“আমরা চেষ্টা করছি সেটা এপ্রিল পর্যন্ত নিয়ে নেওয়া যায় কি না,” ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক সভায় বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
Published : 30 Jan 2023, 09:06 PM
শিল্প, বাণিজ্যিক ব্যবহার ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ‘আপাতত’ কার্যকর না করে আরও কিছুটা সময় নেওয়ার পথে হাঁটছে সরকার।
আন্তর্জাতিক খোলা বাজার থেকে নতুন করে এলএনজি আমদানির পর জাতীয় সঞ্চালন লাইনে যুক্ত করা সাপেক্ষে নতুন দর কার্যকরের বিষয়ে কাজ করছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।
সোমবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে মন্ত্রণালয়ের এমন পদক্ষেপের বিষয়ে জানিয়ে বলেছেন, “ফেব্রুয়ারি মাসে গ্যাসের নতুন দর কার্যকর হচ্ছে না।”
প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে গত ১৮ জানুয়ারি গ্যাসের দাম সর্বোচ্চ ১৭৮ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্তের পর ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইসহ অন্য সংগঠন এবং শিল্প উদোক্তারা এ নিয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে বিবেচনার অনুরোধ জানায়। এ নিয়ে নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনার মধ্যে দাম বাড়ানোর সময় পিছিয়ে দেওয়াসহ নতুন এ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে মন্ত্রণালয়।
গত শুক্রবার বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের অনুষ্ঠানে এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
তিনি বলেছিলেন, “প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে চিন্তা করা হচ্ছে, গ্যাসের বর্ধিত মূল্য কার্যকরের ক্ষেত্রে মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে। আমরা চেষ্টা করছি সেটা এপ্রিল পর্যন্ত নিয়ে নেওয়া যায় কি না। জ্বালানি বিভাগ থেকে এ বিষয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের ইচ্ছাও একই রকম। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে এলএনজি এনে সঞ্চালন লাইনে মিক্স করার আগে দাম কার্যকর হোক সেটা মন্ত্রণালয়ও চায় না। সেক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারি মাসে গ্যাসের নতুন দর কার্যকর হচ্ছে না।”
গত ১৮ জানুয়ারি জ্বালানি বিভাগের প্রজ্ঞাপনে শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বাণিজ্যিক খাতে গ্যাসের দাম প্রতি ইউনিটে সর্বোচ্চ ১৯ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। ১৭৮ শতাংশ দাম বাড়ানোর এ সিদ্ধান্ত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে বাড়ানোর কথা বলা হয়েছিল প্রজ্ঞাপনে।
বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর এক সপ্তাহের মাথায় গ্যাসের দাম বাড়ানোর এ ঘোষণা আসে।
এর আগে ২০২২ সালের ৫ জুন পাইপলাইনে সরবরাহ করা প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের পাইকারি দাম ৯ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ২২ দশমিক ৭৮ শতাংশ বাড়িয়ে ১১ টাকা ৯১ পয়সা করা হয়।
তখন বাসাবাড়িতে চুলার গ্যাসের দাম বাড়ানো হলেও সবশেষ দফায় বাসাবাড়ির ও সিএনজির দাম বাড়ানো হয়নি।
হঠাৎ এলপিজির সংকট, ‘রাতারাতি’ বাড়ছে দাম
গ্যাসের দাম পর্যালোচনা হচ্ছে: বাণিজ্যমন্ত্রী
শিল্প ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের দাম বাড়ল
দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৩ হাজার ৭০০ এমএমসিএফডি হলেও সরকার যোগান দিতে পারছে ২ হাজার ৬৮০ এমএমসিএফডি। এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির আওতায় এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে।
তবে আন্তর্জাতিক খোলা বাজারে (স্পট মার্কেট) এলএনজির দাম কয়েকগুণ বেড়ে গেলে গত জুলাই থেকে এলএনজি কেনা বন্ধ রাখা হয়। এখন চাহিদা মেটাতে খোলা বাজার থেকে বেশি দামের এলএনজি কেনার বাড়তি ব্যয় পুষিয়ে নিতে গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।
তবে গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণার পর তা একসঙ্গে কার্যকর না করে ধাপে ধাপে দাম বাড়ানোর পক্ষে জনমত গঠন করছেন ব্যবসায়ী নেতারা। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআাই ও বিজিএমইএ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে চিঠি দিয়েছে।
বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গ্যাসের দাম বাড়ালে নতুন দর অনুযায়ী সিকিউরিটি ডিপোজিট বাবদ একেকজন শিল্প গ্রাহককে আরও ৫ থেকে ৭ কোটি টাকা করে দিতে হবে।
গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বিশ্ব বাজারের সঙ্গে সমন্বয় চান ব্যবসায়ীরা
গ্যাসের দাম বৃদ্ধি শিল্পে হলেও ‘খাঁড়া জনগণের উপরই পড়বে’
গ্যাসের দাম বাড়ল কেন, ব্যাখ্যা দিল মন্ত্রণালয়
“আমরা প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মহোদয়কে অনুরোধ করেছি যেন সিকিউরিটি ডিপোজিটের নামে আমাদের কাছ থেকে নতুন করে কোনো টাকা নেওয়া না হয়। বিতরণ কোম্পানি তিতাসের কাছে সিকিউরিটি ডিপোজিটের নামে এখন ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা জমা পড়ে আছে।”