ব্যাংকাররা বলছেন, কার্ডে অর্থ তোলার পরিমাণ দিন দিন বাড়ছেই। কিছু কিছু দেশে তা ‘অস্বাভাবিক’ মনে হওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ব্যাংক।
Published : 25 Dec 2023, 10:23 PM
সব ধরনের কার্ডে বিদেশের এটিএম বুথ থেকে নগদ অর্থ উত্তোলন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
ব্যাংকাররা বলছেন, কার্ডে অর্থ তোলার পরিমাণ দিন দিন বাড়ছেই। কিছু কিছু দেশে তা ‘অস্বাভাবিক’ মনে হওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ব্যাংক।
গ্রাহকদের মোবাইলে এসএমএস বার্তা দিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক বলেছে, “ব্র্যাক ব্যাংক কার্ড দিয়ে দেশের বাইরে সকল প্রকার ক্যাশ উত্তোলন স্থগিত করা হয়েছে।আপনার ভ্রমণ কোটার মধ্যে পস মেশিন এবং ই- কমার্স-এর মাধ্যমে যে কোনো বৈধ কেনাকাটা করতে পারবেন।”
গত রোববার থেকে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে জানিয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আরএফ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ডিজিটাল ও স্মার্ট বাংলাদেশের গঠনকল্পে আমাদের ব্যাংকের নীতি হল ডিজিটাল ও ইলেকট্রনিক পেমেন্টের সক্ষমতাকে উৎসাহিত করা এবং নগদ লেনদেন নিরুৎসাহিত করা। সে কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমরা একটি পদক্ষেপ নিয়েছি, যেখানে বাংলাদেশের বাইরে ইলেকট্রনিক ডেবিট বা পেমেন্ট চালু থাকবে, শুধুমাত্র নগদ উত্তোলন বন্ধ থাকবে। কয়েক বছর আগে আমরা বাংলাদেশের ভেতরে ক্রেডিট কার্ডেও নগদ উত্তোলন বন্ধ করেছিলাম। এগুলো ব্যাংকের নিরাপত্তা ও গ্রাহকের সুরক্ষার জন্য নেওয়া আমাদের বিভিন্ন পদক্ষেপের অংশ।”
পর্যাপ্ত বিদেশি মুদ্রার নগদ মজুদ থাকার কথা জানিয়ে সেলিম আরএফ বলেন, গ্রাহকের চাহিদায় ভ্রমণ কোটায় বিদেশে যাওয়ার সময়ে প্রয়োজনীয় পরিমাণ নগদ ডলার দিচ্ছে ব্র্যাক ব্যাংক। সেজন্য বিদেশে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা উত্তোলনের প্রয়োজন হবে না।
ইলেক্ট্রনিক লেনদেনের তথ্য ‘সহজে সংরক্ষণ ও নীরিক্ষাযোগ্য’ হওয়ায় ব্র্যাক ব্যাংক অনলাইনে লেনদেনে উৎসাহ দিচ্ছে বলে জানান তিনি।
বৈদেশিক মুদ্রা নীতিমালা অনুযায়ী, ভ্রমণ কোটায় একজন বছরে ১২ হাজার ডলার সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা ব্যবহার করতে পারেন। নগদ বা কার্ডে এই অর্থ খরচ করা যায়। তবে ভ্রমণ কোটায় পাওয়ায় বিদেশি মুদ্রার সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ কার্ড থেকে তোলার সুযোগ রয়েছে।
নগদ অর্থ উত্তোলনের হার খুব বেশি না, তারপরও কিছু ব্যাংক বাড়তি সতর্কতা হিসেবে সুবিধাটি বন্ধ করছে বলে মনে করেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ক্রেডিট কার্ডে লেনদেনের একটি সীমা থাকে গ্রাহকভেদে। সব ব্যাংকই এই সীমা নির্ধারণ করে দেয়, যা মোট ভ্রমণ কোটার চেয়ে অনেক কম হয়।”
ব্যক্তির লেনদেন, পেশার ধরন ও আয়ের তথ্য পর্যালোচনা করেই ব্যাংকগুলো ক্রেডিট কার্ডের সীমা নির্ধারণ করে দেয়।
কাগুজে ডলারের সংকটে বাংলাদেশ ব্যাংক কার্ডে ডলার ব্যবহার করতে উৎসাহ দিয়ে আসছে। স্থানীয় মুদ্রার পাশাপাশি ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডে বিদেশি মুদ্রা ব্যবহার করারও সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক, এই পদ্ধতিতে অনুমোদিত কার্ড ‘ডুয়েল কারেন্সি কার্ড’ নামে পরিচিত ব্যাংকিং খাতে।
বর্তমানে দেশে ৪৩টি ব্যাংক এবং একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ক্রেডিট কার্ড পরিষেবা দিচ্ছে। গত অক্টোবর শেষে তাদের ইস্যু করা বিভিন্ন ধরনের কার্ডের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চার কোটি ১২ লাখ ৪৩ হাজারের বেশি। কার্ডে বিদেশি মুদ্রা খরচের পরিমাণও বাড়ছে দিন দিন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অক্টোবর মাসে শুধু ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে দেশের বাইরে ৩৭৫ কোটি টাকার সম পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা নগদে উত্তোলন করা হয়েছে। এটি ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে হওয়া মোট খরচের ৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ।