ফলে গ্রাহক পর্যায়ে ডলারের দর আরও বাড়ল।
Published : 05 Jun 2023, 11:39 PM
চাহিদা আগের পর্যায়ে থাকলেও জোগান কমছে ডলারের। এতে আন্তঃব্যাংক লেনদেনে এ বৈদেশিক মুদ্রার দর উঠল ১০৮ টাকা ৮০ পয়সায়। এক বছর আগে ডলারের বিনিময় হার বাজারের উপর ছেড়ে দেওয়ার পর এটাই সর্বোচ্চ।
বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে আন্তঃব্যাংকের যে দর বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার প্রকাশ করেছে, তাতে ডলারের এই দর দেখা যায়।
এর আগে গত ১৬ মে প্রথমবারের মতো আন্তঃব্যাংকে ডলারের দর উঠেছিল ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা। এরপর সামান্য কিছু বেড়ে ১০৮ টাকা ৭০ পয়সা পর্যন্ত উঠে ফের ১০৮ টাকা ৫০ পয়সায় নেমে অবস্থান করছিল মে মাসের শেষের দিকে। সোমবার তা বাড়ল আরও ৩০ পয়সা।
ডলারের এ দরের সঙ্গে ব্যাংক গ্রাহকের কাছ থেকে কমিশন আকারে ১০ থেকে ৫০ পয়সা পর্যন্ত যোগ করে। ফলে গ্রাহক পর্যায়ে ডলারের দর আরও বাড়ে।
রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় দেশের ডলার উপার্জনের মূল ক্ষেত্র।
গত মে মাসে দেশে রেমিটেন্স এসেছে ১৬৯ কোটি ১৬ লাখ ডলার, যা ২০২২ সালের মে মাসের চেয়ে ১৯ কোটি ৩৭ লাখ ডলার বা ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ কম। গত বছরের মে মাসে রেমিটেন্স এসেছিল ১৮৮ কোটি ৫৩ লাখ ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ১১ মাসে গড়ে রেমিটেন্স এসেছে ১ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার।
আর গত এপ্রিলে মাস শেষে চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে গড় রপ্তানি আয় ছিল ৪ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার।
অবশ্য গত মার্চ ও এপ্রিলে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি থাকা রপ্তানি আয় মে মাসে ২৬ দশমিক ৬১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা গিয়েছে।
অন্যদিকে গত এপ্রিলে মাস শেষে চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে আমদানি খরচ গড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার।
বৈদেশিক মুদ্রা আয়-ব্যয়ের এ খরচে ঘাটতি দেখা দেওয়ায় সর্বশেষ গত ১ জুন রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয়ের বিপরীতে ডলারের দর ফের বাড়ায় বাফেদা (বাংলাদেশে ফরেইন এক্সচেঞ্জ ডিলার অ্যাসোসিয়েশন)।
নতুন দরে রেমিটেন্সে প্রতি ডলারে পাওয়া যাবে ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা, আর রপ্তানিকারকরা প্রতি ডলারের বিপরীতে ১০৭ টাকা পাবেন।
মঙ্গলবার বাফেদা ব্যাংকগুলোকে ডলারের দর সরবরাহ করেছে, তাতে দেখা যায় প্রায় সবগুলো ব্যাংকে আমদানি পর্যায়ে ডলারের দর ছিল সর্বোচ্চ ১০৭ টাকা ।
শুধু ইসলামী ব্যাংক আমদানিকারকদের কাছে ডলার বিক্রি করেছে সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা ৫ পয়সায়, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ১০৮ টাকা ১৯ পয়সায়, অগ্রণী ব্যাংক ১০৮ টাকা ৯ পয়সায় ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ১০৮ টাকা ৯ পয়সায়।
এতে রপ্তানি ও রেমিটেন্সে ডলার দরের ব্যবধান ২ টাকা থেকে কমে দেড় টাকায় নেমে এল। এর আগে গত ১ মে ডলারের দর বাড়িয়ে রেমিটেন্সে ১০৮ টাকা ও রপ্তানিতে ১০৬ টাকা করেছিল বাফেদা।
ওই সভার সিদ্ধান্ত ছিল রপ্তানি ও রেমিটেন্সে ডলার দরের ব্যবধান অন্তত ২টাকা থাকবে। প্রথমবার সিদ্ধান্ত নিয়েই রপ্তানি ও রেমিটেন্সে দুই টাকা ব্যবধান ঠিক করেছিল বাফেদা ও এবিবি।
বর্তমানে আমদানি, রপ্তানি, রেমিটেন্স ও নগদ বিক্রিতে ডলারের দর ভিন্ন ভিন্ন। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফের পরার্মশ রয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার একাধিক দর না রেখে একক দর রাখা।
পরামর্শ মেনে আমদানি, রপ্তানি, রেমিটেন্স ও নগদ কেনাবেচায় বিদেশি মুদ্রার একাধিক বিনিময় হারকে একটিতে নামিয়ে আনার প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক; আগামী মুদ্রানীতিতে বিনিময় হার নির্ধারণের পদ্ধতি এবং তা বাস্তবায়নের বিষয়ে বিস্তারিত থাকবে বলেও জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গত ৭ মে আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সমাপনী বৈঠকের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক সাংবাদিকদের বলেছিলেন, একক হার মানে এই নয় যে সবক্ষেত্রে অর্থাৎ আমদানি, রপ্তানি, রেমিটেন্স ও নগদ কেনাবেচায় একটি বিনিময় হার হবে। তবে প্রতিটি দরের সঙ্গে আরেকটির পার্থক্য হবে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ।