শুল্ক কমলে দামও কমবে, দাবি সিমেন্ট ব্যবসায়ীদের

সিমেন্ট ব্যবসায়ীদের দাবি, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম কমার পরও সেগুলো আমদানিতে সরকারের শুল্কায়নের কারণে তারা সিমেন্টের দাম কমাতে পারছেন না।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Dec 2022, 12:20 PM
Updated : 13 Dec 2022, 12:20 PM

ডলার সংকট, এলসি খুলতে না পারা এবং কাঁচামাল আমদানিতে ‘শুল্ক বৃদ্ধির’ কারণে দেশে সিমেন্টের দাম কমছে না বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা।

তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সিমেন্টের কাঁচামালের দাম কমে যাওয়ার পরও তারা সিমেন্টের দাম কমাতে পারছেন না। এর কারণ সরকার সিমেন্টের কাঁচামালের ওপর ‘আকস্মিক শুল্কায়ন’ করেছে। সরকার শুল্ক আগের মত রাখলে তাদের পক্ষে দাম কমানো সম্ভব।

মঙ্গলবার ঢাকার একটি হোটেলে সিমেন্ট শিল্পের চিত্র তুলে ধরে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমএ) সভাপতি এবং ক্রাউন সিমেন্টের ভাইস-চেয়ারম্যান মো. আলমগীর কবির।

তিনি বলেন, “আমাদের সাথে কাস্টমারদের একটা বড় ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে। তারা (কাস্টমার) বলছে যে আন্তর্জাতিক বাজারে সব ধরনের কাঁচামালের মূল্য কমেছে, কিন্তু আমাদের সিমেন্টের মূল্য কেন কমছে না।

“আমরা বলতে চাই যে সিমেন্টের মূল্য কমার সম্ভাবনা ছিল; কিন্তু ডলার ক্রাইসিস, এলসি খোলা যাচ্ছে না, পাশাপাশি সরকার বর্তমানে কাঁচামালের ওপর যে শুল্কায়ন করেছে… এইটা মূল বিষয়। সরকার যদি শুল্কায়ন আগের মতো রাখে, তাহলে আমরা দাম কমাতে পারব।”

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ডলার সংকটের বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে দেশের নির্মাণ খাতে। রড, সিমেন্টসহ সব ধরনের নির্মাণ সামগ্রীরই দাম বেড়েছে গত কিছুদিনে।

এর মধ্যে খুচরা পর্যায়ে সিমেন্টের ৫০ কেজির বস্তার দাম বেড়ে কোম্পানিভেদে দাঁড়িয়েছে সোয়া পাঁচশ থেকে সাড়ে পাঁচশ টাকা, অগাস্টেও যা ৫০০ টাকার নিচে ছিল।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আলমগীর কবির বলেন, “কাঁচামাল আমদানি পর্যায়ে আকস্মিক সম্পূরক শুল্ক আরোপ ও অতিরিক্ত অগ্রিম করারোপ, জ্বালানি সংকট, সমন্বয় অযোগ্য অগ্রিম কর, পরিবহন ভাড়া ও ডলারের মূল্য বৃদ্ধিসহ নানামুখী সমস্যায় সিমেন্ট শিল্প বর্তমানে এক কঠিন সময় পার করছে।

“তবে সরকারের যথাযথ পদক্ষেপের মাধ্যমেই সিমেন্টে শিল্পের এসব সমস্যার সমাধান সম্ভব। অন্যথায় এটি দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করতে পারে ।”

অগ্রিম করারোপের ব্যাপারে তিনি বলেন, “অ্যাডভান্সড ট্যাক্স হবে প্রফিটের ওপর। প্রফিট তো আমরা করতে পারছি না। ট্যাক্স নিচ্ছে জোর করে। সেটার একটা বড় ইম্প্যাক্ট পণ্যের ওপর পড়ছে।

সিমেন্টের পাঁচটি প্রধান কাঁচামাল (ক্লিংকার, প্লাগ, লাইমস্টোন, ফ্লাই অ্যাশ এবং জিপসাম) বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় জানিয়ে সেগুলো আমদানিতে এলসি খুলতে না পারার কথা বলেন আলমগীর কবির। 

“আমদানির ক্ষেত্রে ঋণপত্র (এলসি) খোলা যাচ্ছে না। এলসি খোলার জন্য আমরা ব্যাংকের কাছে গিয়ে ধর্না দেই, কিন্তু তারা বলছে যে, ডলার সংকটের কারণে তারা রিস্ক নিতে চাচ্ছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমাদের বিশেষ অনুরোধে ছোট ছোট করে এলসি খুলতে হচ্ছে।”

এক্ষেত্রে ২০ শতাংশ মূলধনী লোকসানের দাবি করে তিনি বলেন, “ডলার মূল্য বৃদ্ধির কারণে আগে এলসি খোলার জন্য আমাদের মার্জিন দিতে হত ৫ শতাংশ। যাদের কর্পোরেট ইমেজ আছে, তারা জিরো মার্জিনেও করতে পারত। কিন্তু এখন ২০ শতাংশ পর্যন্ত মার্জিন দিতে হচ্ছে। এছাড়াও ডলারের মূল্য বেশি হওয়ার কারণে স্বাভাবিকভাবেই ২০ শতাংশ বেশি পুঁজির দরকার হচ্ছে আমাদের।”

তিনি তথ্য দেন, সিমেন্ট শিল্পের কাঁচামাল লাইমস্টোনের উপর আকস্মিক ৩০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ও ৩ শতাংশ অগ্রিম আয়করের সাথে আরও ২ শতাংশ অতিরিক্ত অগ্রিম আয়কর আরোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি লাইমস্টোন আমদানিতে আগে থেকেই ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর ও ৩ শতাংশ অগ্রিম কর বিদ্যমান রয়েছে।

“লাইমস্টোনের উপর আকস্মিক সম্পূরক শুল্ক ধার্যের কারণে এ খাত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই অতিরিক্ত শুল্কায়নের ফলে বর্তমানে আমদানি মূল্যের উপর প্রায় ২৭ শতাংশের পরিবর্তে প্রায় ৬৭ শতাংশ শুল্ক ও কর পরিশোধ করে লাইমস্টোন ছাড় করাতে হচ্ছে।”

লিখিত বক্তব্যে বিসিএমএ সভাপতি আলমগীর বলেন, “অতিরিক্ত শুল্কায়নের ফলে বর্তমান ডলার সংকটের অতিরিক্ত চাপ বাড়বে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমদানি পর্যায় প্রতিষ্ঠান লোকসান করলেও তাকে চূড়ান্ত কর দায় হিসেবে এই অগ্রিম আয়কর পরিশোধ করতে হবে, যা কোনো বিবেচনাতেই গ্রহণযোগ্য নয়।”

আমদানি ও বিক্রয় উভয় পর্যায়ে অগ্রিম আয়কর কমিয়ে সর্বোচ্চ শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ ধার্য করার দাবি জানান তিনি।

বিসিএমএ’র জানিয়েছে, বর্তমানে দেশে প্রায় ৩৫টি দেশি ও বিদেশি কোম্পানি সিমেন্ট উৎপাদনে জড়িত। দেশে বার্ষিক কার্যকরী উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৭৯ মিলিয়ন টন। উৎপাদনের বিপরীতে চাহিদা রয়েছে প্রায় ৩৯ মিলিয়ন টন।