চিনি নিয়ে অস্বস্তি এখনও কাটেনি

বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় এ পণ্যের সরবরাহ সংকটও রয়েছে। অন্য পণ্যের মধ্যে আটা-ময়দার দামও এখনও চড়া।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Jan 2023, 04:11 PM
Updated : 6 Jan 2023, 04:11 PM

বাজারে সবজিসহ বেশ কিছু নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল হলেও চিনির দামে শৃঙ্খলা ফেরেনি; সরবরাহ সংকটে এখনও কোথাও কোথাও প্রতিকেজি চিনি ১১৫ টাকার বেশি দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

খুচরা বিক্রেতাদের দাবি, তাদের কেনা দাম সরকার নির্ধারিত খুচরা মূল্যের চেয়েও অনেক বেশি। যে কারণে তাদেরকে বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী খুচরা ও পাইকারি বাজারে চিনিও মিলছে না, যে কারণে দাম এখনও চড়া।

শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিকেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকা দরে। প্যাকেট চিনির দামও একই। অন্যদিকে দুই কেজি ওজনের প্যাকেট আটা বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকা থেকে ১৫০ টাকা দরে; প্রতিকেজির দাম পড়ছে ৭৫ টাকা।

খোলা সয়াবিন তেলের সরকার নির্ধারিত দাম প্রতি লিটার ১৬৭ টাকা এবং পাম তেল ১১৭ টাকা হলেও কার্যত এর চেয়েও কিছুটা কম দামে পাওয়া যাচ্ছে এ ভোজ্য তেল। সাম্প্রতিক বাজারদরের বিবেচনায় আটা-ময়দা ও চিনির দাম এখনও চড়া, অন্য পণ্যের চেয়ে বেশি।

এদিন ঢাকার মিরপুরে পীরের বাগ কাঁচাবাজারের মুদি দোকানি শাহাদাত হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তিনি প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৬৩ টাকা এবং পাম তেল ১২০ থেকে ১২২ টাকায় বিক্রি করছেন। কিন্তু কেনা দাম বেশি হওয়ায় চিনি বিক্রি করতে হচ্ছে প্রতিকেজি ১১৫ টাকা করে। এছাড়া আটা প্রতিকেজি ৬০ টাকা এবং ময়দা ৭০ টাকা করে বিক্রি করছেন।

বাজারে প্যাকেট আটা প্রতিকেজি ৭৫ টাকা এবং প্যাকেট ময়দা প্রতিকেজি ৮৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।

স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দা রবিউল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাজারে শীতের সবজি ছাড়া অন্য কোনো জিনিসের দাম কমতে দেখছি না। যেটাতে হাত দেই সেটার গায়েই আগুন লেগে আছে। ভরা মৌসুমে ৫০ থেকে ৫৫ টাকার নিচে কোনো মোটা চাল পাওয়া যাচ্ছে না।

“সরকার, মন্ত্রীরা মুখে অনেক কথা বললেও কাজের কাজ কিচ্ছু হচ্ছে না,” বলে অনুযোগ তার।

বাজার ঘুরে দেখে গেছে, চাহিদা অনুযায়ী চিনির সরবরাহ ঠিক হয়নি। ঘাটতি থাকার সময় দীর্ঘ হচ্ছে। খুচরা ও পাইকারি উভয় বাজারেই চিনির অভাব আছে।

পাইকারি বাজার মৌলভী বাজারে সরবরাহ আদেশ (এসও) কেজিপ্রতি ১০৩ থেকে ১০৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিল গেইটের দরও ১০৩ টাকা।

পুরান ঢাকার পাইকারি চিনি ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সহ সভাপতি আবুল হাশেম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মিল পর্যায় থেকে বাজারে চিনির সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। আবার মিল পর্যায়ে চিনির দামও সরকার নির্ধারিত খুচরা মূল্যের চেয়ে ২/৩ টাকা বেশি। এ কারণেই চিনির বাজারে ‘অস্বস্তি আর অস্থিরতা’ যাই বলেন, সেটা বিরাজ করছে।

“মিল থেকে প্রতিকেজি চিনি ১০৩ টাকা করে কিনতে হচ্ছে। পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১০৪ টাকা করে। এছাড়া যেসব সরবরাহ আদেশ (ডিও) মিল থেকে দেওয়া হয়েছিল এর সবগুলোই বিলম্ব হচ্ছে। এগুলোতে কেটে নতুন তারিখ বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গত আড়াই মাস ধরে চিনির বাজারে এই অবস্থা। তাহলে অস্থিরতা হবে না কেন,” প্রশ্ন তার।

এদিকে সংকটের কারণে চিনির সবচেয়ে বড় ভোক্তা, মিষ্টি, কোমল পানীয় ও বিস্কুট কোম্পানিগুলোর কেউ কেউ বিদেশ থেকে সরাসরি চিনি আমদানির সুযোগ পাচ্ছেন বলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। তারা নিজেরা আনার সুযোগ পাচ্ছে বলে বাজারে সরবরাহ কিছুটা স্বাভাবিক আছে।

চিনি পরিশোধন ও সরবরাহকারী কোম্পানি সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বর্তমানে মিলগুলো চাহিদার তুলনায় অনেক কম চিনি উৎপাদন করতে পারছে। কাঁচামালের এলসি খোলার ক্ষেত্রে এখনও জটিলতা রয়ে গেছে। গ্যাস সংকট এখনও রয়ে গেছে। প্রতিদিন ছয় হাজার টন চিনির প্রয়োজন হলেও মিলগুলো থেকে বাজারে ৫ হাজার টনের কিছু বেশি চিনি সরবরাহ করা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে চিনির অনেক বড় ক্রেতাই বিদেশ থেকে পরিশোধিত চিনি আমদানি করে নিজেদের প্রয়োজন মেটাচ্ছেন।

Also Read: জীবনযাত্রায় বছরজুড়েই গুনতে হল চড়া দাম

বর্তমান সমস্যাগুলো গত বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত এক বৈঠকে সরকারকে অবহিত করা হয়েছে বলে দাবি করেন বিশ্বজিৎ।

এদিকে শীত জেঁকে বসার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে শীতের সবজির দামও কিছুটা কমে এসেছে। মানভেদে প্রতিকেজি ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে শিম। ভালো মানের মূলার কেজি ২০ টাকা, ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে। বর্ষার সবজি চিচিঙ্গা বাজারে দেখা গেলেও দাম অনেক বেশি; প্রতিকেজি ৮০ টাকা করে।

এছাড়া ব্রয়লার মুরগি প্রতিকেজি ১৪০ টাকা, লেয়ার মুরগি প্রতিকেজি ২৩০ টাকা এবং গরুর মাংস প্রতিকেজি ৬৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।