ২৮২ টাকা পর্যন্ত।

কর পরবর্তী মুনাফার বিষয়ে সিইও বলেন, “কর দেওয়ার পর কত মুনাফা হল আমরা এটা এখন প্রকাশ করতে চাই না। যখন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির প্রশ্ন আসবে তখন প্রসপেক্টাসসহ অন্য কাগজপত্রে আমরা অবশ্যই এসব বিষয় উল্লেখ করব।”