বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকাভুক্ত নয়– এমন প্রতিষ্ঠান দিয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের জামানত মূল্যায়ন করা যাবে না আগামীতে।
Published : 28 Nov 2023, 08:30 PM
এক কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণের বিপরীতে নেওয়া জামানতের মূল্যায়ন (সার্ভে) ব্যাংকের নিজস্ব উদ্যোগে করার সুযোগ রেখে জামানত মূল্যায়নকারী বা সার্ভেয়ার কোম্পানির তালিকাভুক্তির নীতিমালা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এর মাধ্যমে জামানত মূল্যায়নকারী কোম্পানিগুলোও প্রথমবারের মত বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকাভুক্তির আওতায় আসছে।
মঙ্গলবার এই নীতিমালা প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকাভুক্ত না হলে কোনো সার্ভেয়ার প্রতিষ্ঠান আগামীতে আর কোনো ব্যাংক ঋণের জামানত মূল্যায়ণ করতে পারবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি ছয় মাস পর পর তালিকাভুক্ত সার্ভেয়ার প্রতিষ্ঠানের হালনাগাদ তালিকা প্রকাশ করবে।
ঝুঁকি কমাতে ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে স্থাবর সম্পত্তি এবং তার উপরের অবকাঠামো, অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে মেশিনারিজ, সহজে বিপণনযোগ্য দ্রব্য জামানত হিসেবে রাখে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান।
ঋণ মঞ্জুরের আগে গ্রহীতার কাছ থেকে নেওয়া জামানত ততৃীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মূল্যায়ণ করে ব্যাংকগুলো। এর মাধ্যমে ব্যাংক জানতে পারে, স্থাবার ও অস্থাবর সম্পত্তির বাজার দর কত হতে পারে।
সেই মূল্যায়ন প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করেই ঋণ বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে ব্যাংকগুলো। সম্পত্তি মূল্যায়নকারী এসব প্রতিষ্ঠান ‘সার্ভেয়ার’ নামে পরিচিত।
বর্তমানে এসব কোম্পানিকে সরাসরি বাণিজ্যিক ব্যাংক তালিকাভুক্ত করে। এখন থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকাভুক্ত সার্ভেয়ার কোম্পানির মাধ্যমে ঋণ জামানত মূল্যায়ন করতে হবে ব্যাংকগুলোকে।
কোনো প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত না হলে এক থেকে তিন বছর পর্যন্ত কোনো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে জামানত মূল্যায়নের কাজে অংশ নিতে পারবে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, ঋণের বিপরীতে প্রদত্ত জামানত মূল্যায়নের জন্য যোগ্য জামানত মূল্যায়নকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকে তালিকাভুক্ত হতে হবে।
এই শর্ত দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, “ব্যাংকিং খাতে ঋণের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, ঋণ শৃঙ্খলা বজায় রাখা, খেলাপী ঋণ আদায়, অবলোপন, নন-ব্যাংকিং সম্পদ অন্তর্ভুক্তিকরণ, ঋণ পুনঃতফসিলিকরণসহ শ্রেণিকৃত ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সঠিকভাবে হিসাব করা– ইত্যাদি প্রয়োজনে ঋণের বিপরীতে গৃহীত জামানতের যথাযথ ও নির্ভরযোগ্য মূল্যায়ন অতীব জরুরি। ’’
এক কোটি টাকার বেশি ঋণ জামানতের ক্ষেত্রে মূল্যায়নকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন লাগবে। আর একশ কোটি টাকা বা তার চেয়ে বেশি ঋণের সহায়ক জামানতের বিষয়ে একাধিক সার্ভেয়ার প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রতিবেদন নিতে পারবে ব্যাংক।
জামানত মূল্যায়নে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে ২০ শতাংশ তারতম্য হলে ব্যাংক তাদের কাছ থেকে ব্যাখ্যা চাইতে পারবে।
তালিকাভুক্তির যোগ্যতা
# ন্যূনতম তিনটি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জামানত মূল্যায়নকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে তালিকাভুক্ত থাকতে হবে। প্রতিষ্ঠানের প্রধান মূল্যায়ক/সার্ভেয়ারের সংশ্লিষ্ট কাজে ৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি সময়ের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
# বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকাভুক্ত হতে মূল্যায়নকারী প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশ সার্ভে অ্যান্ড ভ্যালুয়েশন কোম্পানিজ, ফার্মস অ্যান্ড ইন্ডিভিজুয়াল কন্সার্নস অ্যাসোসিয়েশন (বিএসভিসিএফআইসিএ) এর সদস্য হতে হবে।
# ইন্সটিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশ এবং ইন্সটিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশ এর সদস্যারাও তালিকাভুক্ত হতে পারবে।
# এছাড়া বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স সার্ভেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিবেচনায় সমজাতীয় স্বীকৃত কোনো পেশাজীবী সংগঠনের সদস্যরাও তালিকাভুক্তির জন্য আবেদন করতে পারবে।
# ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান/সরকারি প্রতিষ্ঠান/ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি/বহুজাতক কোম্পানিতে জামানত মূল্যায়নকারী প্রতিষ্ঠানের সার্ভে/ভ্যালুয়েশন কাজে ন্যূনতম ৩ বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
# ব্যক্তিমালিকানাধীন, অংশীদারী বা লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে বিদ্যমান আইনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিবন্ধিত হতে হবে।
# জামানত মূল্যায়নকারী প্রতিষ্ঠানে দক্ষ ও অভিজ্ঞ জনবল (হিসাবরক্ষক, পুরপ্রকৌশলী, যন্ত্রপ্রকৌশলী, ডিপ্লোমা প্রকৌশলী ইত্যাদি- প্রযোজ্যতা অনুসারে) এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সার্ভেয়ার থাকতে হবে।
প্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী ঋণ খেলাপি হলে তালিকাভুক্ত হতে পারবে না।
প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক/প্রধান নির্বাহী ও প্রধান মূল্যায়ক/সার্ভেয়ার আদালতের নির্দেশনার তার বা তাদের করা আর্থিক অনিয়ম কিংবা ফৌজদারি অপরাধের কারণে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যে কোনো পরিমাণ অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হলে উক্ত প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্তির অযোগ্য হবে।
তবে দণ্ড ভোগের পর ৩ বছর অতিবাহিত হলে ওই প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্তির জন্য আবেদন করতে পারবে।
জামানত মূল্যায়নকারী প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্তির মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ৩ বছর। তালিকাভুক্ত হতে প্রতি জুন ও ডিসেম্বর মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে ৫ হাজার টাকা জমা দিয়ে আবেদন করতে হবে। প্রতি বছর মূল্যায়নকারী প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক রিপোর্ট জমা দিতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংকে।