উচ্ছেদের আগে পুনর্বাসন চান কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা

“আমরা অস্থায়ী বা ফুটপাতের ব্যবসায়ী না। এখানে বাৎসরিক লেনদেন ৩০০-৩৫০ কোটি টাকা। আমরা দীর্ঘদিন যাবত সরকারকে ভ্যাট, ট্যাক্স, রাজস্ব সব দিয়ে আসছি।”

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 May 2023, 11:25 AM
Updated : 24 May 2023, 11:25 AM

‘ঝুঁকি’ বিবেচনায় ‘পরিত্যক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষিত ঢাকার কারওয়ান বাজার কাঁচামালের আড়তের দোতলা অংশ ‘সিলগালা’ করে দেওয়ার আগে ‘পুনর্বাসন’ করার দাবি জানিয়েছেন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা।

এ বাজারের আড়ত ব্যবসায়ী মালিক বহুমুখী সমবায় সমিতির নেতাদের অভিযোগ, তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা না করেই সিটি করপোরেশন দোতলার অংশ ‘সিলগালা’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুর রহমান চৌধুরী বুধবার আড়ত ভবনের নিচতলায় এক সংবাদ সম্মলেনে বলেন, মার্কেট সিলগালা করার আগে সেখানকার ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন করতে হবে।

“আমরা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানতে পারছি, বৃহস্পতিবার এটা সিলগালা বা বন্ধ করে দেওয়ার চিন্তা করছে সিটি করপোরেশন। কিন্তু এই মার্কেটের সঙ্গে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান জড়িয়ে আছে। আমাদের দাবি হল, মার্কেট বন্ধ না করে এই লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে, বিশেষত পুনর্বাসন করে তবে যেন পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।”

এর আগে গত ১১ মে কাঁচামালের আড়ত ভবনের দোতলা অংশ বন্ধ করতে গিয়েছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। কিন্তু ব্যবসায়ীদের বাধায় সেদিন তারা তা করতে পারেননি।

সাইফুর রহমান বলেন, “সেইদিন করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানিয়ে গিয়েছিলেন, ২৫ মে কাঁচামালের আড়ত মার্কেটের দোতলা অংশ সিলগালা করে দেওয়া হবে।“

ব্যবসায়ী সমিতির এই নেতার ভাষ্য, এই মার্কেট যদি বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে অন্তত ১ লাখ মানুষ কাজ হারাবে।

“সব আড়ৎ মালিক ব্যবসায়ীদের অধীনে অসংখ্য লেবার, ভ্যান ড্রাইভার, কুলি কর্মহীন হয়ে পড়বে। তাদের পরিবার এই কর্মের উপর নির্ভরশীল। তাদের উপর নির্ভরশীল ব্যক্তিরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে, যা কোনো প্রকার আর্থিক মূল্যে পরিমাপ করা সম্ভব নয়।”

সাইফুর অভিযোগ করেন, “আমাদের সাথে আলোচনা ছাড়াই এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তারা আমাদের সাথে আলোচনা করে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার, নিক। কিন্তু আমরা চাই, এই কারওয়ান বাজারেই আমাদেরকে পুনর্বাসন করা হোক।”

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ৪৩ মার্কেটের মধ্যে ২০টিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।‘ঝুঁকিপূর্ণ’ মার্কেটগুলোর মধ্যে কারওয়ান বাজার ১ নম্বর মার্কেট, কারওয়ান বাজার ২ নম্বর মার্কেট, কারওয়ান বাজার অস্থায়ী কাঁচা মার্কেট (কিচেন মার্কেট), কারওয়ান বাজার কাঁচামালের আড়ত মার্কেট ভবন ‘অতি নাজুক’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে কর্তৃপক্ষ।

২০১৯ সালের ১ এপ্রিল মার্কেটগুলো পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। তবে এসব মার্কেটে এখনও কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

গত এপ্রিলে বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ‘পরিত্যক্ত’ এসব মার্কেট ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত জানায়। সে সময় বলা হয়, রোজার ঈদের পর থেকে পর্যায়ক্রমে ভাঙার কাজ শুরু হবে। এ জন্য ম্যাজিস্ট্রেটও নিয়োগ করা হয়।

সাইফুর রহমান বলছেন, সিটি করপোরেশন কিসের ভিত্তিতে আড়ত ভবন ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা করল, সে বিষয়ে ব্যবসায়ীরা অবগত নন।

“কেন তারা এটাকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করছে, সেটার উত্তর তারাই দিতে পারবে। আমাদের কাছে বুয়েটের রিপোর্ট আছে। বুয়েট ২০১৬ বা ২০১৫ সালে এটা সংস্কারের জন্য পরামর্শ দিয়েছে। তারা কিন্তু বলে নাই যে এটা ঝুঁকিপূর্ণ।”

এই মার্কেট গড়ে তুলতে জায়গা বরাদ্দের ইতিহাস সাইফুর রহমান তুলে ধরেন সংবাদ সম্মেলনে।

তিনি বলেন, “১৯৮৩ সালে আড়াই লক্ষ টাকা সালামি এবং ৫০ হাজার টাকা উন্নয়ন ফি দেওয়ার পরে এই জায়গার বরাদ্দ মেলে। এখানে ভবণ নির্মিত হয়েছে ১৯৮৭-১৯৮৮ সালে। এরপর ১৯৯৩ সালে সিটি করপোরেশন ব্যবসায়ীদের পজিশন হস্তান্তর ও স্থায়ী বরাদ্দ বুঝিয়ে দেন।

“সাধারণত একটা বিল্ডিং-এর মেয়াদ ৯০ থেকে ১০০ বছর থাকে। সেখানে এটা মাত্র ৩০ থেকে ৩২ বছর আগের বিল্ডিং। আর এটা বহুতল ভবন হওয়ার কথা, ১০ তলা। কিন্তু আপাতত এটা দোতলা পর্যন্তই আছে।”

সাইফুর জানিয়েছেন, ‘স্থায়ী’ বরাদ্দ পেয়েই ব্যবসায়ীরা এখানে ‘বৈধভাবে’ ব্যবস করছেন। এছাড়া ব্যবসায়ীরা নিয়মিত সিটি করপোরেশনকে তাদের নির্ধারিত রাজস্ব, ট্রেড লাইসেন্স ফি, আয়করও পরিশোধ করেছেন। এমনকি ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের খাজনাও পরিশোধ করা আছে।

“আমরা অস্থায়ী বা ফুটপাতের ব্যবসায়ী না। এখানে বাৎসরিক লেনদেন ৩০০-৩৫০ কোটি টাকা। আমরা দীর্ঘদিন যাবত সরকারকে ভ্যাট, ট্যাক্স, রাজস্ব সব দিয়ে আসছি।”

কিচেন মার্কেট

কাওরান বাজারের কিচেন মার্কেটের অবস্থাও ‘শোচনীয়’। কিচেন মার্কেটের বাইরের অংশের দেয়ালে নোনা ধরেছে। অনেক জায়গায় কংক্রিটের ঢালাই ভেঙে ভেতরের রড দেখা যাচ্ছে।

এর আগে ব্যবসায়ীদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গিয়েছিল, ঝুঁকি নিয়ে তারা খুব উদ্বিগ্ন নন।

আবেদ হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “ভয় লাগার কী আছে? আর মার্কেট যদি ঝুঁকিপূর্ণ হয়, তাইলে ভাইঙা ফেলে না ক্যান?”

কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন বলেন, “পরিত্যক্ত ঘোষণা করা সহজ। কিন্তু এটা যখন পরিত্যক্ত ঘোষণা করবেন তখন কিছু প্রস্তুতি দরকার।

“এই লোকগুলি কোথায় গিয়ে ব্যবসা করবে? আপনি কোথায় তাদের পুনর্বাসন করবেন? সেটাও আপনাকে ভাবতে হবে।”

পুরনো খবর:

Also Read: ঢাকায় ‘পরিত্যক্ত’ মার্কেটে বাধাহীন ব্যবসা

Also Read: ঢাকার ৮ মার্কেটের গ্যাস পানি বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে চিঠি

Also Read: কোন কোন বিপণি বিতান ঝুঁকিপূর্ণ, জরিপে নামছে ফায়ার সার্ভিস

Also Read: ঝুঁকিপূর্ণ বিপণি বিতান থেকে ব্যবসায়ীদের সরতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান

Also Read: ঈদের পরে বন্ধ করা হবে ঢাকার কিছু মার্কেট: সালমান এফ রহমান