“মালিকের কথায় বাড়িতে যাই নাই। উনি ভাবছে, চাঁন রাইতে ম্যালা কাস্টমার আবো। কই কাস্টমার তো নাই!” বলেন এক বিক্রয়কর্মী।
Published : 10 Apr 2024, 10:38 PM
“এইবার সেইরকম ব্যবসা হয় নাই। কাস্টমার খালি দামাদামি করে। বিক্রি তেমন হয় নাই। মাইনষেওবা কী করব? খায়া টাকা থাকলে কিনতাছে, নাইলে নাই।”
ঈদের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে বলছিলেন রাজধানীর গাউছিয়া মার্কেটের জুয়েলারি বিক্রেতা সাব্বির।
চাঁদ রাতে বিক্রি বেশি হবার প্রত্যাশা থাকলেও তাও হচ্ছে না।
সাব্বির বলেন, “চাঁদ রাতে আমাদের বেচাবিক্রি অনেক ভাল হয়। অনেক কাস্টমার আসে। কিন্তু এইবার দেখলাম উল্টা।”
সাব্বিরের মতো আরও অনেক বিক্রেতাই বলছেন, এবার ঈদে তারা আশানুরূপ ব্যবসা করতে পারেননি।
বুধবার শেষ রোজায় রাজধানীর গাউছিয়া, নিউ মার্কেট, ইসমাইল ম্যানশন, নূরজাহান মার্কেট, পলওয়েল মার্কেটে ছিল না তেমন ভিড়; তবে ফুটপাতের দোকানগুলোতে ক্রেতার চাপ ছিল বেশি।
তবে অন্যবার চাঁদ রাতে কেনাকাটায় যে ভিড় থাকত এবার তা দেখা যাচ্ছে না।
ঢাকায় যারা ঈদ করছেন, তারাই ঈদের আগেরদিন ভিড় করছেন এসব দোকানে। ক্রেতাদের বড় একটা অংশ পছন্দের পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে অন্যান্য উপকরণ কিনতে এসেছেন।
শেষ সময়ে জুতা, জুয়েলারি, কসমেটিকস, ওড়না ও হিজাবের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের আনাগোনা দেখা যায়।
বিক্রেতারা বলছেন, দোটানায় না থেকে বেশির ভাগ ক্রেতা মঙ্গলবারই কেনাকাটা সেরে ফেলেছেন। আর লম্বা ছুটি থাকায় ঢাকায় ঈদ করছে- এমন মানুষের সংখ্যাও কম।
পল্টনের পলওয়েল মার্কেটে দেখা যায়, কয়েকটি দোকানে কিছু ক্রেতা থাকলেও বেশকিছু দোকানই ফাঁকা ছিল। ক্রেতারা অলস সময় পার করছেন।
সেখানকার জে এস এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার সোহরাব হোসেন বলেন, “সবাই আগে কেনাকাটা করে ফেলছে। এখন আর মানুষ চাঁদ রাতের আশায় থাকে না।
“দেশের বাড়িতে চলে গেছে অনেকে। অনেকে আবার রিস্ক নেয় নাই। যদি আজকে ঈদ হয়ে যেত, তাই কেনাকাটা সেরে ফেলছে। তার পরও কিছু কাস্টমার আসতেছে।”
এ বিপণিবিতানে কেনাকাটা করতে আসা ইসমাইল হোসেন জানান, তার বোনের ছেলের জন্য তিনি টিশার্ট, প্যান্ট কিনতে এসেছেন।
ইসমাইল বলেন, “আসলে হঠাৎ করে ও দেশের বাইরে থেকে এসেছে। তাই আজকে ওর জন্য কেনাকাটা করতে আসলাম।”
গাউছিয়া মার্কেটের পাশের ইসমাইল ম্যানশন সুপার মার্কেটের নাজলা বিউটিতে কসমেটিকস ও জুয়েলারি আইটেম বিক্রি করা হয়।
এ দোকানের কর্মী শামসুদ্দিন বলেন, “গত কয়েক বছরের তুলনায় এইবার চাঁন রাতে কাস্টমার অনেক কম। এইযে দেখেন দোকান ফাঁকা। এই সময়ে কাস্টমারদের জায়গা দেওয়ার অবস্থা থাকত না, আর এখন দেখেন।
“ঢাকা তো ফাঁকা হয়ে গেছে। সবাই বাড়িতে চলে গেছে বলে মনে হয় এই অবস্থা।”
সেখানকার নূর এ মদিনা দোকানে শিশু ও মেয়েদের রেডিমেইড কুর্তি, ফ্রক ও ওয়ান পিস আইটেম বিক্রি করা হয়।
দোকানি মহসিন হোসেন বলেন, ১৫ রোজা থেকে ২৫ রোজায় তার দোকানে বিক্রি বেশি হয়েছে। বুধবার কিছু ক্রেতা আসছেন।
“সবার তো কেনাকাটা হয়ে গেছে। মোটামুটি ভালো ব্যবসা হইছে। এখন যাদের জরুরি প্রয়োজন, তারাই আসতেছে।”
গাউছিয়া মার্কেটে স্ত্রী ও তিন বছরের মেয়েকে নিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে এসেছেন সারোয়ার আলম।
তিনি বলেন, “এখন একটু ফাঁকা পাব, আর সময়ও পেলাম- তাই আসলাম। আর টুকটাক কিছু কেনাকাটা বাকি আছে। সেগুলোর জন্যই বের হলাম।”
এবার ক্রেতা কম থাকা নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করলেন গাউছিয়া মার্কেটের চমক কসমেটিকসের কর্মী আফজাল হোসেন।
“মালিকের কথায় বাড়িতে যাই নাই। উনি ভাবছে, চাঁন রাইতে ম্যালা কাস্টমার আবো। কই কাস্টমার তো নাই!”
এ মার্কেটে জামার সঙ্গে মিলিয়ে জুয়েলারি পণ্য কিনছিলেন সানজিদা আক্তার।
তিনি বলেন, “একেবারে সময় পাই নাই। কিছু জিনিস কেনা বাকি আছে। এখন তড়িঘড়ি করে কিনছি।”
গাউছিয়া মার্কেটের জুতার দোকান হাবিব সুজে কিছু ক্রেতা সমাগম দেখা গেল।
সেখানকার বিক্রয়কর্মী সুমন বলেন, “কাস্টমার কিছু আসতেছে। তবে ফুটপাতে বেশি কাস্টমার। দোকানে কাস্টমার কম আসে। ভাবে, দোকানে দাম বেশি।”
গাউছিয়া মার্কেটের ফুটপাতের দোকান মা জাহানারা সুজের ভিড় দেখা গেলেও বেচাবিক্রিতে সন্তুষ্ট নন মালিক জাহাঙ্গীর আলম।
“কই, বিক্রি তো তেমন নাই। কাস্টমার দেখে, দামাদামি করে। আবার জায়গা। অন্যান্যবার চাঁন রাইতে ভিড়ের ঠেলায় দাড়ানোর জায়গা পাইতাম না। এইবার তো তেমন নাই।”
এদিকে নিউ মার্কেটের দোকানগুলোও মোটামুটি ক্রেতাশূন্য দেখা যায়। তবে সেখানকার ফুটপাতে দোকানগুলোতে ভিড় দেখা গেছে।
বর্ণালী ফ্যাশনে শিশুদের ও মেয়েদের জামাকাপড় ও কমমেটিকস বিক্রি করা হয়। দোকানটি একেবারে ফাঁকা দেখা গেল।
দোকানটির মালিক রাজিব হোসেন মনে করছেন, আর্থিক সংকটের কারণেই এ পরিস্থিতি।
“আগের চেয়ে অনেক কম বেচাবিক্রি হয়েছে। আর্থিক সংকটের কারণেই এমনটা হয়েছে। সবকিছুরই তো দাম বেশি। আগে খেয়ে পরে মানুষ জিনিস কিনতেছে। বাচ্চাদের ড্রেস এবার বেশি বিক্রি হইছে। বাচ্চারটা কিনে টাকা থাকলে নিজের জন্য কিনছে।”
নিউ মার্কেটের ম্যাপল হিজাব কালেকশন ও স্বপ্নীল ম্যাচিং সেন্টারে ক্রেতাদের ভিড় ছিল তুলনামূলকভাবে বেশি।
বিক্রয়কর্মী তাহের মিয়া বলেন, “এখন মানুষ মিলায় হিজাব, ওড়না কিনতেছে। তাই একটু ভিড় দোকানে।”
এদিকে মিরপুর ১১ নম্বর মার্কেট ও ১০ নম্বরের ফুটপাতেও ক্রেতাদের ভিড় ছিল বেশি।
মিরপুর ১১ নম্বরের মায়ের দোয়া ওড়না হাউজের কর্ণধার সারোয়ার আলম বলেন, “আমাদের দোকানে গত এক সপ্তাহ ধরে ভালই ভিড়। মানুষ শেষ সময়ে কেনাকাটা সারছেন।”
শেষ সময়ে বিক্রেতারা বেশি দামে পণ্য বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ করছেন ক্রেতারা।
শারমিন আক্তার মিরপুর ১১ নম্বর মার্কেট থেকে ওড়না কিনছিলেন।
তিনি বলেন, “এখন তো আমরা কিনবোই। ওরাও দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ৩০০ টাকার ওড়না ৪০০-তে বিক্রি করছে।”
মিরপুর ১০ নম্বরের ফুটপাতে পাঞ্জাবি, পায়জামা, শার্ট, প্যান্ট, জুতা, জুয়েলারি ও বাচ্চাদের পোশাকের অস্থায়ী দোকানগুলোতেও ক্রেতাদের ভিড় ছিল বেশি।