ঢাকার বাজারে প্রতিটি ডিমের দাম ১৪ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। ডজন হিসাবে ডিমের দাম উঠেছে ১৬৫ টাকায়; গত বছর দাম উঠেছিল ১৫৫ টাকায়।
Published : 11 Aug 2023, 09:22 PM
ডিমের দাম হঠাৎ লাফের পর অভিযানে নেমেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর; ঢাকা ও রাজশাহীতে জরিমানাও করেছে ডিম ব্যবসায়ীদের।
বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে শনিবার থেকে দেশজুড়ে অভিযান চলমান রাখার কথাও জানিয়েছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
ঢাকার বাজারে প্রতিটি ডিমের দাম ১৪ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়। ডজন হিসাবে ডিমের দাম উঠেছে ১৬৫ টাকায়।
শুক্রবার কারওয়ান বাজারে লাল ডিমের দাম প্রতি ডজন ১৬০ টাকা এবং সাদা ডিমের দাম ডজন প্রতি ১৫৫ টাকায় বিক্রি কথা জানায় ব্যবসায়ীরা।
গত বছরের এই সময়ে প্রতি ডজন ডিমের দাম উঠেছিল ১৫৫ টাকা। তবে বর্ষা শেষে তা আবার কমে গিয়েছিল। গত মাস পর্যন্ত ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় ডিম বিক্রি হয়। এরপরই বাড়তে থাকে।
আগের দিনই ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সফিকুজ্জামান অভিযান শুরুর কথা বলেছিলেন।
শুক্রবার সকালে রাজশাহীর সাহেববাজারে ভোক্তা অধিকার অভিযান চালিয়ে মূল্যতালিকা ও বিক্রয় রশিদ না থাকায় একটি পাইকারি ও দুটি খুচরা ডিমের দোকান ব্যবসায়ীকে ১৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
অধিদপ্তরের রাজশাহী জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মাসুম আলী জানান, মেসার্স মারুফ এন্টারপ্রাইজকে পাঁচ হাজার টাকা, আফিলউদ্দিন ডিম ভাণ্ডারকে সাত হাজার টাকা ও পিন্টু স্টোরকে এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
তিনি বলেন, “বাজার পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হওয়ায় আমরা অভিযান চালিয়েছি। ডিমের বিষয়টি নিয়ে জনগণের মধ্যে এক ধরনের আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। আমরা দেখছি, কোনো অসাধু ব্যবসায়ী বা ব্যক্তির দ্বারা যেন কারসাজিটা না হয়-এই ব্যাপারে আমরা নজরদারি করছি। ব্যবসায়ীদেরও আমরা সতর্ক করলাম।
“আমাদের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।”
এদিকে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকার কারওয়ানবাজারে ডিমের আড়তে অভিযান চালিয়ে এক ডিম ব্যবসায়ীকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
ওই অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মণ্ডল বলেন, “ক্রয়মূল্যের চেয়ে দুই টাকা বাড়িয়ে প্রতিটি ডিম বিক্রি করা হচ্ছিল। ক্রয়মূল্য ও বিক্রয়মূল্যের মধ্যে সামঞ্জস্য না থাকায় আমরা একটি দোকানকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছি। এরপর অন্য দোকানে যাওয়ার আগেই দোকান বন্ধ করে চলে যায় ব্যবসায়ীরা। আমাদের এই অভিযান চলবে।”
সরবরাহ ঘাটতিতে দাম বেড়েছে: পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন
এদিকে ডিমের দাম অনেক চড়ে যাওয়ার পেছনে সরবরাহ সংকটের কথা বলছে খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)।
ঘাটতি তৈরির কারণ হিসেবে প্রান্তিক পর্যায়ের অধিকাংশ ছোট ছোট খামার বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা বলেছে সংগঠনটি।
বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো সংগঠনের বিবৃতিতে বলা হয়, ডিম ও মুরগির দাম বেড়ে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টির অন্যতম কারণ এ খাতে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসায় সরকারি তদারকি না থাকা। পোলট্রি শিল্পে তাদের আধিপত্য বেড়ে যাওয়ায় এর খেসারত দিতে হচ্ছে জনগণকে।
বর্তমানে প্রান্তিক পর্যায়ে একটি ডিমের উৎপাদন খরচ ১০ টাকা ৮৭ পয়সা থেকে ১১ টাকা পর্যন্ত। ১ কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা। কিন্তু প্রান্তিক খামারিদের বাধ্য হয়ে ২০ থেকে ২৫ টাকা কমে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় মুরগি বিক্রি করতে হচ্ছে বলে জানানো হয় বিবৃতিতে।
”উৎপাদন খরচ যাচাই করে পোলট্রি ফিডের দাম কমানোর উদ্যোগ নেওয়া উচিত সরকারের। খাবার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি বাজারে ডিম ও মুরগির দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদিত পণ্যের উপযুক্ত মূল্য নিশ্চিত করতে হবে।”