পাইকারিতে প্রতি ১০০ ডিমের দাম ৫০ টাকা করে কমে গেছে। সপ্তাহের শুরুতে ১০০ ডিমের দাম ছিল ১১৯০ টাকা যেটা এখন ১১৪০ টাকায় নেমেছে বলে জানিয়েছেন বিপিএ সভাপতি সুমন হাওলাদার।
Published : 18 Oct 2023, 11:44 PM
আমদানি করা ডিম পৌঁছানোর আগেই ঢাকার বাজারে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে করে ন্যায্যমূল্যে ডিম বিক্রি শুরুর তিন দিনের মাথায় পণ্যটির বাজার পড়তে শুরু করেছে।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে প্রতি হালি ডিম ৫৫ টাকায় বিক্রি হলেও মঙ্গলবার থেকে তা আবারও ৫২ টাকায় নেমে এসেছে।
গত সোমবার বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) নামে প্রান্তিক খামারিদের একটি সংগঠন দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকার নির্ধারিত প্রতিটি ১২ টাকা মূল্যে ফার্মের ডিম বিক্রি শুরু করে।
চড়তে থাকা ডিমের বাজারে লাগাম টানতে সরকার খামার পর্যায়ে প্রতিটি ডিম ১০ টাকা ৫০ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ১২ টাকা নির্ধারণ করে দেয় গত সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকে। সরকার ডিমের পাশাপাশি আলুর সর্বোচ্চ মূল্য ৩৬ টাকা এবং পেঁয়াজের সর্বোচ্চ মূল্য ৬৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল। কিন্তু কোনোটাই কার্যকর হয়নি, এমনকি ডিমও কোথাও কোথাও প্রতিটি ১৪ টাকা করে বিক্রি হয়েছে।
কিন্তু বাজার ঠাণ্ডা না হওয়ায় ১৭ সেপ্টেম্বর ডিম আমদানির অনুমোদন দেওয়া শুরু করে মন্ত্রণালয়। এ পর্যন্ত ১৫টি কোম্পানিকে ১৫ কোটি ডিম আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যেই ট্রাকে করে ডিম বিক্রি শুরু করে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন।
সংগঠনটির সভাপতি সুমন হাওলাদার বুধবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাজারে প্রভাব পড়া শুরু হয়েছে। আমরা খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারছি আগামী তিনদিনের মধ্যে খুচরা দোকানেও সরকার নির্ধারিত দাম অর্থাৎ হালি ৪৮ টাকায় ডিম পাওয়া যাবে। তখন হয়তো আমাদের আর ট্রাকে ডিম বিক্রি করতে হবেনা। সেই ক্ষেত্রে ট্রাকে আরও কম দামে ডিম পাওয়া যাবে।
“পাইকারিতে প্রতি ১০০ ডিমের দাম ৫০ টাকা করে কমে গেছে। সপ্তাহের শুরুতে ১০০ ডিমের দাম ছিল ১১৯০ টাকা যেটা এখন ১১৪০ টাকায় নেমেছে। ফলে বিভিন্ন এলাকায় খুচরা দোকানে স্বাভাবিকভাবেই প্রতিটি ডিম ১২ টাকার কাছাকাছিতে বিক্রি শুরু হয়েছে। খুচরা বাজারে প্রতি হালি ডিম ৫৫ টাকা ছিল যা এখন ৫০/৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।”
মিরপুর উত্তর পীরেরবাগে ভূইয়া জেনারেল স্টোর নামের একটি মুদি দোকানে গত রোববার প্রতি হালি ডিম ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল, যা বুধবার ৫২ টাকায় নেমে এসেছে।
দোকানি আমিনুল হক ভূঁইয়া বলেন, “পাইকারি বাজার বাড়লে তো দোকানে ডিমের দাম বাড়বে। আমরাও চাই কম দামে ডিম বিক্রি করতে। এখন দাম কমেছে তাই আমরা কমাতে পারছি। তবে এটা কতদিন থাকে সেটা নিয়ে সংশয় আছে।”
তবে ডিমের সর্বোচ্চ মূল্য ১২ টাকা বেঁধে দেওয়াকেও মেনে নিতে পারছেন না উত্তর পীরেরবাগের বাসিন্দা ইকবাল হোসেন।
তিনি বলেন, “বর্তমান বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা করলেও ডিমের দাম কমপক্ষে ১০ টাকায় নামিয়ে আনা উচিত। আমরা এক হালি ডিম ১২ টাকায়ও কিনে খেয়েছি। সেটা খুব বেশি হলে হয়তো ১০/১২ বছর আগের কথা। আর কোনো জিনিসের দাম এতো অল্প সময়ে এতোটা বেড়েছে কিনা সন্দেহ।”
ঢাকায় প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ লাখ ডিমের চাহিদা রয়েছে। সেখানে কয়েকটি ট্রাকে করে ২০ থেকে ২৫ হাজার ডিম কীভাবে প্রাভাব ফেলছে?
