অপ্রচলিত বাজারের হাত ধরে এ সময়ে প্রধান এ রপ্তানিপণ্যের প্রবৃদ্ধি বজায় রয়েছে।
Published : 21 Dec 2023, 11:57 PM
চলতি অর্থবছরে তৈরি পোশাকের বড় বাজারগুলোতে রপ্তানির পরিমাণ কমেছে। এর বিপরীতে কিছু নতুন ও অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানিতে তুলনামূলক ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
এতে করে সার্বিক হিসেবে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাস শেষে মোট পোশাক রপ্তানি ইতিবাচক বৃদ্ধির ধারায় রয়েছে। অপ্রচলিত বাজারের হাত ধরে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি রয়েছে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
সবশেষ নভেম্বরের যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বাজারে পোশাকের রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে কমে গেছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর তথ্য বিশ্লেষণে এমন চিত্র পাওয়া যাচ্ছে।
ইউরোপ ও পশ্চিমা দেশগুলোর মানুষের ক্রয় প্রবণতা কমে যাওয়ায় এসব দেশে পোশাক রপ্তানি কমে গেছে বলে মনে করেন শিল্প মালিকরা। পাশাপাশি নতুন বাজারে রপ্তানি বাড়তে থাকার বিষয়টিকে আশার দিক হিসেবে দেখছেন তারা।
বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া পোশাক পণ্যগুলোর মধ্যে ৮০ দশমিক ৬৭ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে যাচ্ছে। এসব দেশকে পোশাক রপ্তানির প্রচলিত বাজার বা বড় বাজার হিসেবে বিবেচনা করেন রপ্তানিকারকরা।
রপ্তানির বাকি পণ্যগুলো চীন, ভারত, রাশিয়া, জাপান, অস্ট্রেলিয়াসহ অন্যান্য দেশে যাচ্ছে।
দেশভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রে ২ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে তা ছিল ৩ দশমিক ০৫ শতাংশ কম।
নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে দেশটিতে পোশাক রপ্তানি আরও কমে যায়। এ সময়ে মোট রপ্তানি হয় ৩ দশমিক ২৭ বিলিয়ন। তবে তা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে রপ্তানি পিছিয়ে পড়ে ৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশের মোট চিত্রও একই ধরনের। এ বাজারে প্রথম চার মাসে রপ্তানি হয়েছিল ৭ দশমিক ০৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। তখন প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৯৯ শতাংশের মধ্যে থাকলেও নভেম্বরের হিসাব যোগ হওয়ার পর তা নেতিবাচক হয়ে গেছে।
নভেম্বর শেষে ইইউতে মোট রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়ায় ৯ দশমিক ০৫ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের পাঁচ মাসের চেয়ে শূন্য দশমিক ১৮ শতাংশ কম।
হালনাগাদ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, যুক্তরাজ্যের বাজারে নভেম্বর শেষে রপ্তানির পরিমাণ ২ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলঅর; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। তবে এরপরও শঙ্কার ইঙ্গিত দিচ্ছে পরিসংখ্যান।
এর কারণ জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে চিত্রটি আরেকটু ভালো ছিল। ওই সময়ে ১ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি শেষে ১৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল।
বড় অন্য বাজারের মধ্যে কানাডায় চলতি অর্থবছরের নভেম্বর পর্যন্ত ৬০৬ মিলিয়ন ডলারের পোশাকপণ্য রপ্তানি হয়। তবে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে তা ২ দশমিক ৭১ শতাংশ হারে কমেছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাস শেষে মোট ১৮ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলারের পোশাকপণ্য রপ্তানি হয়েছে। অপ্রচলিত বাজারে অবস্থান ভালো থাকায় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে রয়েছে।
এ সময়ে (জুলাই থেকে নভেম্বর’২০২৩) অপ্রচলিত বাজারে ৩ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি রয়েছে ১৪ দশমিক ১২ শতাংশ।
বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনীতি কিছুটা মন্দা পরিস্থিতি থাকায় এসব বাজারে আমাদের রপ্তানি কমে গেছে। আশা করছি কিছুদিনের মধ্যে এসব দেশের অর্থনীতিতে চাঙ্গাভাব ফিরে আসলে রপ্তানিটাও বাড়তে শুরু করবে।
“ইউরোপের অনেক দেশে ভালো করলেও বড় বাজার জার্মানিতে এবার খারাপ হয়েছে। জার্মানির বাজারে মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করায় এমনটি হয়েছে। যুক্তরাজ্যের বাজারে আমরা ভালো করছি, কারণ সেখানে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পর্যায়ে রয়েছে।”
তার মতে, যুক্তরাষ্ট্রে যতটা খারাপ হয়েছে, অপ্রচলিত কয়েকটি বাজার একই সময় ভালো করায় সামগ্রিক পরিস্থিতি এখনও ভালো আছে। পশ্চিমা বিশ্বে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে রপ্তানিও বাড়তে থাকবে।
অপ্রচলিত বাজারে ভালো প্রবৃদ্ধির চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, অপ্রচলিত বাজারের মধ্যে জাপানে ধারাবাহিকভাবে রপ্তানি বাড়ছে-যা ১৪ শতাংশের বেশি। রাশিয়াতে এ হার প্রায় ৩৪ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়াতে ৩৫ শতাংশ।
তবে এসব বাজারে রপ্তানির পরিমাণ এখনও অনেক কম, যা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।