নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে ৪ ‘ভুল ধারণায়’ পিছিয়ে বাংলাদেশ: সানেম

“গত ১০ বছরে যা যা পলিসি নিয়েছি, আমরা ফেল করেছি,” বলেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 August 2023, 05:21 PM
Updated : 9 August 2023, 05:21 PM

নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে বাংলাদেশে চারটি ‘ভুল ধারণা’ প্রচলিত রয়েছে চিহ্নিত করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেম বলছে, এগুলোই এ খাতে পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ।

বুধবার ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে যত ভুল ধারণা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে ভুল ধারনার এসব বিষয় শুধরে নীতি কৌশল পর্যালোচনা, অঙ্গীকারের বাস্তবায়ন, সঠিক নীতি ব্যবস্থাপনা ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণের পরামর্শ এসেছে।

ওয়েবিনারে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এর সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট ইশরাত হোসাইন গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির চিহ্নিত করা ভুল ধারণার বিষয় চারটি তুলে ধরেন। পরে প্যানেল আলোচকরা করণীয় নিয়ে নানান পরামর্শ দেন।

এসব ভুল প্রথমটি হল- সৌরবিদ্যুৎ প্যানেলের জীবনচক্র শেষ হবার পর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং ব্যাটারির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিবেচনা করলে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন বাণিজ্যিকভাবে অবাঞ্চনীয় হয়ে যাবে।

জমির অপ্রতুলতাকে সবচেয়ে বড় বাধা এবং বিদ্যমান সৌর প্রযুক্তির সঙ্গে ব্যাটারির স্টোরেজ যুক্ত করলে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ নাগালের মধ্যে থাকবে না- এ দুটি প্রচলিত ধারণা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয় সানেমের উপস্থাপনায়।

সবশেষে ‘বাংলাদেশের পক্ষে ২০৪০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে লক্ষস্থিত ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব’ ঘোষণাকেও ভুল বলে চিহ্নিত করা হয়।

Also Read: বায়ু বিদ্যুতে কেন পিছিয়ে বাংলাদেশ?

Also Read: আকাশ থেকে দেশের সবচেয়ে বড় সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র দেখলেন প্রধানমন্ত্রী

Also Read: কক্সবাজারে হচ্ছে ‘সবচেয়ে বড়’ বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র

আলোচনায় জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম এসব বিষয়ে একমত পোষণ করে বলেন, “গত ১০ বছরে যা যা পলিসি নিয়েছি, আমরা ফেল করেছি। আমরা ইন্টিগ্রেটেড রিসোর্স প্ল্যানিং এর কথা যদি বলি, আমাদেরকে এখন পলিসি রিভিউ করতে হবে।”

জমি সংকট কাটাতে তিনি রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের এলাকা এবং পরিত্যক্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ব্যবহারের পরামর্শ দেন। বিশ্ব ব্যাংকের গবেষণার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, এসব জায়গায় সৌর পার্ক থেকে ছয় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া সম্ভব।

নেটওয়ার্কিং সমস্যার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রত্যন্ত এলাকা থেকে তার টানার খরচ এত বেশি যে পার ইউনিটে খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে।

নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যাপারে সরকারের সদিচ্ছার অভাব আছে বলেও মনে করেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা বলেন, এসব ভুল ধারণা কাদের মধ্যে বিদ্যমান, সেদিকে সবার আগে আলোকপাত করা দরকার। তা না হলে এ আলোচনা আবার নতুন এক ভুল ধারণা তৈরি করবে।

জমি ছাড়া সৌরবিদ্যুতে উন্নয়ন সম্ভব নয় এ ধারণাকে ভিয়েতনাম চ্যালেঞ্জ করে সম্প্রতি ১৬ হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতা বাড়িয়েছে বলে জানান তিনি। ছাদে সৌর প্যানেল বসিয়ে তারা এটা সম্ভব করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিসের (আইইইএফএ) জ্বালানি বিশ্লেষক শফিকুল আলম এ খাত থেকে ২০৪০ সালের মাঝে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ঘোষণা ‘অযৌক্তিক’ মনে করে বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগোনোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

এ খাতে প্রযুক্তি ও উপকরণ আনতে শুল্ক কমানোর তাগাদাও দেন তিনি।

ওয়েবিনারে সূচনা বক্তব্যে সানেমের গবেষণা পরিচালক অধ্যাপক সায়েমা হক বিদিশা জ্বালানি ব্যবস্থাপনাও ওপর গুরুত্ব দিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের বিভিন্ন অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সঠিক নীতি ব্যবস্থাপনা, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা এবং বাজেটে বরাদ্দ রাখার কথা বলেন।