বর্জ্য সংগ্রহকারীরা প্রতি কেজিতে পাচ্ছেন ২ টাকা, আর এসব বর্জ্য কিনলে ভাঙারি দোকানি পাচ্ছেন ১ টাকা করে।
Published : 06 Dec 2023, 07:47 AM
ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও প্রতিদিনের বাজারের সঙ্গে ঘরে ঢুকছে পলিথিন; ময়লা-আবর্জনায় ভরপুর হয়ে সেই পলিথিনই যাচ্ছে ঘরের বাইরে। চট্টগ্রাম নগরে অনেক বর্জ্য অসংগৃহীত থেকে যায় বলে ড্রেন, ডোবা-নালার পাশাপাশি পানি নিষ্কাশণের পথে বাধা সৃষ্টি করে প্লাস্টিক আর পলিথিন। তাতে বৃষ্টি হলেই দেখা দেয় জলাবদ্ধতা।
এ পরিস্থিতি বদলাতে বর্জ্য সংগ্রহকারী ও ব্যবসায়ীদের বাড়তি প্রণোদনা দিয়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নিয়েছে বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় ব্যবহৃত প্লাস্টিকের সঙ্গে ফেলে দেওয়া পলিথিন সংগ্রহ করে সেগুলো বিক্রি করা যাচ্ছে।
এসব কেনা-বেচায় পাওয়া যাচ্ছে আর্থিক প্রণোদনা। তাতে করে প্লাস্টিক ও পলিথিন বেচে আয় বেড়েছে বর্জ্য সংগ্রহকারীদের।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সহায়তায় নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে চট্টগ্রামের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইয়ং পাওয়ার ইন সোস্যাল অ্যাকশন (ইপসা) এ কাজটি পরিচালনা করছে। বর্জ্য ব্যবস্থপনায় গত ২২ জুন তিন পক্ষের মধ্যে চুক্তিও হয়েছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বর্জ্য সংগ্রহের জন্য প্রতিটি বাড়িতে লাল, হলুদ ও সবুজ রঙের ড্রাম রাখা আছে। এসব ড্রামে পচনশীল, প্লাস্টিক ও পলিথিনের মত অপচনশীল বর্জ্য আলাদা আলাদা করে রাখা হয়। দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় সিটি করপোরেশনের বর্জ্য সংগ্রহকারীরা তা নিয়ে যান।
বায়োজিদ এলাকার বাসিন্দা জোসনা আক্তার মিম বলেন, “পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য রাখার জন্য আলাদা আলাদা ড্রামের ব্যবস্থা করায় অনেকেই এখন বর্জ্য আলাদা করে ড্রামে ফেলছেন। প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্য নিয়ে আমাদের মধ্যে সচেতনতা এসেছে।”
নগরীর তালিকাভুক্ত প্লাস্টিক ও পলিথিন সংগ্রহকারীরা বর্জ্য বিক্রির সময় প্রতি কেজিতে দুই টাকা এবং এসব বর্জ্য কিনলে ভাঙারি দোকানি কেজিতে এক টাকা করে প্রণোদনা পাচ্ছেন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ২০০ ভাঙ্গারি দোকান এবং ২ হাজার ৪০০ জন বর্জ্য সংগ্রহকারী প্রতিমাসে এই প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, বন্দর নগরীতে প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজার টন কঠিন বর্জ্য উৎপাদন হয়, যার মধ্যে প্লাস্টিক বর্জ্য প্রায় ২৪৯ টন।
এসব বর্জ্যের ৫৬ শতাংশ অসংগৃহীত থেকে পরিবেশের সঙ্গে মিশে যায়। এসব বর্জ্য নগরীর পানি নিষ্কাশনে বাধা সৃষ্টি করে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, প্রতি বছর বর্ষায় চট্টগ্রাম শহরে জলাবদ্ধতা প্রকট হয়। এই জলাবদ্ধতার জন্য অন্যতম দায়ী হল অপচনশীল প্লাস্টিক বর্জ্য।
“প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে সিটি করপোরেশন কাজ করছে। তবে ইউনিলিভার ও ইপসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার এই কাজকে তরান্বিত করেছে।”
ইপসার প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের ফোকাল কর্মকর্তা মো. আব্দুস সবুর জানান, ২০২২ সালের জুন থেকে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় ১১ হাজার ৫৪২ টন প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব প্লাস্টিক বর্জ্য রিসাইকেল করতে রিসাইকেলারদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোবারক আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্লাস্টিকের সঙ্গে ফেলে দেওয়া পলিথিন বিক্রির পথ তৈরি হওয়ায় পরিবেশের উন্নয়ন হচ্ছে। প্লাস্টিক রিসাইকেলেও গতি এসেছে।
ইউনিলিভার বাংলাদেশের পরিচালক (করপোরেট অ্যাফেয়ার্স, পার্টনারশিপস অ্যান্ড কমিউনিকেশনস) শামীমা আখতার বলেন, “ইউনিলিভারের বৈশ্বিক লক্ষ্য ২০২৫ সাল নাগাদ আমাদের উৎপাদিত প্লাস্টিকের চেয়ে অধিক পরিমাণে প্লাস্টিক সংগ্রহ করা। প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহে একটি টেকসই ভ্যালু চেইন তৈরি করতে আমরা কাজ করছি।”