ব্যাংক কোম্পানি আইনের খসরা প্রকাশ্যে আনার আহ্বান টিআইবির

টিআইবি বলছে, খসড়া প্রকাশ না করার কারণে ব্যাংক খাতের ব্যাপক আলোচিত চ্যালেঞ্জগুলো উত্তরণের কার্যকর উপায়সহ সার্বিকভাবে জনগণের স্বার্থ সংরক্ষিত হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা ‘অমূলক নয়’।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 April 2023, 02:31 PM
Updated : 27 April 2023, 02:31 PM

ব্যাংক খাতে সংস্কারের লক্ষ্যে প্রণীত ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের খসড়া জনসম্মুখে উন্মুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ–টিআইবি।  

বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, ওই খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের কথা গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে ২৮ মার্চ। 

“তা সত্ত্বেও তা উন্মুক্ত না করার কারণে আইনের খসড়ায় ব্যাংক খাতের ব্যাপক আলোচিত চ্যালেঞ্জগুলো উত্তরণের কার্যকর উপায়সহ সার্বিকভাবে জনগণের স্বার্থ সংরক্ষিত হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা অমূলক নয়।”  

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, "আমাদের প্রত্যাশা ছিল, বর্তমান সরকারেরই অনুসৃত চর্চা অনুযায়ী খসড়াটি সংশ্লিষ্ট অংশীজনের মতামত ও পরামর্শের জন্য প্রকাশিত হবে। কিন্তু খসড়াটি অদ্যাবধি জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়নি। 

“এমনকি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে দেখা যায়, আইএমএফের সফররত মিশন খসড়াটি দেখতে চাইলে তা দেখাতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ গোপনীয়তা সুরক্ষার যুক্তিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে, যা আমাদের হতবাক করেছে।" 

জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট এ আইনকে কোন যুক্তিতে গোপনীয় শ্রেণিভুক্ত করা সম্ভব তা ‘বোধগম্য নয়’ মন্তব্য করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, "এর ফলে এই সংশোধনের মাধ্যমে জনস্বার্থের তুলনায় কোনো বিশেষ মহলের দুরভিসন্ধির সুরক্ষাকেই আবারো প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে কি না, এ প্রশ্নের অবকাশ সৃষ্টি হয়েছে। 

“গোপনীয় নয় এমন একটি আইনের খসড়া প্রকাশে অনীহা ধোঁয়াশা সৃষ্টি করছে, বিশেষ করে এ কারণে যে ব্যাংক খাতের নীতিকাঠামো ইতোমধ্যে ঋণখেলাপি, বিভিন্ন প্রকার জালিয়াতি ও অর্থপাচারের সঙ্গে জড়িত প্রভাবশালী মহলের করায়ত্ত হয়েছে বলে জনমনে ব্যাপক উদ্বেগ বিরাজ করছে।" 

পাঁচ বছর আগে সংসদের ভেতরে ও বাইরে সমালোচনার মধ্যেই ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে কোনো ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে একসঙ্গে এক পরিবারের চার সদস্য থাকার সুযোগ দেওয়া হয়; এর আগে যা ছিল দুই জন।

এরপর ব্যাংক খাতের অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে ধারাবাহিক সমালোচনা এবং সুশাসন ফেরাতে বিভিন্ন মহলের দাবির প্রেক্ষাপটে আইনটি আবার সংশোধনের উদ্যোগ নেয় সরকার। ২০২১ সালের ১৭ মে এজন্য সংশোধনের খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। এ বছর ২৮ মার্চ তাতে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. মাহমুদুল হোসাইন খান সেদিন সাংবাদিকদের বলেন, খসড়ায় ব্যাংক-কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে একক পরিবারের সদস্য সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে।

“এটা আগে ছিল চার, এটাকে তিন করা হয়েছে। কোনো একটা পরিবারের সর্বোচ্চ তিনজন একটা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে সদস্য হিসাবে থাকতে পারবেন।”

নতুন আইনে ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতাদের বিষয়ে একগুচ্ছ পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি এর সংজ্ঞা নির্ধারণের কথাও সাংবাদিকদের বলেন মাহমুদুল হোসাইন।

ব্যাংক কোম্পানি আইন সংস্কারে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলেরও (আইএমএফ) পরামর্শ ছিল। ইউক্রেইন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও বিদেশি মুদ্রা সংকটের চাপ সামাল দিতে সংস্থাটির কাছ থেকে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ নেওয়ার সময় সমঝোতায় আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে এ আইন সংস্কারে সম্মতি দেয় বাংলাদেশ।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বিবৃতিতে বলেন, “খসড়াটি অবিলম্বে অতি জরুরি বিবেচনায় জনস্বার্থে প্রকাশ করুন এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনের মতামত গ্রহণ করার পর্যাপ্ত সুযোগ সৃষ্টি করুন।" 

তবে ব্যাংক খাতে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ বিষয়ে টিআইবির ‘গবেষণাপ্রসূত সুপারিশের’ সঙ্গে ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধনের লক্ষ্যে গৃহীত এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে টিআইবি।  

বিবৃতিতে বলা হয়, “সম্পূর্ণ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট খাতে অংশীজন, বিশেষ করে এ খাতের বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে তাদের মতামতের ভিত্তিতে খসড়াটি চূড়ান্ত করতে হবে। তা না হলে ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারের সদিচ্ছা প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যাবে।” 

Also Read: ব্যাংকে কমছে এক পরিবারের পরিচালকের সংখ্যা

Also Read: ব্যাংকে সুশাসন আনতে ‘কঠোর’ হচ্ছে আইন

Also Read: আপত্তি নিয়েই সংশোধন হল ব্যাংক কোম্পানি আইন