মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বর থেকে মিরপুর-১৩ নম্বর যাওয়ার পথে হোপ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের আশপাশের কয়েকটি সড়কে গড়ে উঠেছে এই মার্কেট।
Published : 05 Apr 2024, 08:32 AM
‘একদাম চারশো’, ‘বাইছা লন ৪০০’, ‘ওয়ানপিস ৩০০’ বলে বিরতিহীন হাঁকডাকে ক্রেতাদের নজর কাড়তে ব্যস্ত বিক্রেতাদের অন্য কোনোদিকে তাকানোর সময় নেই। আর ঈদ ঘিরে এসব দোকানে ভিড়ও দেখার মত।
বিকিকিনির এই ব্যস্ততা চলে তুলনামূলক কম দামে কেনাকাটার জন্য জনপ্রিয় হয়ে ওঠা রাজধানীর মিরপুরের হোপ মার্কেটে। অন্যান্য মার্কেট ও বিপণী বিতানের মত ঈদ ঘিরে অস্থায়ী দোকান ও ফুটপাতের এই মার্কেটটিও হয়ে উঠেছে দারুণ জমজমাট। যেখানে নানা বয়সী নারীদের ক্রেতার সমাগম থাকে দিনভর।
ঈদ ঘিরে বরাবরের মত এবারো হোপ মার্কেটের দোকানগুলোয় নারী-শিশুদের পোশাক, কসমেটিকস, জুতা, জুয়েলারি, ভ্যানিটি ব্যাগের পাশাপাশি গৃহস্থালি পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসছেন দোকানিরা।
আছে ছেলেদের প্যান্ট-শার্ট, ঘর সাজানোর পর্দা, বিছানার চাদর, টেবিল ক্লথের মত পণ্যও।
মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বর থেকে মিরপুর-১৩ নম্বর যাওয়ার পথে হোপ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের আশেপাশের কয়েকটি সড়কের পাশে ছোট ছোট দোকান বানিয়ে গড়ে উঠেছে এই মার্কেট।
দোকানের পাশাপাশি ফুটপাতও খালি নেই এখানকার। ফুটপাতে পণ্য নিয়ে বসে দেদারে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নানা শ্রেণির মানুষেরই আনাগোনা দেখা যায় এখানে।
এই মার্কেটে আসা ক্রেতারা বলছেন, এখানে কিছুটা সাশ্রয়ী মূল্যে ভালো মানের পণ্য মেলে। আর বিক্রেতাদের ভাষ্য, এক জায়গার মধ্যে নানা ধরনের পণ্য পাওয়ার সুবিধায় ক্রেতারা ভিড় করেন হোপ মার্কেটে।
এই এলাকায় দুই দশকের বেশি সময় ধরে পোশাক বিক্রি করা হাসনা হেনা জানান, ২০১০ সালের পর থেকে আস্তে আস্তে হোপ মার্কেট পরিচিতি পায়।
হাসনা ফ্যাশনের এই স্বত্ত্বাধিকারী বলেন, “হোপ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের আশেপাশে অনেক কোচিং সেন্টার থাকায় এই এলাকায় অভিভাবকদের সমাগম বেশি।
“এই স্কুলের পাশেই অস্থায়ী দোকানে জামাকাপড়সহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রি করতেন দোকানিরা। চাহিদা বাড়ার ফলে এখানে অনেক দোকান হয়েছে পাশাপাশি কয়েকটি মার্কেটও গড়ে উঠেছে।”
ঈদ সামনে রেখে নতুন নতুন ডিজাইনের পোশাক দোকানে তুলেছেন হাসনা। সেসবের কাতান, জর্জেট, অরগেন্ডি, সুতি, লিলেনের থ্রি পিস রয়েছে। বিক্রিও ভালোই হয় বলে জানালেন তিনি।
হোপ মার্কেটের নিয়মিত ক্রেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আতিকা ইসলাম।
তিনি বলেন, “আমার বাসা বেনারসি পল্লীতে। এই মার্কেটটা এই এলাকার বাইরে অনেকেই চেনেন না। যারা চেনেন, তারা নিয়মিতই আসেন। আমি এখানে কেনাকাটা করে আরাম পাই।
“দোকানগুলো পরিচিত। বেশি দরদাম করতে হয় না। আবার আনকমন কালেকশনও আসে। তাই এখান থেকেই কেনাকাটা করা হয় বেশি।”
ঈদ উপলক্ষে পর্দা কিনতে আসা গৃহিণী খালেদা আক্তার বললেন, বড় দোকানে পর্দার দাম অনেক বেশি।
“দাম কম থাকায় এখান থেকেই চাদর, পর্দা কিনি আমি।“
ফুটপাতের দোকান থেকে প্রায়ই জুয়েলারি ও কসমেটিকস কেনেন আয়েশা সিদ্দিকা।
তিনি বলেন, “এখান থেকে কেনাকাটা করাটা একটা অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে। মিরপুর-১০ নম্বরে কোন কাজ থাকলে একটু ঢুঁ দিয়ে যাই। আর জুয়েলারির কালেকশনও এখানে ভালো।”
ফুটপাতের একটি অস্থায়ী দোকান থেকে জিনস দেখছিলেন আরমান হোসেন।
তিনি বলেন, ব্র্যান্ডের দোকান থেকে প্যান্ট কিনতে গেলে তার যে খরচ হয়, তার চেয়ে অনেক কমে তিনি এখান থেকে প্যান্ট কেনেন।
“ধরেন, ব্র্যান্ডের শোরুমে যে প্যান্টটা বিক্রি করে, আমি কাছাকাছি কোয়ালিটির প্যান্টই এখান থেকে কিনি। কিন্তু দামটা অনেক কম থাকে। সেজন্যই এখানে আসা হয়। আমি ১২০ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে এখানে এসে কেনাকাটা করি।”
দিনে দিনে স্কুলের পাশে হোপ মার্কেটে বেচাবিক্রি জমে ওঠায় মিরপুর-১০ নম্বরের বি ব্লকের ১১ নম্বর সড়কে কিছু ফ্ল্যাটবাড়ির ভবন ভাড়া নিয়ে সেখানে হোপ প্লাজা ও মিয়াবাড়ি নামের দুটি মার্কেট গড়ে উঠেছে।
মেয়েদের রেডিমেইড কুর্তি, টপস, থ্রি-পিস, বোরকা, ভ্যানিটি ব্যাগের এই দুই মার্কেট চালু হয়েছে গত ছয় বছর ধরে।
হোপ প্লাজার বিসমিল্লাহ ফ্যাশনের বিক্রয়কর্মী মো. রাসেল বলেন, ঈদ উপলক্ষে তাদের নতুন নতুন কালেকশন এসেছে।
“৫০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে পোশাক রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কুর্তি, গাউন, টপস, লং ফ্রক, বোরকা স্টাউলের গাউন, টু পিসও রেখেছি আমরা।
হোপ প্লাজায় কেনাকাটা করতে আসা কলেজ ছাত্রী ফারহানা আহমেদ বলেন, “সাধ্যের মধ্যে দাম পাই, ভালো জিনিসও পাই এখানে। আমি সবসময় এখান থেকে শপিং করি। ঈদেও এখান থেকে দুটা ড্রেস কিনেছি।”
শ্যাওড়াপাড়া থেকে এই মার্কেটে ঈদের পোশাক কিনতে এসেছেন তাহমিনা সুলতানা।
তিনি বলেন, “কয়েকজনের জন্য ঈদের ড্রেস কিনতে এসেছি। ব্র্যান্ড থেকে কিনতে গেলে সবাইকে গিফট দিতে পারব না। এখানে আনকমন জিনিস পাওয়া যায়। সবচেয়ে বড় কথা, এখানকার জিনিসপত্রের কোয়ালিটি ভালো। ৫ হাজার টাকায় ৫-৬ জনের জন্য ড্রেস কিনতে পারব। সবাই খুশিও হবে।”
হোপ প্লাজার কে বি এন্টারপ্রাইজের বিক্রয়কর্মী কামরুল ইসলাম এবারের ঈদের বেচাবিক্রিতে সন্তুষ্ট নন।
তিনি বলেন, “এবার যেরকম আশা করছিলাম, তেমন কাস্টমার পাই নাই। করোনার পরে এখন তো মানুষ কেনাকাটা করার কথা, কিন্তু আশানুরূপ বিক্রি হচ্ছে না। সবকিছুই তো দাম বেশি। মানুষও চলতে হিমশিম খাচ্ছে।”
হোপ প্লাজার নিউ ব্র্যান্ড কালেকশনে নারীদের নানা ডিজাইনের ব্যাগ পাওয়া যায়।
এ দোকানের বিক্রয়কর্মী মো. ফয়সাল বলেন, “আমাদের মোটামুটি বিক্রি হচ্ছে। কাস্টমার ভালোই আসছে।”
হোপ প্লাজার কয়েকটি বাড়ি পরেই মিয়া বাড়ি মার্কেট। এই মার্কেটে নারীদের রেডিমেড পোশাক ও থ্রি পিস পাওয়া যায়।
মিয়া বাড়ি মার্কেটের আবদুল্লাহ ফ্যাশনের বিক্রয়কর্মী শাহনেওয়াজ আশা করছেন ঈদের আগে রোজার শেষ কদিনে কেনাবেচা আরও জমে উঠবে।
তিনি বলেন, “এখানকার কাস্টমাররা এখান থেকে রেগুলার কেনাকাটা করে। সবাই তো এই মার্কেট চিনে না। যারা চেনে, তারা বার বার আসে। কারণ ভালো জিনিস পায় তো।”
এই মার্কেটের ‘পারফেক্ট পয়েন্ট’ নামের দোকান থেকে অনেককেই রেডিমেইড থ্রি পিস কিনতে দেখা গেল।
এই দোকান থেকে কেনাকাটা করছিলেন রাবেয়া ইসলাম।
তিনি বলেন, “এখন থ্রি-পিস বানাতে পারব না। এখানে সুলভ দামে রেডিমেইড থ্রি পিস পাওয়া যায়। আগের থেকে পরিচিত, তাই এখান থেকেই কিনছি।”
এ দোকানের বিক্রয়কর্মী সালমান ফারসি বলেন, তাদের দোকানে দেশীয় পোশাকের পাশাপাশি ভারতীয় ও পাকিস্তানি পোশাক রয়েছে।
“দামি-কমদামি, পার্টি ড্রেস সবই আছে আমাদের কাছে। আবার সুতির তৈরি করা থ্রি পিস কালেকশনও রয়েছে। কাস্টমার আসছে। তবে দেখছে অনেকে, কিনতেছে কম মানুষ।”