সুমন হাওলাদার বলেন, “ক্রেতাদের কম দামে ডিম খাওয়ানো আমাদের উদ্দেশ্য নয়। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়েও বেশি দামে ডিম বিক্রি করছে কিছু কর্পোরেট চক্র। আমরা বাজারে একটা বার্তা দিতে চেয়েছি। সেই বার্তায় কাজ দিয়েছে, সেকারণেই ডিমের কমতে শুরু করেছে।”
“আমরা একেক সময় একেক স্পটে উপস্থিত হচ্ছি। অন্তত ১৫টি স্থানে ডিমের ট্রাক নিয়ে গেছি। কারওয়ান বাজার ছাড়াও হাতিরপুল, আজিমপুর কলোনি, নিউমার্কেট, পলাশী, সেগুনবাগিচা, শিল্পকলা, যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, রায়েরবাগ, বাড্ডা, নাবিস্কো এলাকায় ডিম বিক্রি করেছি। সেখানে মাইকিং করে মানুষকে সচেতন করছি। মানুষজন এক ডজন, দুই ডজন এমনকি এক হালি করেও ডিম কিনেছে, আমরাও দিয়েছি। আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণের কারণে বাজারে যে কৃত্রিমভাবে দাম বেড়েছে সেটা যেন কমে আসে,” বলেন তিনি।
আমদানির প্রয়োজন হবে না
এদিক মঙ্গল-বুধবারের মধ্যে ভারত থেকে আমদানি করা ডিম পৌঁছাবে বলে আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে জানানো হলেও চলতি সপ্তাহে তা আর হচ্ছে না। আগামী ২৫ অক্টোবর দুর্গাপূজার ছুটি শেষে স্থলবন্দরগুলো চালু হলে ডিমের ট্রাক ঢাকায় আসবে বলে জানিয়েছেন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান রিপা এন্টারপ্রাইজের শেখ আল মামুন আহমেদ।
গত বৃহস্পতিবার আরেক আমদানিকারক সাইফুর রহমান জানিয়েছিলেন, সব প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। বুধবারের মধ্যে তাদের আমদানি করা ডিম ঢাকায় পৌঁছাবে। তবে এদিন তিনি আর ফোন ধরেননি।
শেখ মামুন বলেন, ভারতের হায়দারাবাদ থেকে তাদের ডিম আমদানির এলসি খোলাসহ সব প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়েছে। কিন্তু পূজার ছুটির কারণে স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানিতে স্থবিরতা নেমে আসায় তারা ঝুঁকি নিয়ে এই মুহূর্তে ডিম আনতে চাচ্ছেন না। কারণ, ডিম তাপ ও আলো সংবেদনশীল হওয়ায় কোনোভাবেই তা বন্দরে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করানোর উপযুক্ত নয়।
ফলে আগামী ২৫ অক্টোবর বা তার পরের দিন ডিম আসবে বলে আশ্বস্ত করেন শেখ মামুন।
তবে বিদেশ থেকে ডিম আমদানির বিরোধীতা করে বিপিএ সভাপতি সুমন বলেন, এখন ডলারের চড়া মূল্যের সময়ে ডিম আনতে যে খরচ পড়ছে তার চেয়ে কম দামেই বাংলাদেশে ডিম পাওয়া যাবে।
“আগামী তিন দিনের মধ্যে বাজারে ডিমের দাম ১২ টাকায় নেমে আসবে। তখন হয়তো আমাদের আর ট্রাকে করে ডিম বিক্রি করতে হবেনা। তবে তখন খামারিরা যদি প্রতিটি ডিম ১০ টাকায় আমাদেরকে দেয় এবং ট্রাকের পরিবর্তে সরকার আমাদেরকে বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী অবকাঠামোতে ডিম বিক্রির সুযোগ দেয় তাহলে সাড়ে ১১ টাকায়ও ডিম বিক্রি করতে পারবে।”
এর কারণ ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, একটা ট্রাকে খামার থেকে ডিম এনে ঢাকায় সারাদিন ধরে রাখলে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ দিতে হয়। সেক্ষেত্রে প্রতি ডিমে ১ টাকা করে লাভ করলেও ১২ হাজার টাকা খরচ পোষানো যাবেনা। তাই অস্থায়ীভাবে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বসতে দিলে সাড়ে ১১ টাকায়ও বিক্রি করা যাবে।