নতুন স্থানে অনেক সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতেও ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা কিছুতেই যাবেন না।
Published : 08 Jun 2023, 09:20 PM
কারওয়ান বাজারের ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট থেকে ব্যবসায়ীদের সরে যাওয়ার আহ্বান জানালেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। তবে ব্যবসায়ীরা কোনো অবস্থায়ই ওই স্থান ছাড়তে চান না।
এরপর মেয়র ব্যবসায়ীদের কাছে প্রশ্ন রাখলেন, ঝুঁকিপূর্ণ এসব ভবন ধসে কেউ হতাহত হলে তার দায় কে নেবে?
বৃহস্পতিবার কারওয়ান বাজারে টিসিবি ভবন মিলনায়তনে কারওয়ান বাজারের কাঁচাবাজার ও মার্কেট স্থানান্তরের জন্য মতবিনিময় সভা করে ডিএনসিসি।
মেয়র আতিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা ছাড়াও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং ডিএনসিসির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ডিএনসিসির মেয়র এবং কর্মকর্তারা বক্তব্য দেওয়ার সময় বেশ কয়েকবার হইচইও করেন ব্যবসায়ীরা।
মতবিনিময় সভার শুরুতে ব্যবসায়ীরা বক্তব্য রাখেন। প্রায় সবাই বলেন, তারা কারওয়ান বাজার থেকে যেতে চান না। যে কোনো উন্নয়ন কাজই করা হোক, ব্যবসায়ীদের সেখানে রেখেই করতে হবে।
কারওয়ান বাজার ক্ষুদ্র কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির কোষাধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন বলেন, সেখানে দুই হাজার ব্যবসায়ী রয়েছেন। তাদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কয়েক লাখ মানুষের জীবিকা জড়িত। কারওয়ান বাজার স্থানান্তর করলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
তিনি বলেন, “আমাদের দাবি, আমরা যেন এখানেই থাকতে পারি সে ব্যবস্থা করা হোক।”
আনিসুল হক ঢাকা উত্তরের মেয়র থাকার সময়ও কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীদের সরানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। মহাখালীতে ডিএনসিসি মার্কেটও তৈরি হয় তাদের স্থানান্তরের জন্য। তবে ব্যবসায়ীরা সরতে রাজি হননি।
সম্প্রতি ঢাকায় কয়েকটি বড় অগ্নিকাণ্ডের পর ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে ফায়ার সার্ভিস। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ভেঙে ফেলার কথাও আসে আলোচনায়।
ঢাকায় ‘পরিত্যক্ত’ মার্কেটে বাধাহীন ব্যবসা
উচ্ছেদের আগে পুনর্বাসন চান কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা
মেয়র আতিক বলেন, “ডিএনসিসি এসব মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেনি। ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের কমিটির প্রকৌশলীদের মতামতের ভিত্তিতে এসব মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। তারা স্থানীয় সরকারমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ডিএনসিসিতে চিঠি দিয়ে এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। এ কারণেই ডিএনসিসি ভবনগুলোয় ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ সাইনবোর্ড লাগিয়েছিল।
“কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হলো, আপনারা সেই সাইনবোর্ডটাও লুকিয়ে ফেলেছেন। সাইনবোর্ডটা কেন লুকালেন? এই মার্কেটটা যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে, সেই দায়িত্ব কে নেবে?”
এ সময় ব্যবসায়ীরা বলে ওঠেন, তাদের জীবনের ঝুঁকি তারাই নেবেন।
জবাবে মেয়র বলেন, “আপনারা ঝুঁকি নিতে চান, নেবেন। কিন্তু এখানে যে ক্রেতারা আসবেন দুর্ঘটনায় তারা নিহত হলে সেই দায় কি আপনারা নেবেন?”
কারওয়ান বাজারকে স্থানান্তরের জন্য যাত্রাবাড়ী, গাবতলী এবং মহাখালীতে জায়গা ঠিক রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, যাত্রাবাড়ীতে ৮৯৫টি দোকান নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে তার কথা হয়েছে।
“আমি আপনাদের যে মার্কেট দেব, সেই মার্কেট কারওয়ান বাজার থেকে একশ গুণ ভালো হবে। ৪১ হাজার স্কয়ার ফিট জায়গা আছে শুধু চলাচলের জন্য।”
এ সময় ব্যবসায়ীরা না যাওয়ার আওয়াজ তুলে কিছুক্ষণ হইচই করেন।
মেয়র আতিক পরে বলেন, “কারওয়ান বাজার স্থানান্তরের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীরও নির্দেশনা আছে। মার্কেট এখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে। তবে কিছু অংশ রেখে দেওয়া যেতে পারে।
“মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দেন, সেটা আমার জন্য অনুশাসন হয়ে যায়। এ জন্য আমরা এই কাজগুলো (মার্কেট স্থানান্তর) করছি। মার্কেট এখান থেকে সরে যাবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয় বলেছেন, এখানে মার্কেটের কিছু একটা অংশ রেখে দেওয়া যেতে পারে। তবে কাঁচাবাজার অবশ্যই চলে যাবে।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, “ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এবং দূষিত শহর। এই শহরকে কীভাবে আরও সুন্দর আরও পরিচ্ছন্ন করা যায়, সে চিন্তা থেকেই কারওয়ান বাজারকে ঢেলে সাজানোর চিন্তা করা হচ্ছে।
“এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। পুরো বাজারকে আরেকটু সরিয়ে নিলে এই জায়গাটি আরও সুন্দর হবে। কিন্তু এটা কোনো ব্যবসায়ীকে একেবারে শুইয়ে দিয়ে, তার ব্যবসা নষ্ট করে বাস্তবায়নের চিন্তা করা হচ্ছে না। আপনারা যেন আরও ভালোভাবে থাকেন সেই চিন্তা করা হচ্ছে।”
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, “শহর আধুনিকায়নের জন্য অনেক পরিবর্তন করতে হয়। তবে কারওয়ানবাজার স্থানান্তর করতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হবে না।
“এখানে এক সময় মার্কেট ছিল। সময়ের চাহিদায় পরিবর্তন করতে হয়। পৃথিবীর অনেক শহরেই এ ধরনের পরির্তন হয়ে থাকে। এখানে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে যেন ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।”